অব্যবস্থাপনায় মাটি ঈদযাত্রার আনন্দ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ছুটি বাড়ানো এবং বাড়তি ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা সত্ত্বেও ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ থেকে রেহাই মিলছে না ঘরমুখো মানুষের। ঈদযাত্রার শুরুতেই রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে আটকে থেকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি গাড়ি চলাচল, মহানগরীর ভেতরে ছয়টি ভুল স্থানে বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশন এবং এগুলো ঘিরে সড়কের ওপর গাড়ি পার্কিং; সেই সঙ্গে ভাঙা সড়ক, সড়কের বিভাজক কেটে ইচ্ছেমতো যান চলাচলে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে।

 

সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ঈদের টানা ছয় দিনের ছুটি শুরু আজ শুক্রবার থেকে। গতকাল বৃহস্পতিবার অফিস শেষ হতে না হতেই সরকারি চাকরিজীবীরা বাড়িমুখো হতে শুরু করেছে। বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও সদরঘাট থেকে বিভিন্ন অঞ্চলগামী পরিবহনে ছিল যাত্রীদের অত্যধিক ভিড়। হাজার হাজার যাত্রী গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে আমিনবাজার, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে আবদুল্লাহপুর, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে কাঁচপুর, ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রাবাড়ী অংশে যানজটে দুর্ভোগে পড়ে।

 

যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পার হতেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুই ঘণ্টা লেগেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠে স্থানে স্থানে আটকে থাকতে হয়েছে যাত্রীদের। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও ছিল গাড়ির ধীরগতি। মহাসড়ক ধরে রাজধানীতে কোরবানির পশুবাহী গাড়ি একদিকে ঢুকছে অন্যদিকে রাজধানী থেকে বাড়িমুখো গাড়ি বেরোচ্ছে। একই সঙ্গে দ্বিমুখী গাড়ি চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা ছিল ট্রাফিক পুলিশের।

 

ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান ২০১৬-৩৫-এর খসড়া প্রতিবেদন মতে, স্বাভাবিক সময়ে রাজধানীতে গড়ে প্রতিদিন পাঁচ লাখ যাত্রী ঢোকে ও বেরিয়ে যায়। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে, ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য এখন ঢাকা থেকেই দিনে গড়ে কমপক্ষে ১০ লাখ লোক বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।

 

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, চারটি বাস টার্মিনাল, দুটি রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল দিয়ে এসব যাত্রীকে চলাচল করতে হয়। টার্মিনাল ও স্টেশন থেকে যাতায়াতের জন্য শুরু থেকেই পরিকল্পিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। বিভিন্ন দেশে টার্মিনাল ও স্টেশন থাকে রাজধানী শহরের বাইরে। যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা এড়াতে এ দেশেও রাজধানীর চারটি টার্মিনাল শহরের বাইরে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ছয় বছর ধরে তা ঝুলে আছে।

 

ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যানের খসড়া প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, সদরঘাট টার্মিনাল হয়ে প্রতিদিন ৪০৪টি বিভিন্ন ধরনের নৌযান চলাচল করে। ৬২টি রুট দিয়ে সদরঘাট হয়ে দিনে গড়ে এক লাখ ৭০ হাজার যাত্রী ঢাকায় আসে বা বেরিয়ে যায়। ঈদযাত্রায় যাত্রীর চাপ এর চেয়ে দ্বিগুণ। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে সদরঘাটে যাত্রী পরিবহনের জন্য যথেষ্টসংখ্যক সরাসরি বাস নেই। সদরঘাটে যাওয়ার আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক করা হয় বাস।

 

সেখান থেকে হেঁটে টার্মিনালে যেতে হয়। সদরঘাটে যাওয়ার সড়কটি অপেক্ষাকৃত কম প্রশস্ত। সকালে বাস ওই সড়কে ঢুকে পড়ে। তখন যানজট ঠেলে ওই বাসকে বের হতে হয়। সড়ক অপ্রশস্ত হওয়ায় জনজটের মধ্যে অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয় সদরঘাটে। এ অবস্থায় সদরঘাট থেকে লঞ্চ টার্মিনাল শ্যামবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে।

 

কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে শতাধিক ট্রেনে দিনে গড়ে এক লাখ ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। গত বুধবার থেকে প্রতিদিন কমলাপুর থেকে ৩১টি আন্তনগর ট্রেনসহ শতাধিক ট্রেনে দ্বিগুণের বেশি যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ছাদে চড়েও বাড়ি যাচ্ছে যাত্রীরা। রাজধানীর ৯৮ শতাংশ রুটের সঙ্গে কমলাপুর রেলস্টেশনের সরাসরি বাস যোগাযোগ নেই। সিএনজি অটোরিকশা বা ট্যাক্সিক্যাবে রেলস্টেশনে যেতে হয় যাত্রীদের।

