আজিজসহ ছয়জনের রায় যেকোনো দিন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জামায়াতের সাবেক এমপি আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যেকোনো দিন রায় (সিএভি) ঘোষণা করা হবে। উভয় পক্ষর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজ মঙ্গলবার আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল মামলাটির রায় অপেক্ষামাণ রেখে  আদেশ দেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালে এটি হবে ২৯তম রায়।

জামায়াত নেতা আজিজ মিয়া ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চার দলীয় জোটের অধীনে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ ১ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ছাড়াও মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), মো. আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), মো. নাজমুল হুদা (৬০) ও মো. আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)। এ ছয়জনের মধ্যে মো. আব্দুল লতিফ কারাগারে আছে, বাকি পাঁচজন পলাতক রয়েছে।

প্রসিকিউশনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ও শেখ মোশফেক কবির। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম ও মো. শাহিনুর ইসলাম।

যুক্তিতর্ক পেশ শেষে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ লিখিত ও দালিলিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

প্রসঙ্গত, আজিজসহ গাইবান্ধার ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর প্রসিকিউশনের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৬ নভেম্বর ছয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগে উল্লেখ করা হয় : ১৯৭১ এর ৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আসামিরা পাকিস্তান দখলদার সেনা বাহিনীর ২৫/৩০ জনকে সাথে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন মৌজামালি বাড়ি গ্রামে হামলা চালায়। সেখানে চারজন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে আটক, নির্যাতন ও অপহরণ করে দাড়িয়াপুর ব্রিজে নিয়ে যায়। এর মধ্যে ব্রিজের কাছে গনেষ চন্দ্র বর্মণ এর হাত-পা মাথার সাথে বেধে ব্রিজের নিচে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে এবং তিনজনকে ছেড়ে দেয়। আসামিরা আটককৃতদের বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে।

অভিযোগ, ৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, বিকেল অনুমান ৪টার দিকে আসামিরা গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানাধীন মাঠেরহাট ব্রিজ পাহারা দিতে থাকাবস্থায় ছাত্রলীগের নেতা মো. বয়েজ উদ্দিনকে আটক করে মাঠেরহাটের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। পরদিন সকাল বেলা আসামিরা আটককৃত বয়েজ উদ্দিনকে সুন্দরগঞ্জ থানা সদরের পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং ৩ দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন করার পর ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটি চাপা দেয়।

আরো বলা হয়, ৭১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হতে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আসামিরা পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানাধীন ৫টি ইউনিয়নের নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অবৈধভাবে আটক করে। তাদেরকে ৩ দিন যাবৎ অমানুষিক নির্যাতন করার পর পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের নিকটে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং লাশগুলি মাটি চাপা দেয়। সেখানে বর্তমানে শহীদদের স্মৃতির জন্য একটি বধ্যভূমি নির্মিত হয়েছে।

সূত: কালের কন্ঠ