আমি কোরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি-জাফর ইকবাল

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

এগারদিন আগে যে জায়গায় ছুরিকাহত হয়েছেন সেখানে দাঁড়িয়েই কথা বললেন। বললেন পরিবর্তনের কথা। সেই সঙ্গে ক্ষমাও করে দিলেন যিনি তাকে মারার উদ্দেশ্যে ছু্রি মেরেছিলেন সেই ফয়জুলকে। বললেন আশার কথা। তরুণরা যাতে আর বিপথগামী না হয় সে কথা।

মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে ফিরে এসেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন থাকার পর রিলিজ পেয়েই প্রথমে ছুটে গিয়েছেন সবুজে ঘেরা শাবি ক্যাম্পাসে। কথা বলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সঙ্গে। এ যেন এক রাজসিক প্রত্যাবর্তন। যার জন্য অধীর আগ্রহে ছিলো পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

বুধবার বেলা ১২টা ৪৬ মিনিটে নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছান ড. ইকবাল। এসময় তার সঙ্গে তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক ও তার মেয়ে ইয়েশিম ইকবালসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এসময় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাসসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন। এরপর এয়ারপোর্ট থেকে সোজা শিক্ষক কোয়ার্টারে নিজ বাসভবনে পৌঁছান তিনি। কোয়ার্টারে গাড়ি থেকে নেমে রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হক ও সাবেক প্রধান মেডিকেল অফিসার ড. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

পরবর্তীতে তিনি বলেন, আমি জানতাম না দেশের মানুষ আমাকে এতো ভালোবাসে। এ আঘাত না পেলে বিষয়টি আমার অজানা থাকতো।

বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে যে জায়গায় হামলার শিকার হয়েছেন সে জায়গাতেই দাড়িয়ে সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর উদ্দেশ্যে কথা বলেন তিনি। দশজন ছাত্রী সাইকেল চালিয়ে ড. ইকবালকে মুক্তমঞ্চে নিয়ে আসেন।

‘সাদাসিধে কথা- জাফর স্যার ও আমরা’ শিরোনামে এ আয়োজনে আরও বক্তব্য রাখেন চারজন শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক আয়েশা তাসনীম, বিভাগীয় প্রধান ড. রেজা সেলিম, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক, শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এদিন ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো চোখে পড়ার মতো। পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও আলাদা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।

ড. জাফর ইকবালের কাছে এসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জাফর ইকবালের উদ্দেশ্যে লেখা বিভিন্ন চিঠি ও শিক্ষার্থীদের আঁকা বিভিন্ন ছবি তুলে দেয়া হয়। এরপর তিনি তার বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেন। সন্ধ্যা ৭টায় মুক্তমঞ্চে মোমবাতি প্রজ্জলন করেন শিক্ষার্থীরা।

বক্তব্যে জাফর ইকবাল বলেন, আমি আমার পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। কারো প্রতি তার কোনো ধরনের ক্ষোভ নেই জানিয়ে তিনি বলেন আমি মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, আমি পবিত্র কুরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুবই ভালোভাবে পড়েছি।

এর আগে তার স্ত্রী ড. ইয়াসমিন বলেন, ‘ জাফরকে নাস্তিক হিসেবে যারা অভিহিত করে তারা আসলে তার সম্পর্কে খুব বেশি একটা জানে না। এমনকি জাফরের দুইশত বইয়ের কোনোটাতেই ইসলাম বিরোধী কোনো কথা নেই।’

বক্তব্য চলাকালে ড. ইকবাল কুরআন মাজীদের একটি আয়াতের (৫/৩২) কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আল্লাহ বলেছেন যে লোক অপর একজনকে হত্যা করে সে যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করলো।’ এসময় তাকে বাঁচানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।

তরুণদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘তোমরা পিতামাতার যে স্বপ্ন নিয়ে এখানে পড়তে এসেছো তা কখনো নষ্ট করে দিয়ো না। এসময় তরুণদেরকে বিপথগামী না হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

ছুরিকাঘাতকারী ফয়জুলের প্রতি তার কোনো ক্ষোভ নেই বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই ঐ ছেলেটিকে কেউ না কেউ ভুল বুঝিয়েছে যার পরিপ্রেক্ষিতে সে এই কাজ করেছে। ড. ইকবাল বলেন, আল্লাহ আমাকে নিশ্চয়ই কোনো ভালো কাজ করার জন্যই ফেরত পাঠিয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত ৩ মার্চ বিকালে ইইই ফেস্টিভাল চলাকালীন সময়ে ছুরিকাহত হন ড. জাফর ইকবাল। ঐদিন রাত থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বুধবার তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়। যুগান্তর