 

গতকাল সকালে রংপুর এক্সপ্রেস ধরতে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে অটোরিকশায় কমলাপুর রেলস্টেশনে যেতে দেড় ঘণ্টা লেগে যায় মো. নুর আলীর। যানজটে অপেক্ষার জন্য মিটারে অতিরিক্ত ভাড়া ওঠে ১২০ টাকা। বিমানবন্দর রেলস্টেশনেও বড় বাস সরাসরি চলে না।

 

রাজধানীতে চারটি আন্তজেলা বাস টার্মিনাল আছে। এসব টার্মিনাল দিয়ে কিছু লোকাল বাসও যাতায়াত করে। তবে পরিকল্পিত কোনো পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি, যাতে সরাসরি এসব টার্মিনালে পৌঁছা যায়। ছোট গাড়ির আধিক্যে এসব টার্মিনাল এলাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যাত্রী যাতায়াত করে গাবতলী বাস টার্মিনাল হয়ে। এই টার্মিনাল দিয়ে স্বাভাবিক সময়ে ৬১টি রুটে দিনে যাতায়াত করে কমপক্ষে ৫০ হাজার যাত্রী। দৈনিক বাস চলাচল করে ৯৬০টি। ঈদযাত্রায় এবার এই টার্মিনাল দিয়ে বিভিন্ন কম্পানির এসব বাসের ট্রিপসংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে।

 

অন্যান্য রুটের অনিয়মিত কিছু গাড়িও চলছে এই টার্মিনালের আশপাশ থেকে। দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার যাত্রীরা বাড়ি ফিরতে গতকালও ভিড় করে এই টার্মিনালে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট গাড়ি নিয়ে এ টার্মিনালে যাত্রীরা উপস্থিত হয়। অনেকে বাসে চড়ে টার্মিনালে যায়। তবে স্থানে স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে তীব্র যানজটে আটকে পড়তে হয় তাদের।

 

গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে বাসের জন্য। তবে তাদের বসার মতো কোনো স্থান ছিল না। টার্মিনালে বিভিন্ন কাউন্টারের পাশে মালপত্রের ওপর বসতে হয়েছে তাদের। সাকুরা পরিবহনে বরিশাল যেতে সকালে সেখানে গিয়ে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে খুরশীদ জাহানকে। ততক্ষণ মালপত্রের ওপর বসে কিংবা ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে তাঁর মতো শত শত যাত্রীকে।

 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘ঈদের সময় যাত্রীর চাপ খুব বেশি বেড়ে যায়। ভিড়ের মধ্যে অপেক্ষারতদের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ওয়েটিং রুম করার বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি।’

রাজধানী থেকে চট্টগ্রামসহ পূর্বাঞ্চলের ১৬ জেলায় যাতায়াত করতে হয় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে। গত বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এই টার্মিনাল ছাড়িয়ে আশপাশের বিভিন্ন সড়কেও গাড়ি রাখা হচ্ছে। সড়কেই গড়ে উঠেছে চার শতাধিক কাউন্টার। মূল টার্মিনাল থেকে জনপথ মোড়, গোলাপবাগসহ সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় সড়কে গাড়ি পার্ক করা এবং গাড়ি ঘোরানোর ফলে সায়েদাবাদ থেকেই যানজট শুরু হয়।

 

এই টার্মিনাল দিয়ে ৮৭টি রুটে দিনে ৭৯০টি বাস চলাচল করে থাকে স্বাভাবিক সময়ে। তখন গড়ে দিনে ৩৫ হাজার যাত্রী চলাচল করে থাকে। ঈদযাত্রার শুরু থেকেই ট্রিপ বাড়ানো হয়েছে। যোগ হয়েছে নতুন বাস। ফলে দ্বিগুণের বেশি যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে দিন-রাত। কিন্তু যাত্রীদের বাসে ওঠার আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। কিছু কাউন্টারে বসার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে টার্মিনালে যাত্রীদের বসার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই।

 

হকার থেকে শুরু করে ভবঘুরেদের উপস্থিতিতে পুরো টার্মিনালে যাত্রীরা থাকে নিরাপত্তাহীন। চাঁদপুরের পদ্মা পরিবহনের যাত্রী নাজমুল হক বলেন, টার্মিনালের সামনে গেলেই হাত ধরে বাসে তুলে নিতে চায়, ব্যাগ ধরে টানাটানি করে। এর চেয়ে বহু দূরে দাঁড়িয়ে থেকে বাসে ওঠাই ভালো।

 

গাবতলী থেকে আমিনবাজার হয়ে ঢাকার প্রবেশপথটি অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজটমুক্ত হতে পারছে না। ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল দিয়ে বিভিন্ন রুটে স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক ৩২ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়। দিনে চলাচল করে এক হাজার বাস।

