অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে নাটোরের নীলকুঠি

মঞ্জুরুল আলম মাসুম, বাগাতিপাড়া:

ভারত উপমহাদেশ থেকে প্রায় দুই‘শ বছরের শাসকগোষ্ঠী ইংরেজদের পতন ঘটেছে বহুপুর্বেই। তবে তাদের শোষন নির্যাতনের নানা স্মৃতি আজও রয়ে গেছে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার নওশেরা গ্রামসহ এদেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব এলাকার মধ্যে নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার বাগাতিপাড়া সদর, নওশেরা, পারকুঠি, নুরপুর কুঠি বাঁশবাড়ীয়া, চিথলিয়া অন্যতম।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাগাতিপাড়ার জংগলাকীর্ন অবতল সমুহ নিরিহ বাসিন্দাদের দ্বারা পরিষ্কার করে নীলচাষের উপযোগী করে সে সময় তৎকালীন ইংরেজরা এ অঞ্চলে কুঠিবাড়ী স্থাপন করে। আর এসব অঞ্চলে চাষীদের জোর পূর্বক নীল চাষ করানো হত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সে সময়ের স্থাপিত এ উপজেলার নীলকুঠিয়াল সাহেবদের অফিস-আদালত এবং নীল সংরক্ষণাগারসহ বহু স্থাপনা ভূমিকম্পে মাটির গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কিছু কিছু স্থানে এই নীল কুঠি ও কলকুঠিগুলির কিছু অংশ কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারই অংশ বিশেষ কুঠিয়াল সাহেবদের ডাকবাংলো।

আজও এসব এলাকায় রয়েছে অভিশপ্ত নীল চাষ-নীলকর আদায়কারী সাহেবদের নিয়ে আনা সাওতাঁল-বাগদীসহ বিভিন্ন আদিবাসী সেই সব শ্রমিক গোষ্ঠী ও কুঠির ধ্বংশাবশেষ। নীল চাষে ইংরেজ নীলকর সাহেবদের মধ্যে যাদের নাম জানা যায় তাদের মধ্যে কুরীয়াল টিসি চুইডি, সিনোলব ম্যাকলিইড, ডাম্বল, ব্রীজবেন নিউ হাউজ সাহেবদের নাম উল্লেখযোগ্য।

এসব নীলকর সাহেবরা রাজশাহী, ঝিনাইদহ, শিকারপুর, কেশবপুর এবং নাটোরের বাগাতিপাড়া এলাকায় জোর পূর্বকভাবে নীল চাষ করাতো। অতঃপর ইংরেজদের নিকট থেকে ভারত ও পূর্ববাংলা ভাগাভাগীতে রেনুইক এন্ড কোং পূর্ব বাংলা এবং ভারতের সমস্ত কুঠিগুলির মধ্যে নওশেরা তথা পূর্ব বাংলার সমস্ত সম্পদ রফিক এন্ড কোং এর নামে হয়ে যায়।

স্থানীয়দের মধ্যে জনশ্রুতি আছে, রফিক এন্ড কোং তার দখল-দারিত্ব পাওয়ার পর নাটোর চিনিকল স্থাপনের পরমুহুর্তেই রেনুইক কোং এর পক্ষ থেকে রফিক এন্ড কোং বাংলাদেশ সুগার কর্পোরেশনকে নওশেরা কলকুঠি ও কুঠিয়ালদের সকল সম্পত্তি দিয়েছেন। তারই ফলশ্রুতিতে সুগার কর্পোরেশন কোটি কোটি টাকার বিশাল গাছ লুটপাটের মত কেটে নিয়েছেন।

কালের স্বাক্ষী হিসেবে পড়ে রয়েছে তথাকথিত ইংরেজ সাহেবদের সেই ডাকবাংলো। এক সময়ের ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতনের স্মৃতি চিহ্ন অভিশপ্ত নীল কুঠিরের ডাকবাংলো অযতেœ অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। বিলীন হয়ে যেতে বসেছে ঐতিহাসিক এসব স্থাপনা। সরজমিনে পরিদর্শণ করে ঐতিহাসিক ডাকবাংলোটি সংরক্ষণ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে সিনিয়র সাংবাদিক ও রেজাউন্নবী জানান, নওশেরা গ্রামটিতে মুলত ব্রিটিশরা গেঁড়ে বসার জন্য আদিবাসী, পাঠান এবং খানদের এনেছিল। এছাড়াও এখানে ইংরেজদের আনা শ্রমিক গোষ্ঠী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বাগদী, সাঁওতালদের বংশধররা এ উপজেলায় বাস করে। সেসময় এখানকার চাষীদের দিয়ে জোরপুর্বক নীল চাষ করানো হতো। আর স্থাপনা গড়ে তুলেছিল নীলকুঠির, কুঠিবাড়ি, ডাকবাংলোসহ নানা স্থাপনা। এ সব স্থাপনা ইতিহাসের স্বার্থেই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

 

স/আ