সোমবার , ১১ জুলাই ২০১৬ | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আর কত প্রাণ দরকার রেলওয়ের ?

Paris
জুলাই ১১, ২০১৬ ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ

জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
রেলগেট না থাকায় জয়পুরহাট জেলার বেশ ক’টি রেলক্রসিংয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা। জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের আমুট্ট রেলক্রসিং দুর্ঘটনার পর কেটে গেছে দশ বছর। কিন্তু যে কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে-সেই রেলগেট নির্মিত হয়নি এত বছরেও। ফলে অরক্ষিতই থেকে গেছে সেই রেলক্রসিং। একের পর এক ঘটেই চলেছে দুর্ঘটনা। জয়পুরহাটে অরক্ষিত রয়েছে বেশ ক’টি রেলগেইট। দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার সরকারি অনুদানও পেয়েছিলেন। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ রেলওয়ে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল।

স্থানীয়রা বলছেন, আর কতবড় দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণ গেলে নড়বে রেল কর্তপক্ষের ও প্রশাসনের ?

২০০৬ সালের ১১ জুলাই জেলার জয়পুরহাট-সান্তাহার সড়কের আক্কেলপুর মহিলা কলেজ সংলগ্ন আমুট্ট রেলক্রসিংয়ে আন্তনগর ট্রেন রূপসা ও একটি বাসের সংঘর্ষে ৪১ জন  প্রাণ হারায়। গুরুতর আহত হয় অন্তত ৪০ জন। আহতদের অনেকে এখনও পঙ্গু হয়ে কোন রকমে বেঁচে আছেন।

RA-2 copy

ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার ১০ বছর পরও উন্মুক্ত এ রেলক্রসিংয়ে নির্মিত হয়নি কোন রেলগেট। সে সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমটির সুপারিশ ছিল রেলগেইট নির্মাণের। কিন্ত এখনো সম্ভব হয়নি রেলক্রসিং সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা। তবে দুর্ঘটনার পর থেকে বাস মালিক সমিতি ও ট্রাক মালিক সমিতির যৌথভাবে এক জনকে ওই স্থানে পাহারার ব্যবস্থা করেছে। ট্রেন আসলে সতর্ক করে দেন নজরুল ইসলাম নামের ওই কর্মচারী।

জয়পুরহাটে শুধু ওই স্থানে নয়। জেলার ১৯টির মধ্যে ৫টি অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে ঘটেছে আরও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এসব স্থানেও নেই কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা। ২০০৯ সালে কাশিয়াবাড়ি রেল ক্রসিংয়ে ট্রেন আর ট্রাকের ধাক্কায় মারা যায় ১৪ জন আর আহত হয় অন্তত ৩০ জন। এরপর আক্কেলপুর ক্রসিংয়ে ওই স্থানেই ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায় ২ জন, জয়পুরহাট সুগারমিল সড়কের ক্রসিংয়ে কয়েক বছরে মারা যায় ৪ জন নিহত হন। এভাবে জেলার শাহপুর, কানুপুর, মাতাপুর রেল গেইটসহ অনান্য ক্রসিং গত ৯ বছরে দুর্ঘটনায় মারা গেছে শতাধিক মানুষ।

রেলগেট নির্মিত না হওয়ায় প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে শত শত যানবাহন আর যাত্রীদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ শুধু রেলগেইট না থাকার কারণেই ঘটছে এমন দুর্ঘটনা। এলাকাবাসীর অভিযোগ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এত লোক মারা যাবার পরও রেল কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের আশা রেল কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ নিবে।

যাত্রীরা অভিযোগ করে জানিয়েছে রেল ক্রসিং না থাকায় তাদের যাতায়ত করতে হয় ভয়ের মধ্য দিয়ে।
দুঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত আক্কেলপুর উপজেলার পশ্চিম আমট্র গ্রামের সোয়ান ও আক্কেলপুর শহরের মাসুম জানান, ‘এখনো সে ভয়াভয় দুর্ঘটনার কথা মনে পড়লে গা শিউরে উঠে। আর কত প্রাণ দরকার রেল ও প্রশাসনের?। অসুস্থতা নিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছি।’

কেবল আক্কেলপুরের আমুট্ট রেলক্রসিংই নয়, জেলায় প্রায় ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনে আছে আরো ১৯টি অরক্ষিত রেলক্রসিং। প্রয়োজনীয় রেলগেট নির্মিত না হওয়ায় এসব রেলক্রসিং কার্যত মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। নিরাপদে এসব ক্রসিং পাড়াপারে প্রয়োজনীয় রেলগেট নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী ও পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের দাবি বরাবরই থেকেছে  উপেক্ষিত।

Pic-02 copy
এ বিষয়ে সড়ক বিভাগের অবহেলা ও গাফিলতিকে দায়ী করে  রেল কর্তৃপক্ষ। তাদের অভিযোগ, রেলের কোনো অনুমতি ছাড়াই চলছে আমুট্ট রেলক্রসিং। দুর্ঘটনাটির আগে প্রাক্কলন ব্যয়সহ একাধিকবার সড়ক বিভাগকে ওই রেলক্রসিংয়ে গেট নির্মাণের চিঠি দিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।

জয়পুরহাট আক্কেলপুর রেলস্টেশনের মাস্টার খাদিজা খাতুন বলেন, ‘আক্কেলপুর উপজেলার আমুট্ট এলাকায় রেলক্রসিংয়ে সড়ক বিভাগ যে রাস্তা পাড়াপারের ব্যবস্থা করেছে, তা রেল বিভাগের অনুমতি ছাড়া।’

এদিকে গেট নির্মাণে রেল বিভাগের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রেল বিভাগের দেওয়া চিঠি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে, বরাদ্দ পেলে গেট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, রেল বিভাগের কাছ থেকে রেলগেট নির্মাণের জন্য আমরা ১ কোটি ১৫ লক্ষ ছিয়াশি হাজার নয়শত চার টাকার একটি প্রকল্প পেয়েছি, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।’ অনুমোদন ও বরাদ্দ হয়ে এলে গেট নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কমল বলেন, সড়ক বিভাগ আর রেল বিভাগের রশি টানাটানিতেই রয়ে গেছে রেলগেইট নিমার্ণের কার্যক্রম।

স/আ

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর