আটক পাইলটকে ফিরিয়ে দিল পাকিস্তান: কে জিতলেন ইমরান না মোদী?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বুধবার বিমান লড়াইয়ের সময় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে তার বিমান বিধ্বস্ত হলে আহত অবস্থায় আটক হন ভারতের বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার আভিনন্দন ভার্তামান।

সাথে সাথে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার পক্ষে ভারতে তীব্র জনমত তৈরি হয়। পুলাওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে শিক্ষা দেওয়ার দাবি ছাপিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হতে থাকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রায় অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আটক পাইলটকে পরের দিনই অর্থাৎ শুক্রবার ভারতের হাতে ফেরত দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

সন্ধ্যার পর উইং কমান্ডার ভার্তামানকে পাঞ্জাবের ওয়াগা সীমান্তে ভারতের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

তার কিছুক্ষণ আগে পাকিস্তান টিভিতে উইং কমান্ডার ভার্তামান বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আচরণে তিনি ‘খুবই চমৎকৃত’ হয়েছেন।

অ।টক পাইলটকে মুক্তি দেওয়ায় তার সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের বিভিন্ন মহলেও অভিনন্দিত হয়েছেন।

কিন্তু এই পাইলটের মুক্তির মধ্যে দিয়ে কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সর্ব-সাম্প্রতিক সংকটের নিরসন হবে এমন ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যায়নি।

কাশ্মীরে সীমান্ত এলাকার দুধারে এখনও দুই দেশের হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন রয়েছে।

ভারত জুড়ে উৎসব

শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভারতে ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে তাকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে তুলে দেয় পাকিস্তানী রেঞ্জার্স।

তারপরেই সারা ভারত জুড়ে শুরু হয়ে যায় উৎসব, বাজি পটকা ফাটানো।

সকাল থেকেই ভারতের নানা শহরে চলেছে আবির খেলা, মিষ্টি খাওয়ানো আর বাজি ফাটানো।

উইং কমান্ডার ভার্তামানের ফিরে আসা নিয়ে ভারত জুড়ে চলছে উৎসব। ওয়াগা সীমান্তে চলছে মিষ্টি বিতরণ।

কে জিতলেন – ইমরান না মোদী ?

উইং কমান্ডার ভার্থমানকে মুক্তি দেওয়ার কথা যখন বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, তখন থেকেই ভারতে টুইটার সহ সামাজিক গণমাধ্যমেও এ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত।

খোলাখুলি ইমরান খানের প্রশংসা করছেন অনেকে। অনেকে লিখছেন মি. মোদীর দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের কারণেই পাকিস্তান বিনা শর্তে পাইলটকে ফেরত দিচ্ছে।

ফেসবুক টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যম হোক বা হোয়াটসঅ্যাপের মতো যোগাযোগ মাধ্যম – সব মাধ্যমেই গত ৪-৫ দিন ধরে চর্চার বিষয় মূলত একটাই – ভারত পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা।

মে যখন পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে ভারতীয় বিমান থেকে বোমাবর্ষণ হল, সেইদিনটা ছিল নরেন্দ্র মোদীর পক্ষ নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশের দিন।

পরের দিন আবার ভারতের আকাশ সীমা পার করে পাকিস্তানী বিমান ঢুকে পড়ায় সেই উচ্ছ্বাসে ভাটা পরেছিল একটু।

আর উত্তেজনাময় তৃতীয় দিন, বৃহস্পতিবার যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ঘোষণা করলেন যে গ্রেপ্তার হওয়া পাইলটকে মুক্তি দেবেন তারা, সেদিন পাল্লাটা যে কোন পক্ষে ভারী, সেটা গবেষণার বিষয়।

এক ফেসবুক ব্যবহারকারী অমিতাভ আইচ লিখেছেন – ‘১৯৮১ সালে যখন পাকিস্তানে খেলতে যায় ভারত তখন রিভার্স সুইং সম্বন্ধে কোনও ধারণা ছিল না। ইমরান খানেরই আবিষ্কার ওটা। গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের মতো ব্যাটসম্যান, যাকে ফাস্ট বোলিং সামলানোর অন্যতম সেরা বলে মনে করা হত, তিনি বারেবারেই ওই রিভার্স সুইংয়ে আউট হয়ে যাচ্ছিলেন। তার ক্যারিয়ারই একরকম শেষ হয়ে গিয়েছিল ইমরানের ওই বলে।’

