অপরাধীকে শাস্তি দিলেই তো মান-সম্মান ফেরত পাব না: আত্মহত্যাকারী স্কুলছাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘নিজের লজ্জার কথা বারবার সবাইকে বলতে বলতে আমি নিজের কাছে অনেক ছোট হয়ে গেছি। প্রতিদিন পরপুরুষের কাছে এসব বলতে বলতে আমি আর পারছি না। অপরাধীকে শাস্তি দিলেই তো আর নিজের মানসম্মান ফেরত পাব না। তাই আমাকে ক্ষমা করো।’

চিঠিটি ১৪ বছরের এক মেয়ের। বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে চিঠিটি লিখেছিল সে। এরপরই শোবার ঘর থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা সদরে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এ ঘটনা ঘটেছে। ওই দিন রাতেই পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।

মেয়েটির নাম সুমাইয়া আকতার। সে উপজেলার বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ত।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির আনিস উদ্দিনের ছেলে মুকুল হোসেন (২০) সুমাইয়াকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। রাজি না হওয়ায় গত ২৩ এপ্রিল প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় সুমাইয়াকে অপহরণ করেন মুকুল। এ কাজে সহযোগিতা করে সুমাইয়ার এক বান্ধবী। মুকুল সুমাইয়ার মুখে রুমাল চেপে তাকে অপহরণ করেন। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

আটক ব্যক্তিরা হলেন, মুকুল হোসেনের নানি সকিনা বেগম, খালাতো ভাই রাব্বি ও খালু রাসেল।

ওই দিন স্থানীয় লোকজন খানপুর বাগবাজার এলাকায় সুমাইয়াকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। সুমাইয়াকে উদ্ধার করে প্রথমে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় স্কুলছাত্রী সুমাইয়ার বাবা বাদী হয়ে মোহনপুর থানায় গ্রেপ্তার দু’জনের নাম উল্লেখ করে দু–তিনজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে অপহরণ মামলা করেন।

পুলিশ ২৭ এপ্রিল মুকুল হোসেন ও সুমাইয়ার বান্ধবীকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। ঘটনার পর থেকে আসামির পরিবারের লোকজন প্রতিনিয়ত সুমাইয়া ও পরিবারের লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার সময় সুমাইয়া পুকুরে গোসল করতে যায়। এ সময় আসামিপক্ষের লোকজন তাকে কটূক্তি করতে থাকে। সুমাইয়া বাড়ি ফিরে বিষয়টি পরিবারকে জানায়। সুমাইয়া বিকেল চারটার সময় খাতায় একটা নোট লিখে রাখে। মা–বাবার উদ্দেশে লেখা চিঠিতে সুমাইয়া লিখেছে, ‘প্রিয় মা-বাবা, প্রথমেই তোমাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তোমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি, অনেক আদর, অনেক ভালোবাসা। কিন্তু একটা মেয়ের কাছে তার মানসম্মান টাই সবচেয়ে বড়।’ এই নোট লেখার পরে পাশের শোবার ঘরে বাঁশের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় সুমাইয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

সুমাইয়ার বাবা আবদুল মান্নান বলেন, ‘বাইরে বের হলেই তাঁর মেয়েকে বাজে কথা শুনতে হতো। আমাদেরও বাজে কথা শুনতে হতো। মেয়ে বলত বাবা, আমার জন্য তোমাদের বাজে কথা শুনতে হচ্ছে। আমার কারণে নাকি আমার বোনদের বিয়ে হবে না।’

আত্মহত্যার পর রাজশাহী পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

স/শা