আশা জেগে থাকে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দশে দশ। ১০ দিন পার করে প্রকাশকরা পরীক্ষায় ফুলমার্কই পেয়েছেন। তাঁদের কোনো বই এখন পর্যন্ত বাংলা একাডেমির ‘নজরদারিতে’ কালো তালিকায় পড়েনি। ধর্মীয় বা উসকানিমূলক বইয়ের খোঁজখবর বাংলা একাডেমি পেলেই তা পড়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বের কথা পুলিশের বড় কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন মেলা শুরুর আগে। আর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক একই কথা জানিয়েছিলেন ৩০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে। মিশন তাই সফলই বলা যায়। অপেক্ষা বাকি দিনগুলোর।

 

মেলায় উসকানিমূলক বই নেই। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বইও নেই। মেলায় নেই ‘ব দ্বীপ’ প্রকাশনাও। এ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী দুই মাস আগে জামিন পেয়েছেন। ধর্মীয় অনুভূতি কী জিনিস, তিনি হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন। আর অন্য প্রকাশকরা বুঝেছেন তাঁকে আর তাঁর প্রকাশনীকে দেখে।

 

এ মেলায় শুদ্ধস্বর নেই। তারা অংশ নেয়নি। অংশ নেওয়ার সব শক্তি কেড়ে নেওয়া হয়েছে প্রকাশনাটির। চিকিৎসার জন্য এখনো ইউরোপে এর স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুল। গেল বছর অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল শুদ্ধস্বর। এবার আর তা পারেনি। যারা চেয়েছিল শুদ্ধস্বরকে থামিয়ে দিতে, তারা সফল। শুদ্ধ তো পরের কথা, স্বরই টিকে থাকল না।

 

রোদেলা ফিরেছে। আশার কথা। শ্রাবণ শেষ পর্যন্ত দোকান খুলতে পেরেছে। আছে জাগৃতিও। প্রকাশনাটি ২৫ বছর পার করছে নিভৃতে। সব প্রকাশকই আছেন শঙ্কায়। কখন খড়্গ নেমে আসে! মুক্তমনা অনেক লেখকই মেলায় আসেন না। রণদীপম বসুর বই বেরিয়েছে। গেল বছরের মতো এবারও তিনি মেলায় আসবেন না। এমন অনেক কিছুই মেলায় নেই। মেলায় অভিজিৎ রায় নেই, ফয়সল আরেফীন দীপন নেই। তাঁদের ধরে রাখার কোনো আয়োজন নেই। এই মেলা নিষ্কণ্টক মেলা।

 

গেল মেলায় বাংলা একাডেমি চত্বরে হাঁটতে হাঁটতে সৈয়দ শামসুল হক বলেছিলেন, ‘চিন্তা হচ্ছে রক্তবীজের মতো। একটা চিন্তাকে নিহত করলে হাজার চিন্তার জন্ম হয়।’ নিশ্চয়ই এই টুঁটি চেপে ধরাটাই সব নয়। হাজারো চিন্তার জন্ম হবে। এটি চিন্তার ধর্ম। এটিই সভ্যতার স্রোত।

 

সেই স্রোতে নাই বা শামিল হলো বাংলা একাডেমি। প্রতিষ্ঠানটি খালি চোখ রাঙাল। অভিভাবক হতে পারল না। আমাদের অগ্রজ আলোকবর্তিকার মতো লেখকরা পেরেছেন কি? সময় কোথায় তাঁদের? হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো তাঁদের সামনে-পেছনে হাজার পাঠক। মেলায় অটোগ্রাফ বিলান তাঁরা।

 

তবু আশা জাগে। আশা জেগে থাকে।

লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার, একাত্তর টিভি।

সূত্র: এনটিভি