সীমান্তে মিয়ানমারের স্থলমাইন, বাংলাদেশের প্রতিবাদ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্তে মিয়ানমার ভূমিমাইন পুঁতে রাখছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সরকার সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতেই এই উদ্যোগ। রয়টার্স জানিয়েছে, সীমান্ত পরিস্থিতির সঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই সূত্রের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মাইন স্থাপনের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এদিকে এ বিষয়ে মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্টদূতকে তলব করে বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে জানা গেছে।

সাম্প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েন শুরুর কয়েকদিনের মাথায় ২৪ আগস্ট ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গা’দের  সমন্বিত হামলা এবং রাতভর সংঘর্ষে বিদ্রোহী-পুলিশ-সেনাসদস্য মিলে অন্তত ১০৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় সেনাসূত্র। হামলার পর থেকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার হয়। আর অভিযান জোরদারের পর বাংলাদেশের সীমান্তে জোরালো হয় রোহিঙ্গা-স্রোত। সেনাদের নির্যাতন-নিপীড়নের হাত থেকে রেহাই পেতে দুই সপ্তাহে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারা যেন আর মিয়ানমারে ফিরতে না পারে, সেই উদ্দেশ্যেই মাইন পুঁতে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ওই দুই সূত্র। মূলত স্থিরচিত্র ও গোপন সংবাদদাতা মাধ্যমে মিয়ানমারের এই ভূমিমাইন বসানোর বিষয়টি জানা গেছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন তারা।

যে গ্রুপগুলো ভূমিমাইন পুঁতে রেখেছিল তাদের গায়ে কোনো ইউনিফর্ম ছিল কি না তা নিশ্চিত করেনি সূত্রগুলো। একটি সূত্র বলেছে, ‘তারা নিজেদের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছ ঘেঁষে ভূমিমাইন বসাচ্ছে। আমাদের সেনারাও কাঁটাতারের বেড়ার কাছ ঘেঁষে তিন থেকে চারটি গ্রুপকে কাজ করতে দেখেছে। তারা মাটিতে কিছু একটু পুঁতে রাখছিল। পরে আমাদের গোপন সংবাদদাতারা নিশ্চিত করেছে তারা ভূমিমাইন পুঁতে রেখেছে।’ তবে তারা নিশ্চিত যে, এরা রোহিঙ্গা বিদ্রোহী ছিল না। এদিকে বাংলাদেশের একজন কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে জানিয়েছেন, সীমান্তে মাইন পেতে রাখার এবং এসব মাইনে বাংলাদেশে পলায়নরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হতাহত হবার কিছু কিছু খবর তারাও পাচ্ছেন।

এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান খান রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার মিয়ানমারের পাশ থেকে দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সোমবার থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী ভূমিমাইন পুঁতে রেখেছে। মঙ্গলবার সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় এক কিশোরের পা বিস্ফোরণে উড়ে গেছে। আরেক কিশোর আহত হয়েছে। পা হারানো ওই কিশোরকে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আনা হয়েছে।

যে স্থানটিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেখানে সোমবার এক রোহিঙ্গা শরণার্থী গিয়েছিলেন। সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ড এলাকা থেকে তিনি যে ছবি তুলেছেন তাতে দেখা গেছে কাদার ভেতরে ১০ সেন্টিমিটারের গোলাকার ইস্পাতের একটি চাকতি পুঁতে রাখা হয়েছে। ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, তার বিশ্বাস এ ধরনের আরো দুটি চাকতি সেখানে পুঁতে রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মিয়ানমারের নেত্রি অং সান সু চির মুখপাত্র জ হতেইয়ের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে সোমবার তিনি বলেছিলেন কোথায় বিস্ফোরিত হয়েছে, কারা সেখানে যেতে পারে এবং কারা পুঁতে রেখেছে, কে নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে যে এগুলো সন্ত্রাসীরা পুঁতে রাখেনি-সব বিষয়গুলো নিশ্চিতে আরো পরিষ্কার তথ্য প্রয়োজন।

আজ বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করীম মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্টদূত অং মিন্টকে আবারও তলব করেছেন। সে সময় অপ্রত্যাশিত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্তে ল্যান্ডমাইন স্থাপনের বিষয়েও প্রতিবাদ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।