গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

আলোচনায় ১৮’র বিতর্কিত ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম’

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

২০১৮ সালে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিল দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সংগঠন ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম ও সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন। এ দুটি সংস্থা কর্তৃক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে পরবর্তীতে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষ করে, কানাডার পর্যবেক্ষক তানিয়া ফস্টারের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে ইতিবাচক কথা বলা আর পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া নেতিবাচক বক্তব্যে দেশ-বিদেশে সমালোচনার জন্ম দেয়।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের (ইএমএফ) আমন্ত্রণে ছয় সদস্যের একটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল গত ২৮ জুলাই থেকে বাংলাদেশ সফর করছে। আজ সোমবার (৩১ জুলাই) তারা ঢাকা মিশন শেষ করেছে।

তারা নির্বাচন কমিশন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও ইসলামি ঐক্যজোটের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে।

পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ছিলেন- যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক টেরি এল ইসলে, আয়ারল্যান্ডের রাজনীতি বিষয়ক সিনিয়র সাংবাদিক নিক পল, জাপানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী ইউসুকি সুগু ও চীনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী এনডি লিন।

২০১৮ সালের ভূমিকার কারণে ইএমএফের এবারের প্রতিনিধি দল নিয়ে বিভিন্ন মহলে নেতিবাচক আলোচনা চলছে। এমনকি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তারাও ‌’এ প্রতিনিধি দল কারা’- সেই প্রশ্ন তুলেছেন।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এরা কারা? যেসব বিদেশিদের নিয়ে আসা হয়েছে এদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার অভিজ্ঞতা আছে? ২০১৮ সালে একবার কানাডার এক মহিলাকে নিয়ে এসেছে। তাকে দিয়ে নির্বাচন নিয়ে ভালো ভালো কথা বলিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরে তো দেখা গেল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তিনি সব প্রকাশ করে দিলেন। এখন যদি আবারও সেই সংগঠন বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়ে আসে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে আর এটা হবে পক্ষপাতদুষ্ট।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ই্এমএফ এবং সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন- এ দুটোর লোকবল আর সমন্বয়কারীরা আসলে একই গ্রুপ। সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন সার্কের কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান নয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সার্ক সচিবালয় থেকে ঢাকাকে সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। এরা আসলে কারা সেটাই বুঝতে পারছি না।

বৈঠক বাতিল করেছে বিএনপি

ইএমএফের দেওয়া তথ্য বলছে, বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে সোমবার (৩১ জুলাই) ইএমএফের পক্ষ থেকে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক চাওয়া হয়। এদিন বিকেল ৪টায় প্রতিনিধি দলকে সময় দিয়ে পরবর্তীতে আবার না করে দেওয়া হয়।

ইসির সংলাপে যাবে না বিএনপি

ইএমএফ-এর চেয়ারম্যান আবেদ আলী জানান, বিএনপি আমাদের সময় দিয়েছে সোমবার বিকেল ৪টায়। কিন্তু পরে ওনারা আবার এটা বাতিল করেছে। রাজি হওয়ার পর আবার নারাজি হয়েছে। কেন বাতিল করেছে তা আমরা জানি না। আমাদের বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, ‌’আমরা তো কোনো দলের জন্য এখানে আসিনি। এমনকি আমরা সরকারের প্রতিনিধি হয়ে আসিনি। আমরা এসেছি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হয়ে। আমাদের তারা ডিনাই করল!’ তাদের সময় নিয়ে আবার ফিরিয়ে দেওয়ায় তারা খুব ‌’মাইন্ড’ করেছে।

ইএমএফের সঙ্গে বৈঠক না করার কারণ জানতে চাওয়া হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে। দলটির জ্যেষ্ঠ এ নেতা  বলেন, এরা কারা? তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে কেন? তাদের আন্তর্জাতিক কোনো স্বীকৃতি আছে? এরা তো ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট চুরির সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেই একই লোকজন এখন আবার এখানে নিয়ে এসেছে।

আমির খসরু বলেন, ২০১৮ সালের ভোট চুরির সময় যে পর্যবেক্ষক দল এখানে এসেছিল যাদের একজন বলেছিল, এ পর্যবেক্ষণ নিয়ে আমি কিছু জানি না। ওই ভোট চোরের দল এখন আবার এখানে এসেছে। তাদের সঙ্গে কীসের কথা, তারা কে? এদের কেউ চেনে? এসব ভাঁওতাবাজি বাংলাদেশের মানুষ বোঝে। আর যারা সত্যিকার অর্থে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে তারাও বোঝে এটা ভাঁওতাবাজি।

এদিকে, সোমবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিদেশ থেকে লোক ভাড়া করে নিয়ে এসেছে। একজন নাকি আমেরিকার। উনি কে? তাকে তো আমেরিকার কেউ চেনে না! গতবারও তাকে আনা হয়েছিল। এভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে আবারও নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে চায় আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে ইএমএফ-এর বিদেশ পর্যবেক্ষকদের সফর নিয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আখতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপি যদি কোনো লোক নিয়ে আসে, তাহলে সেটা সঠিক আর বিএনপির মতাদর্শের বাইরে বা তাদের পছন্দের বাইরে কথা বললে তারা ভুল। আওয়ামী লীগের কি এত দুর্দিন পড়ে গেছে যে, ভাড়া করে লোক নিয়ে এসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করাতে হবে? আমরা মনে করি, এখানে জনগণ আছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মনিটরিং ফোরামের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কোনো বৈঠক করেনি, করবেও না।

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইএমএফ-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবেদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না। আমরা সাংবিধানিক নিয়মে নির্বাচন চাই। কোনো বিদেশি কি বলতে পারে, আপনার দেশের সংবিধান সংশোধন করুন?

আবেদ আলী বলেন, আমরা ইইউসহ আরও কিছু দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বসেছি, তারা কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেননি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা তারা বলেননি এটা বললে যদি আমাদের কারও পক্ষ নেওয়া নিয়ে কথা হয় তাহলে এখানে কিছু বলার থাকে না। আমি বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কখনও ছিলাম না, এখনও নেই।

২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সে প্রসঙ্গে আবেদ আলী বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরের দিন সকল পত্রিকার সম্পাদকসহ সাংবাদিকরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমরা এবং আমাদের বিদেশি পর্যবেক্ষকরা যা দেখেছি, তাই বলেছি। এমনকি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেবও সকাল বেলায় বলেছেন, নির্বাচন ভালো হয়েছে।

এদিকে, রোববার (৩০ জুলাই) বেলা দেড়টার দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ইএমএফের বিদেশি পর্যবেক্ষকদের। পূর্ব নির্ধারিত হলেও প্রতিমন্ত্রী তাদের সময় দিতে পারেননি। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে যেতে হয় তাদের। পরে রোববার সন্ধ্যায় সংসদ ভবনে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে পর্যবেক্ষক দলটি।

প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইএমএফ-এর চেয়ারম্যান আবেদ আলী বলেন, ভিসার বিষয়ে আলাপ হয়েছে। গতবার আমরা ভিসা জটিলতায় ভুগেছি। বিভিন্ন প্রশাসনিক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এজন্য এবার আগেভাগে প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছি।