পত্নীতলায় সংরক্ষণের অভাবে কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্সের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ

আবু সাঈদ, পত্নীতলা :


মানুষের মৌলিক চাহিদার তালিকায় চিকিৎসা শেষ নম্বরে থাকলেও বর্তমানে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দশকে মানুষের জীবণযাপন ধরণ পরিবর্তন এবং পারিবারিক আয় বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান আর শিক্ষা নিয়ে মানুষকে আর ততটা ভাবতে হয় না। কিন্তু প্রয়োজনীয় ও নিরাপদ চিকিৎসা সেবা লাভ মানুষের জন্য বর্তমানে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

উপজেলা, জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল আর প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশি মানুষের লম্বা লাইন দেখে এটা সহজেই অনুমান করা যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানুষের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে বন্ধ থাকা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করা এবং গ্রাম থেকে রোগীকে শহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থা স্বাস্থ্য সেবা সাধারণ মানুষের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।

কিন্তু নওগাঁর পত্নীতলায় যথাযথ পরিকল্পনা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশ কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্সগুলো কাজে আসছে না সাধারণ মানুষের। অভিযোগ রয়েছে রোগী পরিবহণের জন্য এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নেওয়ার জন্য অনেকেই ফোন করলেও এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার না থাকা বা নষ্ট থাকার কারণে অধিকাংশ সেবা প্রত্যাশিরাই কাংখিত সেবা পাননা। অযত্ন, অবহেলা আর কর্ত্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দিন দিন অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে এ্যাম্বুলেন্সগুলো নিজেই। কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্সগুলোর উপযুক্ত ব্যবহার না হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন মানুষ।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা মানুষের দোড় গোড়ায় পৌছে দেওয়া এবং সেবার মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্য ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর অর্ধীনে পত্নীতলা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে এ্যাম্বুলেন্স সুবিধা সম্বলিত ১টি করে ডিজেল চালিত (সিএনজি) প্রদান করা হয়। যার প্রতিটির বাজেট ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। ইউনিয়নে কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্স সরবরাহের উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধি এবং অপেক্ষাকৃত দ্রুত সময়ে উপজেলা বা জেলা সদরের হাসপাতালে জটিল রোগিকে বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের স্থানান্তর করা। এ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করার কিছুদিন ভালোই চলছিল এই সেবা। এরপর বছর খানেকের মধ্যে কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহণসহ নানা অভিযোগ ওঠে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

বর্তমানে উপজেলায় সরবরাহকৃত কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্সগুলো কোনটা অকেজো, কোনটা ভাড়ায় খাটছে আবার কোনটা চৌকিদারের জিম্মায় অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোর অবহেলার কারণে জরুরী এই এ্যাম্বুলেন্স সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নের মানুষ।

সরেজমিনে আরো দেখা গেছে আকবরপুর ইউনিয়নে কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্সটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে নজিপুর পৌর এলাকার সরদার পাড়া মোড়ের একটি মোটর সাইকেল মেকানিকের দোকানে।

এ বিষয়ে মেকানিক চাঁন সরদার জানান, এ্যাম্বুলেন্সটি নষ্ট হলে তিনি এটি মেরামত করে দেন। মেরামত খরচ ৫হাজার টাকা। এ্যাম্বুলেন্স কতৃপক্ষ মেরামত খরচ দেননা আর এ্যাম্বুলেন্সটিও নিতে আসেন না। এভাবেই গত ২বছর ধরে তাঁর দোকানের সামনে এই এ্যাম্বুলেন্সটি পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। এতে এ্যাম্বুলেন্সের মুল্যবান পার্টস নষ্ট হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। ইউপি সদস্য আবু সাঈদ বলেন, প্রায় ১বছর আগে এ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করতে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, নজিপুর ইউনিয়নের এ্যাম্বুলেন্সটি বর্তমানে ভাবিচা গ্রামের হাবেল নামে এক ব্যক্তি ব্যবহার করছেন।

মাটিন্দর ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য তৌফিকা জানান, যেদিন এ্যাম্বুলেন্সটি পরিষদে নিয়ে আসে শুধু সেদিন তিনি দেখেছেন। এরপর এ্যাম্বুলেন্স আর চোখে দেখিনি। আমাইড় ইউনিয়নের এক চৌকিদারের জিম্মায় আছে কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্সটি। প্রতিনিয়ত এটি ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা আবার নিয়ে যাওয়াই হলো এই চৌকিদারের কাজ।

পত্নীতলা ইউপি সদস্য মোকলেছার রহমান জানান, পরিষদের চৌকিদাররা নিজেরা যাতায়াতের জন্য এ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার করেন।

ঘোষনগর ইউনিয়নের সদস্য আতোয়ার জানান, এ্যাম্বুলেন্সটি পরিষদেই আছে।

পাটিচরা ইউনিয়নের সদস্য আব্দুস সালাম জানান, এ্যাম্বুলেন্সটি চালু আছে এবং সেটি রোগি বহন কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, এ্যাম্বুলেন্সটি চালু রয়েছে তবে ভাড়া বেশী পড়ায় মানুষ নিতে চায়না।

এ বিষয়ে কয়েকজন সচেতন এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তাঁরা জানায, কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্সগুলো কার্যত মানুষের কোন উপকারে আসছে না। আর এর মাধ্যমে ব্যহত হচ্ছে সরকারের উদ্দেশ্য। কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্সগুলোর অব্যবস্থাপনার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা কোনভাবেই নিজেদের দায় এড়াতে পারেন বলেও মতদেন তাঁরা।

এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, কোনো ইউনিয়নের এ্যাস্বুলেন্সগুলোকে রোগী নিয়ে আসতে দেখিনি হসপাতালে। অতিদ্রুত কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্সগুলো চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লিটন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, আমি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে এ্যাম্বুলেন্সগুলো সচল রাখার ব্যবস্থা করব। যাতে সাধারন মানুষ কমিউনিটি এ্যাম্বুলেন্স সেবায় থেকে বঞ্চিত না হয়। আর কোনো জনপ্রতিনিধি এটি নিজ বাড়িতে রাখতে এবং ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে পারবেনা।

স/অ