মি আইচ বিবিসিকে বলেন, ‘গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের ক্যারিয়ারই ইমরানের খানের রিভার্স সুইং আর ইনডীপারের সামনে প্রায় হারিয়ে গেল, তাহলে নরেন্দ্র মোদীর কী হবে, সেটাই ভাবছি।”

ইমরান খান

নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির পক্ষ নিয়ে নিয়মিতই ফেসবুক পোস্ট করেন বিজেপির এক নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত।

তার কথায়, “পাকিস্তান নানা উগ্রপন্থী সংগঠনকে দিয়ে একটা ইয়র্কার দিতে গিয়েছিলেন কিন্তু নরেন্দ্র মোদী নিঃসন্দেহে একটা ছক্কা মেরেছেন। আমাদের কিছু সৈনিক মারা গেছেন ঠিকই, কিন্তু দেশ একত্রিত হয়ে গেছে। ১৯৪৭ এর পর থেকে এতবড় চাপ পাকিস্তানের ওপরে আর কেউ তৈরি করতে পারে নি।”

সামাজিক মাধ্যমে খুবই অ্যাক্টিভ কলকাতার অধ্যাপক গর্গ চ্যাটার্জী। তিনি অবশ্য কে হারল কে জিতল তার বাইরে গিয়ে একটু অন্যভাবে দেখতে চান এই ঘটনাক্রমে।

তিনি বলেন, “একটা যুদ্ধে উভয় পক্ষেরই সাধারণ মানুষই হারে। তবে এক্ষেত্রে বলব যে পাকিস্তানে বেশ কিছু সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের ঘাঁটি রয়েছে, সেই দেশই যখন একজন ভারতীয় বৈমানিককে ছেড়ে দেয়, তাতে বলাই যায় অ্যাডভান্টেজ পাকিস্তান। কারণ তারপরে ভারতের বাহিনীও কিন্তু বলেছে এরপরে আর আগ্রাসন না হলে তারাও আর কিছু করবে না ।”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাকলি সেনগুপ্তও নজর রেখেছিলেন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত মতামতগুলির ওপরে।

তিনি বলছেন, “ইমরান খানের ঘোষণার পরে সামাজিক মাধ্যমে নানা ভাবে সেটাকে ব্যাখ্যা করছেন মানুষ। এইরকম দুটো দেশের মধ্যে যখন একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থাকে, তার মধ্যেই যদি কোনও পক্ষ একটা শান্তির বার্তা দেয়, তাহলে তাদের একটা আশঙ্কা থাকেই যাতে অপর পক্ষ সেই বার্তাটাকে তাদের দুর্বলতা হিসাবে না দেখে। আবার অন্য দেশটিও ব্যাখ্যা করতে পারে যে তাদের কাছে মাথা নোয়াতে হল অন্য দেশটিকে।”

“আমার মতে এভাবে বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করাই উচিত নয়। কারণ যখন ঐতিহাসিকভাবেই বৈরিতা আছে এমন দুটো দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমন করাটাই সবথেকে জরুরী। প্রয়োজন আলোচনায় বসার,” বলছিলেন মিজ সেনগুপ্ত।

সামাজিক মাধ্যমে যেমন নানা জন নানা মত প্রকাশ করছেন ভারত পাকিস্তানের মধ্যেকার এই কদিনের উত্তেজনা নিয়ে, তেমনই চলছে বেশ কিছু হ্যাশট্যাগও – হাজার হাজার টুইট করছেন সেখানে মানুষ – কেউ আবার নানা ধরণের কার্টুনও শেয়ার করছেন।

সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে ভারতের পশ্চিম সীমান্তে যুদ্ধ না হলেও ফেসবুক টুইটারে রীতিমতো যুদ্ধই বেধে গেছে ভারত পাকিস্তানের দুই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর ইমরান খানের পক্ষে এবং বিপক্ষে।