আগে ড্র নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ

পাঁচ বছর আগে এই জানুয়ারিতেই নিউজিল্যান্ডে অনন্য অর্জনের দুয়ার দেখেও শেষ পর্যন্ত হতাশার চোরাবালিতেই নিমজ্জিত হয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার ওয়েলিংটন টেস্টে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সফরকারীরা সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে দেখেছিল ৩৫৯ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ। ক্যারিয়ারে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির মুখ দেখেছিলেন সাকিব (২১৭)। মুশফিক খেলেছিলেন ১৫৯ রানের ইনিংস। দুয়ে মিলে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার বীরত্বও শেষ পর্যন্ত হারের কালিতেই বিলীন হয়। ৭ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। এ কারণেই এবার মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন স্বাগতিকদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েও ম্যাচ ভাগ্য নিয়ে শেষ কথা বলে দেওয়ার উপায় নেই।

অবশ্য এই ম্যাচে যে তৃতীয় দিনের শেষে লিড নিয়ে বসে থাকবে বাংলাদেশ, এতটাই বা ভাবতে পেরেছিল কে? এমনকি ভাবতে পারেননি টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদও। এত তরুণ একটি দল নিয়ে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে বরং ভয়েই ছিলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক। পথ দেখানো অভিজ্ঞতার যে বড্ড অভাবই ছিল এই দলে। ছুটি নেওয়ায় সফরে যাননি সাকিব আল হাসান। চোট যেতে দেয়নি তামিম ইকবালকেও। মাহমুদ উল্লাহ তো টেস্ট থেকে অবসরই নিয়ে বসে আছেন। এর আগের টেস্ট সফরে সেঞ্চুরি করা সৌম্য সরকারও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন, এখন দলেই তাঁর জায়গা হয় না।

এত জনের না থাকার ভীতি যে তাঁর মনেও ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটি স্বীকারে কাল কোনো দ্বিধাই করলেন না মাহমুদ, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমার মনে ভয়ই ছিল। এত তরুণ একটি দল নিয়ে এসেছি! আমাদের টপ অর্ডার দেখুন। সাদমান, জয় (মাহমুদুল) ও শান্ত (নাজমুল)। পরের দিকে ইয়াসির ও লিটন। কেউই কিন্তু অতটা অভিজ্ঞ নয়।’ যদিও অনভিজ্ঞতার অভাব কাটিয়ে উঠতে প্রত্যেকের নিষ্ঠাও দেখেছেন টিম ডিরেক্টর, ‘ওদের প্রত্যেকেরই সামর্থ্য আছে ভালো খেলার। সুনির্দিষ্ট কিছু ট্রেনিং থেকে শুরু করে এখানে অনুশীলন—এসব নিয়ে ছেলেরা অনেক মনোযোগী ছিল। সে জন্য কষ্টও করেছে অনেক। ভালো খেলতে সব কিছুই করেছে ওরা।’

সেই সঙ্গে বরাবরই দলে যে ভূমিকাটা রেখে থাকেন মাহমুদ, এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দলের তরুণ ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণাদায়ী কথায় জাগিয়ে তোলার চেষ্টায়ও এখন পর্যন্ত সফল মাহমুদ তৃতীয় দিনের শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, ‘আমি সবার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে পছন্দ করি। চেষ্টা করি সবাইকে অনুপ্রাণিত করতেও।’ অনুপ্রাণিত করার চেষ্টায় উদাহরণ হিসেবে এসেছিল সেই ওয়েলিংটন টেস্টও, ‘‘সবাইকে একটি কথাই বলেছিলাম যে আমরা এখানে ১০টি টেস্ট (এটি দশম টেস্ট) খেলে হেরেছি সব কয়টিতেই। ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে একটি ম্যাচে ৫৯৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেও হেরে গিয়েছিলাম। আমি ওদের এবার বলেছিলাম, ‘আমরা তো বারবার হারতে পারি না। একটি গ্রুপকে হাত তুলতে হবে, ভালো করতে হবে। এই গ্রুপই কেন সেই গ্রুপ হবে না? এই গ্রুপের পক্ষেই সম্ভব ভালো ক্রিকেট খেলা।’ জয়-হার এখানে পরের কথা।’

যে অবস্থায় এখন আছে বাংলাদেশ, তাতে মাহমুদ তাকিয়ে ভালো কিছুর দিকেই, “আমরা যদি প্রক্রিয়া ঠিক রাখি এবং সাহস রাখতে পারি, তাহলে সম্ভব। এখানে তো কোনো জুজু নেই। হ্যাঁ, নিউজিল্যান্ড এখানে নিজেদের কন্ডিশনে সব প্রতিপক্ষকেই বিপদে ফেলে। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল যে পারব। ‘তোমরাই পারবে’—এই প্রেরণাই সবাইকে দেওয়ার চেষ্টা করছি।” ওয়েলিংটন স্মৃতিও ফিরে আসছে বলে সতর্কতাও আছে টিম ডিরেক্টরের, ‘এখনো অনেক কিছু বাকি আছে। দুটি দিন বাকি আছে আরো। খেলার এখনো বাকি ১৮০ ওভার। আমরা টিকে থাকতে চাই। জিততে না পারলেও অন্তত ড্র করতে চাই।’

তা চাইলে মাহমুদের প্রেরণায় ‘হাত তোলা গ্রুপ’কেও অনড় থাকতে হবে!

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