অবশেষে নায়িকা খুঁজে পেলেন কবরী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

গুলশান লেকের পাড়ে নায়িকা কবরীর বাড়ি। বসার ঘরের এক পাশে রাখা টেবিলে ছড়িয়ে কাগজপত্র ও ফাইল। টেবিলের সঙ্গে লাগোয়া দুটি চেয়ারে দুজন, শিক্ষিকা ও ছাত্রী। দুজনই নায়িকা। একজন সেকালের, একজন একালের।

সাবেক নায়িকা কবরী এখন সিনেমার পরিচালক। নিজের দ্বিতীয় সিনেমার জন্য একেবারে নতুন একজন তরুণীকে নায়িকা হিসেবে খুঁজে নিতে হয়েছে। বাসার টেবিলে বসে তাঁকেই চরিত্র ও গল্প বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। পাশে বসে মনোযোগী ছাত্রীর মতো শুনছিলেন নিশাত সালওয়া। সরকারি অনুদানের ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির শুটিং শুরু হবে কাল।

নায়িকা বাছাইয়ের জন্য বেশ কয়েকজন তরুণীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন কবরী। কিন্তু তাঁর পরীক্ষায় পাস করতে পারছিলেন না কেউই। একসময় কলকাতা থেকেও নায়িকা নেওয়ার কথা ভাবতে হয়েছিল কবরীকে। শেষ মুহূর্তে তিনি পেয়ে যান নিশাতকে। কবরী বলেন, ‘নতুন ছবিটার জন্য আমি এমন একটি মুখ খুঁজছিলাম, যেটা আমি নিশাতের মধ্যে পেয়েছি। সে দেখা করতে এল, কথা বললাম। ছবির প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখে ভালো লেগেছে। পড়াশোনাও ভালো। বাকিটা অভিনয় শুরু করার পর বুঝতে পারব।’

নিশাত সালওয়া মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৮-এর প্রথম রানারআপ। এর আগে তিনি মডেল হয়েছিলেন গানের ভিডিওতে। প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে একটি সিনেমায় কাজ করেছেন। তবে কবরীর সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াকে জীবনের অনেক বড় একটি অর্জন বলে মনে করছেন তিনি। নিশাত বলেন, ‘কবরী ম্যামের সঙ্গে যেদিন দেখা করার কথা, সেদিন আমার হাত-পা কাঁপছিল। এত বড় একজন শিল্পীর মুখোমুখি হতে হবে, শুরুতে সেটা ভাবতেই পারছিলাম না। এমনকি তাঁর ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাব, সেটাও ভাবিনি। দ্বিতীয় দেখায় মনে মনে আশা বাড়তে থাকে।’

নিশাত সালওয়া। ছবি: সংগৃহীত

শুটিংয়ের আগে চিত্রনাট্যসহ কবরীর সঙ্গে বসেছিলেন নিশাত। সেই অভিজ্ঞতার ভাগাভাগি করতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘একজন বড় শিল্পী আমাকে অভিনয় শিখিয়ে দিলেন, এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। একজন অভিজ্ঞ অভিনয়শিল্পী যখন পরিচালক হন, তখন তাঁর কৌশলগুলো ঠিকমতো ধরতে পারলে আর কিছু লাগে না। আমি মনে করি, এই ছবিতে অভিনয় করাটা হবে আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অভিজ্ঞতা। এ কদিন ম্যামের সঙ্গে কথা বলে সে রকমই মনে হয়েছে। মনে হচ্ছে, সুন্দর একটা কর্মশালা করছি, যা আমার পরবর্তী জীবনেও কাজে আসবে।’

এর আগে ছবির নায়ক রিয়াদ রায়হানসহ অন্য শিল্পীদের নিয়ে এভাবেই নিজের বাড়িতে কর্মশালা করিয়েছেন কবরী। রিয়াদ বলেন, ‘ম্যাডাম হাতে ধরে ধরে প্রতিটি সংলাপ বুঝিয়ে দিয়েছেন। অভিনয়ের আগে এমনটা করতে হয়, তা বুঝতাম না। এ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। ফিল্মের ওপর একটা শিক্ষাসফরও হচ্ছে বলতে পারেন।’

সাবিনা ইয়াসমীন। ছবি: প্রথম আলো

রিয়েলিটি শো দিয়ে বিনোদন অঙ্গনে পরিচিতি পেলেও তার এক বছর আগে থেকে নাটকে অভিনয় শুরু করেন রিয়াদ। পাঁচ বছরে ৪০টির মতো নাটকের অভিনয় করা রিয়াদের স্বপ্ন ছিল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের। কিন্তু জুতসই গল্প ও পরিচালকের খোঁজ পাচ্ছিলেন না। মাস ছয়েক আগে পরিচিত একজনের মাধ্যমে খোঁজ পান, কবরী তাঁর নতুন ছবির জন্য নায়ক খুঁজছেন। এরপর যোগাযোগ করে একদিন ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে কবরীর সঙ্গে দেখা করেন রিয়াদ। সেদিনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে রিয়াদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলচ্চিত্রে অভিনয়ের তাড়না থেকে কবরী ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে যাই। এত বড়মাপের অভিনয়শিল্পী তিনি, ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপছিল। সেদিন ভাবিনি, তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হব। ভাবতে পারিনি, প্রথম সিনেমা হবে কবরী ম্যাডামের পরিচালনায়।’

‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবিটি পরিচালনার পাশাপাশি কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন সারাহ বেগম কবরী। এই ছবির সংগীত পরিচালক বরেণ্য সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। জহির রায়হানের ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবিতে ১৯৬৭ সালে আলতাফ মাহমুদের সুরে ‘মধু জোছনার দীপালি’ গান দিয়ে যাত্রা শুরু সাবিনা ইয়াসমীনের। এরপর পেরিয়ে গেছে ৫২ বছর। গায়কিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কবরীর সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করলেন সংগীত পরিচালক হিসেবে। অনেক অনুরোধের পরে কবরী তাঁর সিনেমার সব গানের সংগীত পরিচালনা করাতে রাজি করিয়েছেন সাবিনাকে।নিশাত সালওয়া। ছবি: সংগৃহীতসাবিনা ইয়াসমীন ও কবরীর বন্ধুত্ব চার দশকের বেশি সময়ের। সাবিনার গাওয়া অসংখ্য গানে সিনেমার পর্দায় ঠোঁট মিলিয়েছেন কবরী। কবরীর দ্বিতীয় ছবিতেই সাবিনা ইয়াসমীন সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন। তবে এর আগেও সংগীত পরিচালনার প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি। রাজি হননি। বন্ধু কবরীর অনুরোধ ফেলতে পারেননি।

সংগীত পরিচালনায় বিষয়টি সম্পর্কে সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘আমার সুর ও সংগীতে অন্য শিল্পীরা গাইবেন, ভাবতেই ভীষণ আনন্দ লাগছে। একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা হবে। সত্যিই রোমাঞ্চকর ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে। পরিচালক যেহেতু কবরী, আমি আমার কাজটা স্বাধীনমতো করতে পারছি।’ ছবির গানগুলো লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান ও কবরী। ছবির চার গানের মধ্যে তিনটি গান লেখা ও সুর করা শেষ বলে জানালেন কবরী। গান প্রসঙ্গে সাবিনা বলেন, ‘চমৎকার কথার গান পেয়েছি। যেমন চেয়েছি, গানের কথাগুলো তেমনই। গানের ট্র্যাক করার কাজটা বাকি আছে, তারপর শুরু হবে কণ্ঠ দেওয়া।’