 

এই টার্মিনালে যানজট প্রকট রূপ নিয়েছে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৬০টি রুটে প্রায় ৫০০ বাস চলাচল করে। স্বাভাবিক সময়ে দিনে ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও এখন দ্বিগুণের বেশি বলে বাস শ্রমিকরা জানিয়েছে। মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে বাস পার্কিং ও বাস ঘোরানোর কারণে দিনরাত যানজট লেগেই থাকে।

 

উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে রাস্তায় অবৈধ পার্কিং নিষিদ্ধ করা হলেও কিছুদিনের মধ্যে আগের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখানে যানজটের কারণে মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের রমনা-মগবাজার-সাতরাস্তা অংশ চালু হলেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সায়েদাবাদ ও বিভিন্ন স্থান থেকে গাজীপুরসহ বিভিন্ন রুটের বাসগুলো এ টার্মিনালের সামনে দিয়ে যায়। ফলে সাতরাস্তা, তেজগাঁও, মহাখালীতে যানজটে আটকে পড়ে যাত্রীদের নাকাল হতে হয়। এনা পরিবহনের বাসে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গতকাল সকালে টার্মিনালে যাওয়ার আগে মহাখালীতে অটোরিকশায় ৪৫ মিনিট বসে থাকতে হয় শরীফুল ইসলামকে। মহাখালী থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথটি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত। তবে অসংখ্য সংযোগ পথ, একের পর এক লেভেলক্রসিং, নতুন ফ্লাইওভারের যানজট, যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলার কারণে এ পথেও যানজট লেগেই থাকে।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গের কিছু অংশের মানুষকে মহাখালী-বিমানবন্দর-আবদুল্লাহপুর হয়ে রাজধানী ছাড়তে হয়। বাসচালকদের কাছ থেকে জানা গেছে, যানবাহনগুলো বেরোনোর সময় কমপক্ষে ছয়টি এবং ঢুকতে ৯টি স্থানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের যাত্রীবাহী বাসগুলোকে রাজধানীতে ঢোকার আগে গাজীপুর চৌরাস্তা, টঙ্গীর চেরাগ আলী, স্টেশন রোড, আবদুল্লাহপুর মোড়, কুড়িল বিশ্বরোড, স্টাফ রোড, বনানী, কাকলী ও মহাখালী লেভেলক্রসিং—এই ৯টি স্থানে যানজটে পড়তে হচ্ছে। গতকাল বিকেলে মহাখালী, বনানী, কাকলীতে যানজট চোখে পড়ে। রাজধানীর অন্যতম এ প্রবেশপথের মহাখালী থেকে উত্তরা অংশ পড়েছে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের আওতায়। এ বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ঈদে রাস্তায় চাপ বাড়ছে। আবদুল্লাহপুরে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার বসানো হয়েছে। অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।

তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড মূল সড়ক থেকে সরানো হলেও আমিনবাজার, দয়াগঞ্জ, হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে, শিমরাইল ও কাঁচপুরে রয়েছে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড। পশু পরিবহনের জন্য এসব ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে ট্রাক চলাচল বেড়ে গেছে। ঈদযাত্রায় ঢাকার প্রবেশপথ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পথে যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য ছোট যানবাহনের জট লেগে যাচ্ছে মোড়ে মোড়ে। ট্রাফিক পুলিশ পূর্ব জোনের উপকমিশনার মো. মাঈনুল হাসান বলেন, ‘ডেমরা-স্টাফ কোয়ার্টার, যাত্রাবাড়ী-সাইনবোর্ড, জুরাইন পোস্তগোলা প্রবেশপথে যাত্রীবাহী ও পশুবাহী গাড়ির চলাচলে ব্যবস্থাপনার ওপরই আমরা জোর দিচ্ছি। কোথাও গাড়ি দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। টার্মিনালকেন্দ্রিক যানজট হচ্ছে।’

ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি ও বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ঈদযাত্রায় টার্মিনালে যাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে ভিজিলেন্স টিম কাজ করবে। যাত্রীর অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবে এসব টিম। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ বিকেলে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ভিজিলেন্স টিমের কার্যক্রম পরিদর্শন করবেন।

