অনিশ্চিত ৫০ হাজার ট্যানারি শ্রমিকের জীবন!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর হাজারীগের ট্যানারি পল্লী উচ্ছেদ করায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সেখানে কর্মরত ৫০ হাজার শ্রমিকের জীবন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে রাজধানীর হাজারীবাগের সব ট্যানারিতে বন্ধ করে দেওয়ার হয়েছে সব ইউটিলিটি সংযোগ। ফলে শ্রমিকরা এখন কী করবেন তা তারা বুঝে উঠতে পারছেন না।

 

শ্রমিকরা বলছেন, ‘আদালতের রায় নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই, আদালত সবার ওপরে। কিন্তু হাজারীবাগের ৫০ হাজার শ্রমিকসহ এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবন মালিক ও সরকারের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে গেলা। আমরা জানি না কাল সকাল থেকে আমাদের কী হবে? এক অনিশ্চিত জীবনের দিকে যাচ্ছি আমরা। হয়তো না খেয়েই থাকতে হবে পরিবার পরিজন নিয়ে।’

 

শনিবার হাজারীবাগে ট্যানারি কারখানাগুলোতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরিবেশ অধিদফতর অভিযান পরিচালনা করে।অভিযানে ১২৩টি টেলিফোন সংযোগ, ১৯৩টি পানির লাইন, ২২৪টি বিদ্যুৎ সংযোগ ও ৫৪টি গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গত ৩০ মার্চ এক আদেশে ৬ এপ্রিলের মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানাগুলোর সব কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেন আপিল বিভাগ।

 

শনিবার সকাল ১০টা থেকে অভিযান শুরু হলে সেখানে শ্রমিকদের আহাজারী শোনা যায়। ভবিষ্যত জীবনের অনিশ্চিয়তায় দিশেহারা অনেক শ্রমিক। শ্রমিকরা আজকের এ অবস্থার জন্য কারাখানা মালিকদের  দায়ী করছেন। তারা বলছেন, সরকার থেকে বারবার তাদের সময় দেওয়া হলেও মালিকরা তাতে উদ্যোগী হননি, তাদের গাফিলতির কারণেই আজ  আমাদের এ অবস্থা।

 

হাজারীবাগের রুমা লেদার ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে গিয়ে দেখায় যায়, ভেতরের বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ততোক্ষণে শ্রমিকরা কারখানা ত্যাগ করলেও অনেকেই সেখানে অবস্থান করছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নারী কর্মীরা বলেন,কাল থেকে কী খাবো জানি না? কয়েকদিন পর রমজান মাস শুরু হবে। ঈদে ছেলেমেয়ের জন্য নতুন জামা কেনা ও গ্রামে বাবা মায়ের জন্য টাকা পাঠানো অনিশ্চিত হয়ে গেছে এখন।

 

পুরো কারখানা অন্ধকার হয়ে আছে, কাজ বন্ধ তাহলে কেন বসে আছেন-জানতে চাইলে নারী শ্রমিকরা বলেন, ‘মায়া ছাড়তে পারছি না, বাড়ি গিয়ে কী করবো? তাই বসে আছি এখানে।’

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ট্যানারি কারখানা ম্যানেজার বলেন, ‘হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে গেলো। মালিকরা কেউ তাদের দেখতে আসেনি। কারখানায় পানি, গ্যাস নাই। মালিকরা তো শেরাটন-সোনারগাঁও হোটেলে খাবে। শ্রমিকদের দেখতে আসার মতো সময় তাদের নেই।’

 

এ বিষয়ে ট্যানারি ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ট্যানারি উচ্ছেদ জনগণের কাছে ভালো বার্তা দিলো না। এর জন্য কে বা কারা দায়ী সেটা সময় বলে দেবে। এই উচ্ছ্বেদের কারণে দেশের শিল্প, শ্রমিক এবং অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘সাভারে প্রস্তাবিত ট্যানারি পার্কে শ্রমিকদের চাকরি অব্যাহত থাকবে কিনা সেটাও অনিশ্চিত। নতুন জায়গায় আবাসন নেই, হাসপাতালসহ অন্যান্য কোনও সুবিধা নেই। সরকার এবং মালিক পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে যে চুক্তি হয়েছে সেখানে এসব বিষয়গুলো একেবারেই উপেক্ষিত। ৫০ হাজার শ্রমিক এখন হাজারীবাগে অন্ধকারে, সাভারেও যাওয়ারও উপায় নেই তাদের।’

 

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘একটি কারখানার উৎপাদন দুই মাস বন্ধ থাকলে মালিকপক্ষের হয়তো লাভ হবে না কিন্তু তারা না খেয়ে থাকবে না। কিন্তু একটি কারখানা এভাবে দিনের পর দিন বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের না খেয়ে থাকতে হবে।  তাই আমাদের দাবি সরকার এবং মালিকপক্ষ বসে সমস্যাটি সমাধান করুক।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন