অভিযোগে নানা অসঙ্গতি, নুসরাতকে তলব পিবিআই’র

মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে নুসরাতের করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে নানা রকম অসঙ্গতি পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এজন্য মামলার বাদী নুসরাতকে তলব করেছে পিবিআই। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই পিবিআই তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে হবে নুসরাতকে।

একাধিক সূত্র মনে করছে, নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই মামলার অনেক রহস্য উন্মোচিত হবে।

পিবিআইয়ের একটি সূত্র বলছে, নুসরাত দুটি অভিযোগ দাখিল করেছিলেন।

১. প্রথম অভিযোগ তিনি করেছিলেন গুলশান থানায়। সেই অভিযোগে তিনি মুনিয়ার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং আত্মহত্যা ও প্ররোচনা মামলা দায়ের করেছিলেন।

২. দ্বিতীয় অভিযোগটি করেন তিনি ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। এই মামলায় তিনি মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে এবং তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

দুটি মামলার যে অভিযোগ নামা সে অভিযোগ নামার মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে এবং একটি মামলার সঙ্গে আরেকটির কোন মিল নেই।

একাধিক সূত্র বলছে, শুধু প্রথম মামলাটি নয় দুটি অভিযোগের মধ্যে অসঙ্গতি থেকে বোঝা যায়, এই মামলাটি করা হয়েছিল উদ্দেশ্যপূর্ণ ভাবে এবং এক ধরণের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের জন্য।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, মুনিয়া ৮ নম্বর নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে যে মামলার অভিযোগ করেছেন সেখানে তিনটি অসঙ্গতি রয়েছে।

আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, যেকোনো মামলা করতে গেলে প্রথম যে অভিযোগটি করা হয় সেটি গৃহীত হয়। পরবর্তীতে সেই অভিযোগ থেকে সরে আসার কোনো পথ নেই। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে যে নুসরাত প্রথম দফায় যে অভিযোগগুলো করেছিলেন দ্বিতীয় দফায় অন্যরকমভাবে মামলাটির সাজিয়েছেন। এটা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এই মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

১. এজাহারে বলা হয়েছে যে, মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু মুনিয়াকে কখন, কিভাবে হত্যা করা হলো সেটি নাই। যেকোনো হত্যাকাণ্ডের মামলায় সময় এবং ঘটনাস্থল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আসামিদের কাউকে না কাউকে অবশ্যই সেই হত্যাকাণ্ডের স্থলে উপস্থিত থাকতে হবে। এটি এই মামলার সবচেয়ে বড় ত্রুটি বলে মনে করছে একাধিক সূত্র।

২. মুনিয়া যখন নুসরাতের সাথে টেলিফোন করেন এবং নুসরাত যখন কুমিল্লা থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন, তখন তাদের টেলিআলাপে একবারও মুনিয়া মৃত্যুর আশঙ্কা করেননি বা তাকে হত্যা করা হতে পারে এরকম আশঙ্কা করেনি। বরং মুনিয়া কিছুদিন নির্বিঘ্নে ঢাকার বাইরে ঘুরে আসতে চেয়েছিলেন।

৩. মৃত্যুর আগে ব্যক্তির যে সমস্ত কথাবার্তা সেটিকে বলা হয় তার লাস্ট স্টেটমেন্ট বা শেষ বক্তব্যে। সেই শেষ বক্তব্য মুনিয়া কোথাও নিজেকে ধর্ষিতা বলে দাবি করেননি।

কাজেই এই তিনটি অসঙ্গতির বিষয় নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন।

মামলার তদন্তে ইতিমধ্যে পিবিআই তদন্তে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। গুলশানের যে ফ্ল্যাটে ২৮ এপ্রিল মুনিয়া মারা গিয়েছিলো সেই ফ্ল্যাটের ভিডিও সিসিটিভি ফুটেজ নিয়েছে। মুনিয়ার ডায়েরি এবং অন্যান্য কাগজপত্র জব্দ করেছে। এছাড়া মুনিয়ার ফোনের কল রেকর্ড জব্দ করেছে।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন