অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারেই বেশি, কর্মচাঞ্চল্য ফেরেনি রাজশাহীর স্টেশনগুলোতে

নিজস্ব প্রতিবেদক :

করোনা আতঙ্কে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পরে দেশে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে রাজশাহীসহ পশ্চিমাঞ্চলের স্টেশনগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য ফেরেনি। আবার সব টিকিট অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি হওয়ায় এবং স্টেশন থেকে বিক্রি বন্ধ থাকায় অলস সময় কাটাতে হচ্ছে বুকিং সহকারীদের। এতে যেসব যাত্রীরা এখনো অনলাইন সম্পর্কে তেমন অবগত নন, তারা পড়ছেন বিপাকে। অনলাইনের টিকিট বেশিরভাগ যাচ্ছে কালোবাজারিদের হাতে।

আবার লোকাল এবং অধিকাংশ আন্ত:নগর ট্রেনগুলো এখনো চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশনে যাত্রীদের ভিড়ও থাকছে না। ফলে অনেকটা শুনশান অবস্থা বিরাজ করছে স্টেশনগুলোতে। তবে আগামী ২৩ আগস্টের পর এই চিত্র পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এদিকে করোনা ঝুঁকি এড়াতে এখনো অর্ধেকরও কম যাত্রী নিয়ে পশ্চিমাঞ্চলে ১১টি ট্রেন চলাচল করছে। এই ১১টি ট্রেনের মধ্যে সবেচেয়ে কম যাত্রী হচ্ছে ঢাকা-বেনাপোল রুটের ট্রেনটিতে। এর বাইরে অন্যান্য আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে যাত্রীসংখ্যা রেলওয়ের বিক্রি করা অর্ধেক টিকিটের প্রায় কাছাকাছি হচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্র মতে, রেলওয়ের এখন যেসব ট্রেন চলাচল করছে, সেসব ট্রেনের সম্পূর্ণ টিকিট বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। ফলে ২৩৪ জন বুকিং সহকারীসহ স্টেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজও কমেছে অন্তত ৯০ ভাগ। এখন যেসব টিকিট বিক্রি হচ্ছে, সেই টিকিট শুধু একজন বুকিং সহকারী কাউন্টারে বসে থেকে প্রিন্ট দিয়ে যাত্রীর হাতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ফলে টিকিট কাটতেও আর লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না সাধারণ যাতত্রীদের। তবে যেসব যাত্রীরা এখনো অনলাইন সম্পর্কে তেমন অবগত নন, তারা পড়ছেন বিপাকে। অনলাইনে টিকিট কাটতে না পেরে বাসই হচ্ছে তাদের ভরসা। আবার কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে।

রাজশাহী-ঢাকা রেলপথে বনলতা এক্সপ্রেসের সাধারণ সিটের ভাড়া ৩৭৫ টাকা, অথচ কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকায়। কেবিনের ভাড়া ৮৬৫ টাকা, কালোবাজারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে  দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা। একইভাবে সিল্কসিটি, ধূমকেতু ও পদ্মা ট্রেনের টিকিটও কালোবাজারে তিন-চার গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল বুধবার সকালে রাজশাহী স্টেশনে গিয়ে এমন কয়েকজন যাত্রীকে পাওয়া যায়, যাঁরা টিকিট কাটতে স্টেশনে এসেছিলেন। কিন্তু গেটের আনসার সদস্যা জানিয়ে দেন টিকিট অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। সেখান থেকে কাটতে হবে। কাউন্টারে টিকিট বিক্রি বন্ধ আছে। এভাবে পশ্চিমাঞ্চলে চালু থাকা ১৭৭টি স্টেশনের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এখন প্রায় বসে থেকেই সময় কাটছে।

স্টেশনে টিকিট কিনতে এসে না পেয়ে হতাশ আকবর আলী নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করি। ঈদের ছুটিতে বাসে চড়ে বাড়িত অ্যাসছিনু। এখন ঢাকায় যাবো। তাই ট্রেনের টিকিট নিতে স্টেশনে যাইয়ে শুনতে পানু টিকিট নাকি অনলাইনে বিক্রি হয়। অনলাইনে কোথায় টিকিট পাবো, কিভাবে কাটবো কিছুই তো জানি না। তাই বাসেই যাওয়া সিদ্ধান্ত নিছি।’

আরেক যাত্রী মাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট কাটতে পারি। কিনতে অনলাইনে টিকিট ছাড়ার পরপরই একটি সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাচ্ছে সেই টিকিট। ফলে আমরা অনলাইনেও টিকিট পাচ্ছি না। আবার সেই টিকিট বাইরে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে অনলাইনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।’

প্রসঙ্গত, গত ৬ আগস্ট রাজশাহীতে প্রায় দেড় লাখ টাকার টিকিটসহ দুই কালোবাজারিকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর প্রকাশ্যে কালোবাজের টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। তবে এখনো গোপনে অনলাইনে টিকিট কেটে সেগুলো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এখনো।

এদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান টেলি কমিউনিকেশন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। তিনি  বলেন, ‘আমরা অনেকটা আশানরুপ যাত্রী পাচ্ছি। তবে আগামী ১৬ তারিখ থেকে আন্তঃনগর ট্রেন আরও বেশ কয়েকটি চালু হওয়ার পরে ট্রেনের যাত্রী সংখ্যা বাড়বে। পাশাপাশি ২৩ আগস্টের পরে লোকাল ট্রেন চালু হলে স্টেশনে কর্ম ব্যস্ততাও বাড়বে। এরপর হয়ত আগের মতো অন্তত অর্ধেক টিকিট কাউন্টার থেকেই বিক্রির সিদ্ধান্ত আসবে।

স/আর