আল আকসায় অগ্নিকাণ্ডের ৫১ বছর

মুসলিমদের প্রথম কিবলা ও তৃতীয় সম্মানিত মসজিদ ফিলিস্তিনের আল আকসায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আজ ৫১ তম বছর হয়। ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট ফিলিস্তিনের আল আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগ করেন অস্ট্রেলিয়ান পর্যটক ডেনিস মাইকেল রোহান। ওয়াল্ডওয়াইড চার্চ অব গড নামের একটি খ্রিস্টান গোষ্ঠীর সদস্য ছিল রোহান। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসলায়েলের দখলদারিত্ব বিস্তারের অংশ হিসেবে অগ্নিসংযোগ করে সে। তাঁর ধারণা মতে, আল আকসা মসজিদের স্থানে ইহুদিদের উপাসনালয়ের ধ্বংসাবশেষ আছে। তাই আল আকসা মসজিদ ধ্বংস করে যিশু খ্রিস্টের আগমন তরান্বিত করতে চেয়েছিল রোহান।

অগ্নিকাণ্ডের দুই দিন পর ২৩ আগস্ট রোহানকে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে ওই সময় মানসিক রোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে রোহানকে মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে বিচারের আওতামুক্ত করা হয়।

অগ্নিকাণ্ডে মসজিদ আকসার দক্ষিণ প্রান্ত পুড়ে যায়। আকসা মসজিদের ছাদ, দৃষ্টিনন্দন মোজাইক পাথর ও নিচের ভূমিও পুড়ে যায়। তাছাড়া ভেতরে থাকা নানা সামগ্রি ভষ্ম হয় এবং ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে তা পুননির্মাণ করতে অনেক বছর অতিবাহিত হয়।

এই অগ্নিকাণ্ডের সবচেয়ে বড় ক্ষতি ছিল, সুলতান সালাহুদ্দিন আইউবির হালব থেকে আনা ঐতিহাসিক মিম্বারটি পুড়ে যায়। ১১৮৭ সালে সালাহুদ্দিন আইউবি বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়কালে তা সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। মিম্বারটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হলো, সুলতান নুরুদ্দিন জাংকি মসজিদ আকসা বিজয়ের পর তা স্থাপনের জন্য নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

অগ্নিকাণ্ডের সময় আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে পানি সরবাহ বন্ধ রাখে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। ওই সময় আগুন নেভাতে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের সামর্থ্যানুসারে পানি ও কাপড় নিয়ে এগিয়ে আসে। সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় আল আকসার আগুন নেভানো হয়।

এ ঘটনা আরব ও মুসলিমবিশ্বের নেতৃত্ববৃন্দের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। পুরো বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ তৈরি হয়। অবশেষে মুসলিমদের ঐকবদ্ধ করতে মুসলিমবিশ্বের নেতৃবৃন্দ ১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মরক্কোর রাজধানী রাবাতে শীর্ষ সম্মেলন করে। ওই সম্মেলনে ৩০টি দেশের সমন্বয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সংস্থা ‘ওআইসি’ (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন) গঠন করা হয়। অতঃপর ১৯৭৬ সালে আল আকসা মসজিদ পুননির্মাণের জন্য ‘আল কুদস ফান্ড’ গঠন করা হয়।

সূ্ত্র কালের কন্ঠ