রবিবার , ৩ জুলাই ২০১৬ | ২১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনেকের বিশ্বাস আমি বাঙালি নই

Paris
জুলাই ৩, ২০১৬ ৩:৪৭ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাঙালির কৃষ্টি, বাঙালির সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করতে ওঁরা বদ্ধপরিকর। বাঙালিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ওঁরা অঙ্গীকারবদ্ধ। বাঙালিয়ানাকে বিশ্বমানবের আঙিনায় সগৌরবে প্রতিষ্ঠা দিতে ওঁরা নিরলস। এবং রীতিমতো আন্তরিক।

আমার পাঁচ–‌ছয় বছরের বঙ্গ সম্মেলনের অভিজ্ঞতায় আমি সেটাই বুঝেছি। সে কারণেই বারবার ওঁরা ডাকলেই আমাকে আমেরিকা উড়ে যেতে হয় এখানকার সব ব্যস্ততা সরিয়ে রেখে। যেখানে পেশাগত দিকটা নয়, আমি খুঁজি বাঙালির সেই মুখগুলো, যারা সারা বছর এক ব্যস্ততা–‌ঠাসা রুটিনের মধ্য দিয়ে দিনরাত কাটায়। কিন্তু যাদের আকুতি থাকে এই বাংলার জন্য। বাংলা ভাষার জন্য। বাংলার সংস্কৃতির জন্য।
সুদূর আমেরিকায় বাঙালির এমন মিলন মঞ্চ সত্যিই শিহরন জাগানো। বাঙালির কাছে এ এক উত্তরণের অধ্যায়। বিদেশ আমাকে প্রায়ই যেতে হয়। যেতে হয়েছে। অভিনয়, পাঠ, গানের পসরা নিয়ে। আগে রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দ মঞ্চে পরিবেশন করেছি সত্যমদার নেতৃত্বে। এবারও সে ধরনের কিছু অনুষ্ঠান থাকছে। যাতে অভিনবত্বের স্বাদ পাবেন আমেরিকার বাঙালি। অলকানন্দাদির সঙ্গে একটা কাজ করার কথা রয়েছে। যে কাজগুলো করে আমি সত্যিই মনের খোরাক পাই।
একজন বাঙালি শিল্পী হিসেবে বাংলার ঐতিহ্য–‌ইতিহাস–‌গৌরব তুলে ধরার একজন অংশীদার হতে পেরে আমি গর্ববোধ করি। কিন্তু যে কথাটা না বললেই নয় সেটা হল, এসব ভাল লাগার মধ্যেও একটা ‘‌কিন্তু’‌ যখন–‌তখন ঢুকে পড়তে দেখেছি আমেরিকায়। ভাবছেন সেটা কী, তাই তো?‌ তা হলে খুলেই বলে ফেলি। বাল্টিমোরে ‘‌মায়ার খেলা’‌ করতে গিয়েছি। মঞ্চে যখন আমরা, তখন মুগ্ধ হাজার হাজার চোখ। আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম ওঁদের হাততালি আর অভিনন্দনে। কিন্তু একটু পরে যখন ‘‌অন্যরকম’‌ প্রশংসা শুনলাম কিছু দর্শকদের মুখে, আমি পুরো থ‌ মেরে গেলাম!‌ নিজের কানে শুনলাম ওঁরা বলছেন, দেখেছ আমেরিকার ছেলে, অথচ কেমন পরিপাটি বাংলা বলছে!‌ বাহাদুর ছেলে বটে!‌আমি আপত্তি করলাম, কী বলছেন, আমি আমেরিকার কেউ নই। কলকাতার ভাত–‌ডাল–‌ইলিশ মাছ খাওয়া বাঙালি!‌ ওঁরা কেউ বিশ্বাস করেছিলেন, কেউ ভেবেছিলেন মজা করছি!‌ একজন বলেছিলেন, না সাহেব, তুমি আমাদেরকেই বোকা বানাচ্ছ। কিন্তু তোমার গায়ের রঙ, চোখের তারা তো বলছে তুমি বাঙালি নও। কলকাতার তো অবশ্যই নও। অমন ওভার কনফিডেন্ট লোকটার সঙ্গে তর্কবিতর্ক করতে আর পারিনি। সমস্যাটা আজও ভোগায় কমবেশি। তার পর অবশ্য ধরেই নিয়েছি, এটাই আমার নিয়তি। মনেপ্রাণে আদ্যোপান্ত বাঙালি হয়েও প্রবাসে আমার ‘‌অবাঙালি’‌ বিশেষণ বোধহয় এ জীবনে ঘুচবে না!‌‌‌

সূত্র: আজকাল

সর্বশেষ - বিনোদন