অধ্যাপক রেজাউল হত্যা : তিন মাসেও জমা পড়েনি অভিযোগপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার পরদিন ২৪ এপ্রিল মামলা তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এরপর হত্যার ২১ দিনের মাথায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শক। কিন্তু হত্যার তিন মাসেও অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

 

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘তদন্তে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। উপযুক্ত সময় হলেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।’ এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

 

তবে হত্যার মোটিভ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিনি মুক্তমনা ছিলেন তাই জেএমবিরা তাকে হত্যা করেছে।’ এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

 
জানা যায়, গত ২৩ এপ্রিল অধ্যাপক রেজাউলকে নিজ বাসার পাশেই গলাকেটে হত্যা করা হয়। ওই দিন বিকেলে অধ্যাপকের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের নামে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। পরদিন ২৪ এপ্রিল মামলা ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময় ঘটনায় জেএমবি (জামায়াতে মুজাহিদীন বাংলাদেশ) সদস্যরা সরাসরি জড়িত বলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়। এ পর্যন্ত জড়িত সন্দেহে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এতে হাফিজুর রহমান নামে শিবিরকর্মী পুলিশ হেফাজতে ‘অসুস্থ’ হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের তিন জন জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। সর্বশেষ ২২ মে আব্দুস সাত্তার ও তার ছেলে রিপন আলী দায় স্বীকার আদালতে জবানবন্দি দেয়। এর আগে ১৬ মে জেএমবি সদস্য মাসকাওয়াত হাসান সাকিব আদালতে জবানবন্দি দেয়।

 
এদিকে অধ্যাপক রেজাউল হত্যার তিন মাস পূর্তিতে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ‘মুকুল প্রতিবাদ ও সংহতি মঞ্চে’ এসে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

 
সামাবেশে বিভাগের অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘অধ্যাপক রেজাউল হত্যার তিন মাসেও দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি দেখতে পাইনি। আমাদের দেশে একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়ে গেছে, বিচার না চাইলে বিচার পাওয়া যাবে না। তাই আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।’ ধীরে ধীরে মামলা দীর্ঘসূত্রিতায় পরিণত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 
জানতে চাইলে অধ্যাপক রেজাউলের মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘আমি এবং আমার পরিবারে একটই বক্তব্য আব্বুর হত্যা মামলা ক্ষমতার প্রভাব ও অর্থনৈতিক প্রবণতা থেকে যেন মুক্ত থাকে। আর মামলা যেন দীর্ঘসূত্রিতায় পরিণত না হয় সেজন্য যতদ্রত সম্ভব সকল জড়িতদের গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছি।’

 
গত ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে বাসার পাশেই খুন হন অধ্যাপক রেজাউল। এরপর থেকে বিচারের দাবিতে বিরতিহীন আন্দোলন করে আসছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে ১৪ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে। তবে তারা ‘সাপ্তাহিক’ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।

স/অ