অপরিকল্পিত খনন, খালের পেটে সড়ক

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে অপরিকল্পিত খননের কারণে খালের পেটে ধসে পড়ছে এলজিইডি নির্মিত সাড়ে চার কিলোমিটার পাকা সড়ক। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম বিপর্যয় ঘটেছে। দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার কমপক্ষে অর্ধশত গ্রামের মানুষ।

এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এলাকাবাসীর এই সমস্যার সমাধান করছেন না। তারা পাকা সড়ক নির্মাণ ও খাল খননের পক্ষে বিপক্ষে একে অপরকে দোষারোপ করছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের উদাসীনতার স্বীকার হয়ে কয়েক হাজার মানুষের স্বাভাবিক চলাচল হুমকির মুখে পড়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, পেঁচিবাড়ি বাজার থেকে চাঁনদিয়াড় সেতু পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ২০১১ সালে সড়কটি পাকা করা হয়। পরবর্তীতে একবার মেরামতও করা হয়েছে এই সড়কটি। সব মিলে ব্যায় হয়েছে কমপক্ষে দুই কোটি টাকা। সড়কটি নির্মাণের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হয়ে ওঠে।

এদিকে পেঁচিবাড়ি বাজার থেকে চাঁনদিয়াড় সেতু পর্যন্ত পাকা সড়কের গাঘেঁসে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে সরকারি একটি খাল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খালটির পুনঃখননের কাজ শেষ করা হয়েছে। এতে ব্যায় হয়েছে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বাঙালী নদী থেকে এই খাল দিয়ে একসময় পানি প্রবাহিত হয়েছে। কিন্ত আশির দশকে খালের উৎস মুখ পেঁচিবাড়ি নামক স্থানে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। সেটি বর্তমানে পাকা সড়কে পরিণত হয়েছে।

একারণে দীর্ঘদিন ধরে বাঙালী নদী থেকে খালের ভেতরে পানি প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে খালের পানি কমে গেছে। এছাড়া খালের পানিতে নেই কোনো স্রোত। তারপরও সাড়ে চার কিলোমিটার পাকা সড়কের শতাধিক স্থানে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়ায় খালটি মরা খালে পরিণত হয়। এই খাল মানুষের কোনো কাজে আসেনি। এই খালটি অপরিকল্পিতভাবে পুনঃখনন করা হয়। অনেক জায়গায় খাড়াভাবে খাল খনন করায় ধসে পড়ছে পাড়ের মাটি। ভাঙনের মুখে পড়েছে খালের পাড়ের বসতি। একই সাথে একটু একটু করে পাকা সড়ক ভেঙে খালের পেটে বিলীন হচ্ছে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম বিপর্যয় ঘটেছে। এই খালটি খনন করার পর তা মানুষের কোনো উপকারে আসছে না, উল্টো খাল কেটে বিপদ ডেকে এনেছে।

এবিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ধুনট উপজেলা প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, এই খালটি পুনঃখননের আগে পাকা সড়কটি টিকে ছিল। কিন্ত অপরিকল্পিত ভাবে খননের পর পাকা সড়ক ধসে খালে পড়ছে। খাল খনন করতে গিয়ে পাকা সড়কের পাশে পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়নি। একারণে পাকা সড়কটি রক্ষা করা যাচ্ছে না। খাল খননের সময় এবিষয়টি নিয়ে পাউবোর কর্মকর্তাদের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করে কোনো কাজ হয়নি। তবে পাকা সড়কটি মেরামত করা হবে।

খাল খননের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুল হক বলেন, পারিকল্পনা অনুযায়ী জনস্বার্থে খালটি পুনঃখনন করা হয়েছে। খাল খনন করে সেই মাটি পাকা সড়কের ঢালুতে (স্লোপ) ফেলে সড়কটি টিকসই করা হয়েছিল। কিন্ত বর্ষাকালে সড়কের পাশে বাড়ির পানি গড়ে পাকা সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে খালে পড়ছে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