সিল্কসিটিনিউজের খবরের পর বেরিয়ে এলো গোমস্তাপুরের সেই মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছিলো

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গোমস্তাপুর প্রতিনিধি:

এক মাস আগে দরিদ্র কিশোরী মোসা. সাম্মী খাতুন (১৩)কে ধর্ষণ করে তিন বখাটে যুবক। এ ঘটনায় স্থানীয়রা ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ধর্ষণের শালিস করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছিল।

কিশোরী সাম্মীর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরের মিরাপুর তিনপুকুর গ্রামে।

এদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ১ সেপ্টেম্বর পরিকল্পিতভাবে কিশোরী সাম্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের কথা বলে মৃত্যুর পর পুলিশ শুধু একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। অভিযোগ থাকলেও গোমস্তাপুর থানা পুলিশ কোনো মামলা নেয়নি। এমনকি কোনো তদন্তও করেনি বলে মেয়েটির পরিবার অভিযোগ করেছে। এ নিয়ে সিল্কসিটিনিউজে প্রথম সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর মেয়েটিকে হত্যার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

থানায় কোন সহযোগিতা না পেয়ে কিশোরী সাম্মী খাতুনের নানী মার্জিনা বেগম বাদী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা ৭/৩০/৯(১) ও দণ্ডবিধি আইনের ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার আইনজীবী ড. তসিকুল ইসলাম জানান, বাদী মার্জিনা খাতুনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরের তিনপুকুর গ্রামের মো. কেতাবুল ইসলামের ছেলে মো. নয়নকে প্রধান আসামি করে আর্জিতে ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

নিহত সাম্মীর পরিবারের অভিযোগ- অপরাধীরা প্রভাবশালী হওয়ায় গোমস্তাপুর থানা পুলিশ ঘটনা ভিন্ন দিকে নেয়ার অপচেষ্টা করছে। তিন দিন ঘুরেও তাদের মামলা গ্রহণ করেনি ওসি। তাদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে একটি মহল আত্মহত্যার ঘটনা সাজিয়ে ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে।

মামলার বাদী তার আর্জিতে উল্লেখ করেছেন- এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ১ সেপ্টেম্বর, ২ সেপ্টেম্বর ও ৬ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা করতে গেলে ওসি অজ্ঞাত কারণে মামলা গ্রহণ না করে ফেরত পাঠিয়েছে। সাম্মীর আত্মহত্যার কোন আলামত ছিল না (যেমন- জিহ্বা বের হওয়া, চোখ বড় হওয়া)। ঝুলন্ত অবস্থায় তার হাত বাধা ছিল।

ঘটনার সূত্রে জানা যায়, নিহত সাম্মী ছোটবেলা থেকেই নানীর বাড়ি থাকছিল। সে রাবেয়া বাসরী গার্লস স্কুলে ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। দীর্ঘদিন ধরে তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল মামলার প্রধান আসামি নয়ন। বিষয়টি পরিবারকে জানালে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে নয়ন ও তার সহযোগীরা। গত ৭ আগস্ট রাত ৮টার দিকে সাম্মীকে অপহরণ করে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। পরদিন দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাদের বাড়ির সামনে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরে সাম্মীর নানী তাকে উদ্ধার করে রহনপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করান।

আরো পড়ুন… গোমস্তাপুরে গ্রাম্য সালিশে ধর্ষণের বিচার না পেয়ে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

এ ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়ভাবে শালিসের মাধ্যমে নয়নের পরিবারকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করে শালিস নিষ্পত্তি করেন। তবে এ শালিস তারা মানতে না পেরে থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নেন। পরে ১ সেপ্টেম্বর পরিকল্পিতভাবে বাড়িতে ঢুকে বেলা সোয়া ১১টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সাম্মী খাতুনকে। হত্যার পর ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে গলায় ওড়না দিয়ে বাঁশের তীরের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। ইউডি নং-১৩।

এ ব্যাপারে গোমস্তপুর থানার ওসি জসিম উদ্দীন বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। ওই কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।

মামলা না নেয়া প্রসঙ্গে ওসি বলেন, তারা আমার কাছে আসেনি। তারা যদি এ ঘটনায় মামলা করতে চাই তাহলে অবশ্যই মামলা নেয়া হবে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তারা। আমিই ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্যই মামলার কার্যক্রম অপেক্ষমাণ আছে বলেও জানান ওসি।

স/আ