অব্যবস্থাপনায় ঢাকা-রাজশাহী রুটে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ট্রেনযাত্রীরা

নিকস্ব প্রতিবেদক:

কখনো ট্রেনের ছাদে লাশ উদ্ধার, কখনো ট্রেন থেকে মাদক উদ্ধার, আবার কখনো ট্রেনের ভিতরেই টিকিটের টাকা আদায় নিয়ে মারামারি। সর্বশেষ ট্রেনের ভিতরে টয়লেটে এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটলো। আর এসবই হচ্ছে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের চরম অব্যবস্থাপনার কারণে। আবার সবগুলো ঘটনায় ঘটছে সিল্কসিটি ও পদ্মা ট্রেনে। এ নিয়ে নিরপদ ট্রেনযাত্রাও মাঝে মাঝে বিপদ ডেকে আনছে যাত্রীদের। নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছেন যাত্রীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৩-৪ বছরের মধ্যে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ও পদ্মা ট্রেনের ছাদ থেকে অন্তত ৫টি লাশ উদ্ধার করেছে জিআরপি পুলিশ। টিকিট ছাড়া ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকারী যাত্রীদের এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। আবার ট্রেনের মধ্যে টিকিটহীন যাত্রীদের নিকট থেকে টাকা আদায় নিয়েও একাধিক মারপিটের ঘটনা ঘটেছে ট্রেনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সেইসঙ্গে হিজড়াদের অত্যাচার তো আছেই।

ঈশ্বরদীর জিআরপি থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, যেসব ট্রেনে এটেন্ডেন্টের সংখ্যা তুলনামুলক হারে কম, সেসব ট্রেনেই ঘটছে এসব অঘটন। তবে পুলিশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে এগুলো। সর্বশেষ ট্রেনে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।’

এদিকে দ ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পদ্মা ট্রেনের যাত্রী রবিউল ইসলাম বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন ঢাকা থেকে রাজশাহীর বাড়িতে যায়। এসময় লক্ষ্য করি, ট্রেন কর্মকর্তাদের অবেহলা, অব্যবস্থাপনা আর ট্রেন বগিতে পর্যাপ্ত নিরাপ্তা না থাকায় যাত্রীরা পড়ছেন বিপাকে। এমনকি নিরাপত্তাহীনতায়ও পড়ছেন। বিশেষ করে টিকিটহীন যাত্রীদের নিয়েই বেশি সমস্যা লক্ষ্য করা যায় ট্রেনে। তাদের নিকট থেকে টাকা আদায় করা নিয়ে আবার বিভিন্ন সিটে গিয়ে বসা নিয়েও মাঝে মাঝেই ট্রেনের কর্মকর্তা বা অন্য যাত্রীদের সঙ্গে কখনো কথাকাটাকাটি বা কখনো হাতাহাতির ঘটনাও ঘটতে দেখি।’

তিনি আরো বলেন, সিল্কসিটি ও পদ্মা ট্রেনেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটতে দেখি। কারণ এই দুটি ট্রেনে পর্যাপ্ত এটেন্ডেন্ট থাকে না। ফলে টিকিট ছাড়া বিপুল পরিমাণ যাত্রী উঠার সুযোগ পান বিভিন্ন স্টেশনে। আবার এ দুটি ট্রেনে হিজড়ারাও উঠে যাত্রীদের নিকট থেকে গণহারে চাঁদা আদায় করে পরিবেশ নষ্ট করে।

পশ্চিমঞ্চল রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগের একজন
কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিল্কসিটি ও পদ্মা ট্রেনে পর্যাপ্ত এটেন্ডেন্ট না থাকায় এসব ঘটনা বাড়ছে। পর্যাপ্ত এটেন্ডেন্ট থাকলে হয়তো এসব ঘটনা ঘটবে না। রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা রাতের ধূমকেতু ট্রেনে এসব ঘটনার কোনো বালাই নাই। কারণ এ ট্রেনটিতে পর্যাপ্ত এটেন্ডেন্ট নিযুক্ত থাকে।  ফলে ট্রেনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে না বললেই চলে। কিন্তু অন্য দুটি ট্রেনে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বাড়ছে। তাতে যাত্রীদের মাঝে আতঙ্কও বাড়ছে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি ট্রেনে এক স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ট্রেনযাত্রী মমিনুল ইসলামকে (২৬) হাতেনাতে আটক করে অন্য যাত্রীরা। অথচ ওই সময়ও ওই বগিতে কোনো এটেন্ডেন্ট ছিলেন না। খালার সঙ্গে রাজশাহী যাচ্ছিলো সিরাজগঞ্জের ওই ছাত্রী।

এছাড়াও সম্প্রতি ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেনে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। কখন কীভাবে এটা হলো এ বিষয়ে জানত না ওই ট্রেনের এটেনডেন্টরা।  পরে রাজশাহী স্টেশনে ট্রেনটি ধোয়া-মোছার জন্য রাখা হলে লাশটি দেখতে পায় পরিচ্ছন্নকর্মীরা। এর সঠিক জবাব দিতে পারেনি রেলওয়ে পশ্চিম কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া গত বছরেই কয়েকটি লাশ পাওয়া যায় ট্রেনে। এসবের কোনো স্পষ্ট ব্যাখা বা কোনো সমাধান দেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ বলেন, এটেন্ডেন্ট স্বল্পতার কারণেই সিল্কসিটি ও পদ্মা প্রেটে পর্যাপ্ত এটেন্ডেন্ট দেয়া যাচ্ছে না। তবে ধূমকেতু ট্রেনের এটেন্ডেন্ট সার্ভিস বেসরকারী খাতে দেওয়ায় সেটিতে বগি প্রতি একজন করে এটেন্ডেন্ট থাকছে। কিন্তু অন্য দুটিতে গোটা ট্রেন মিলে বড় জোর চারজন এটেন্ডেন্ট থাকছেন। এ কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

স/আর