ঢাকার একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন ৩৭টি রুট থেকে ১৬০টি ফ্লাইট যাতায়াত করে। এর মাধ্যমে ১৫ হাজার যাত্রী প্রতিদিন ঢাকায় প্রবেশ বা প্রস্থান করে। তবে বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলের জন্য আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ভাড়ায় চালিত ট্যাক্সি ক্যাব, কার ও মাইক্রোবাসে যাত্রীরা সেবা নিতে গিয়ে হয়রানি ও ভাড়া-সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। ঈদের ছুটি বেড়ে যাওয়ায় দেশের ভেতরে ও বিভিন্ন দেশে ঈদ অবকাশ উদ্যাপন করতে তত্পরতা শুরু হয়েছে। শাহবাগ থেকে বিমানবন্দর যেতে হলুদ ট্যাক্সি ক্যাবে এবার ৬০০ টাকা ভাড়া উঠেছিল জানিয়ে যাত্রী শিপার আহমদ বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে বিমানবন্দরের সঙ্গে দ্রুত গণপরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের এখানে নেই। এখানে আছে হয়রানি।’

নগরীর বাইরে থেকে আগমন-নির্গমনের জন্য সড়ক, নৌ ও রেলের সমন্বয়ে যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে বলে অভিমত দিয়েছেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন বা বাস টার্মিনালের সঙ্গে মেট্রো রেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) সংযোগ থাকা উচিত। দেশের অন্যান্য শহরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ঢাকা মহানগরীর চারটি সংযোগ সড়ক আছে। তবে কোনো এক্সপ্রেসওয়ে বা বাইপাস সড়ক নেই। তাতে করে সড়কের মোড়ে মোড়ে প্রবেশ ও প্রস্থানে ভ্রমণের সময় অপচয় হচ্ছে। ঢাকা থেকে বের হতেই তিন থেকে চার ঘণ্টা লাগছে।

যানজট বিষয়ে গবেষক সন্তোষ কুমার রায় বলেন, আশির দশকে ঢাকা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ফুলবাড়িয়া থেকে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। আন্তজেলায় চলাচলকারী বাসগুলো ফুলবাড়িয়ার পরিবর্তে ঢাকা শহরের প্রান্তসীমার বাসস্ট্যান্ডে এসে যাত্রা শেষ করলেও যাত্রী সাধারণের যাত্রা একেবারে শেষ হয় না। তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষাকৃত ছোট যানবাহন মিনিবাস, মাইক্রোবাস, টেম্পো, সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহার করতে হয়। এসব যানবাহনের ধারণক্ষমতা আন্তজেলা বাসের তুলনায় কয়েক গুণ কম। আনুপাতিক হারে রাস্তার স্থান দখলের পরিমাণ অনেক বেশি। ফলে রাস্তার কার্যকর ব্যবহার হ্রাস পাচ্ছে। যাত্রীদের ভ্রমণ সময়, ব্যয় ও ধকল বাড়ছে।

ডিএনসিসি, ডিএসসিসি ও রাজউক সূত্রে জানা গেছে, সায়েদাবাদ টার্মিনাল কাঁচপুর সেতুর পাশে, ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল কেরানীগঞ্জে, মহাখালী টার্মিনাল উত্তরায় এবং গাবতলী টার্মিনাল সাভারে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২০১০ সালে। এ জন্য রাজউকের কাছে জমিও চেয়েছিল ডিসিসি। এরপর আর কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি।

সচিবালয় যেন ফাঁকা : প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে এক দিন বাড়তি ছুটি পাওয়ায় এমনিতেই খুশি সরকারি চাকুরেরা। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস গতকাল প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে ছিল ছুটির আমেজ। সকালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতির কথা বলাবলি করছিলেন সহকর্মীদের সঙ্গে। সচিবালয়ের সামনেও ছিল না দর্শনার্থীদের ভিড়। দুপুরে সচিবালয়ে ক্যান্টিনগুলোতেও ভিড় ছিল না। অনেকে দুপুরের পরই অফিস থেকে বেরিয়ে যান। অন্যান্য দিন সচিবালয়ে গাড়ি রাখার জায়গা পাওয়া নিয়ে সমস্যা হলেও গতকাল তা হয়নি। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয় ফাঁকা মনে হচ্ছে।

ঈদের আগে-পরে ছয় দিন বন্ধ থাকবে ট্রাকলরি চলাচল : আসন্ন ঈদুল আজহায় সড়কপথে যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীর এলেনবাড়ীতে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হচ্ছে আজ। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাত দিন এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যক্রম চলবে। সাধারণ মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে ঈদের আগে-পরে ছয় দিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ট্রাক-লরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীলদ্রব্য, পোশাক পণ্য, ওষুধ, কাঁচা চামড়া ও জ্বালানি বহনকারী যানবাহন এর আওতামুক্ত থাকবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এলেনবাড়ীর (তেজগাঁও) সদর দপ্তরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষটি স্থাপন করা হবে। সেখানকার টেলিফোন নম্বর ০২-৯১৩০৬৬২ এবং মোবাইল ফোন নম্বর ০১৯৬৬৬২২০১৯ ও ০১৭৩০৭৮২৯৪৬।

সূত্র: কালের কণ্ঠ