আদালতের নির্দেশনা অমান্য : ডাক্তারসহ ৬ পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ

শ্যামল রক্ষিতের মরদেহ (নিহত হওয়ার পরের ছবি)

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে একটি হত্যাকাণ্ডের এজাহার নিয়ে গড়িমসি ও আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে উল্টো আদালত সম্পর্কে বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রচারের অভিযোগে রাজশাহীর পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা এবং পোস্ট মোর্টেম (পিএম) প্রস্তুতকারী ডাক্তারের বিরুদ্ধে আরএমপি পুলিশ কমিশনারকে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দণ্ডবিধির ১৬৭/২২৮/১৬৬/২১৭/২০১ ও ১৯৭ ধারায় রাজশাহীর আতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু আসলাম স্বাক্ষরিত এক দাপ্তরিক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।

অভিযুক্তরা হলেন- তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার (শাহ মখদুম সার্কেল) মো. শামছুল আজম, এডিসি মো. রশিদ, থানার ওসি মো. জিল্লুর রহমান, ওসি (তদন্ত) মো. আনোয়ার আলী তুহিন, এসআই আমিনুল ইসলাম এবং পিএম প্রস্তুতকারী ডা. মো. এনামুল হক।

আদালত সূত্রে জানা গেছে- ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহমখদুম থানার জিডি নং-৯২৩, তারিখ ২২ মে ২০১৭ এবং এমইউডি নং-৩৮০/১৭ ভিকটিম মৃত শ্যামল রক্ষিতের হত্যার বিষয়ে মামলার মূল্যবান আলামতের মূল জব্দ তালিকা ইউডি মামলা/ নিয়মিত মামলার এফআইআর এর কপি জিডির মূল কপিসহ আনুসঙ্গিক কাগজপত্র বিজ্ঞ অদালতে দাখিলের নির্দেশ দিলেও তা প্রেরণ করেন নাই।

২০১৯ সালে ২৯ মার্চ এ হত্যাকাণ্ডের আলামত, মামলার কপিসহ মূল্যবান কাগজপত্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে প্রেরণ না করার জন্য ব্যাখ্যা তলব করলেও ব্যাখ্যার জবাব না দিয়ে উক্ত আদেশ অমান্য করে তা বিজ্ঞ আদালতে কোনরুপ কাগজপত্র দাখিল করেন নাই এবং মিথ্যা পিএম রিপোর্ট দাখিল করার জন্য পিএম প্রস্তুতকারী ডাক্তার এনামুল হককে বারবার বিজ্ঞ আতালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের আদেশ দিলেও ডা. এনামুল হক তা অমান্য করে নিজেকে আত্মগোপন করে রাখেন।

এছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে শাহমখদুম থানা কর্তৃপক্ষ কোনোরূপ আইনি পদক্ষেপ, কার্যক্রম ও প্রক্রিয়া গ্রহণ না করার কারণে এবং ডা. এনামুল হক পিএম রিপোর্টটি মূল্যবান স্থানে কাটাকাটি ও মেডিসিন ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধানের স্বাক্ষর ব্যাতিরেখে এছাড়া মৃত শ্যামল রক্ষিত (৫০) একজন হিন্দু ধর্মের ব্যক্তি হওয়া স্বত্ত্বেও তাকে মুসলিম পরিচয় উল্লেখ করেন।

এদিকে এসআই আমিনুল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর অনুমতি না নিয়ে (সরাসরি) এর পূর্বে বিজ্ঞ আদালতের বিপক্ষে বিরূপ মন্তব্য করে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারসহ পুলিশ হেডকোয়াটারে তিনটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এ বিষয়টি আদালত আমলে নিয়ে উপরোক্ত পুলিশ অফিসারসহ পিএম প্রস্তুতকারী ডা. এনামুলের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আরএমপি পুলিশ কমিশনার ও বিজ্ঞ মহানগর পিপিকে নির্দেশ প্রদান করেন।

এদিকে নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত কোন নিয়মিত/ইউডি মামলা রুজু হয় নাই সুতরাং জিডি মূলে মামলাটি নিষ্পত্তি করা সম্ভবও হচ্ছে না। ওসি, প্রশাসন ও তদন্ত কালক্ষেপন করেছেন যা দায়িত্বে অবহেলার সামিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে আদেশটিতে।

নিহতের স্ত্রী নমিতা রানী রক্ষিতের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২১ মে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে কোনো এক সময়ে রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকার বাসিন্দা শ্যামল রক্ষিতকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর দুর্বৃত্তরা তাকে একটি মেহগনি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কিন্তু তার পা মাটির সঙ্গে স্পর্শ ছিল। একই সাথে হত্যাকারীরা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে একটি চিরকুট শ্যামলের প্যান্টের পকেটের ভেতরে রেখে যায়। ঘটনার পরদিন ২২ মে ২০১৭ শ্যামলের স্ত্রী নমিতা রানী রক্ষিত রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম থানায় এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু থানার তৎকালীন ওসি মো. জিল্লুর রহমান অজ্ঞাত কারণে এজাহার গ্রহণ করেও মামলাটি রুজু করেননি।

নমিতা রানী আদালতে উপস্থাপন করেন, থানার তৎকালীন ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেন। বিভিন্ন সংস্থার কাছে বিচার চেয়েও তিনি বিচার পাননি বলেও দাবি করেন নমিতা রানী রক্ষিত।

এ বিষয়ে আরএমপির মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দাপ্তরিক চিঠিটি পর্যবেক্ষণ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এএইচ/এস