জীবন যুদ্ধে হার না মানা রাজশাহীর নারী সবজি বিক্রেতা ‍মুন্নি!

নূপুর মাহমুদ:

রাজশাহীর আন্যতম ব্যস্ততম জায়গা সাহেব বাজার মাস্টার পাড়া। যেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে সব ধরনের কাঁচা সবজির পাইকারি ও খুচরা বেচা-কেনা। বিশেষ করে দিনের বেলায় মানুষের পদচারণা ও হাক-ডাকে মুখরিত হয়ে থাকে স্থানটি। আর ব্যস্ততম এই জায়গায় হাটতেই হাজারো মানুষের কোলাহলে ভেসে আসে এক নারীর কণ্ঠ।

‘গাজর ১০ টাকা, বেগুন ১৫ টাকা, চরের টাটকা বেগুন মামা, লিয়ে যান…।’

নারীর এমন আহবানে স্বাভাবিকভাবেই ক্রেতাদের চোখ ফেরে তার দিকে। তিনি আর কেউ না, সবজি বিক্রেতা মুুন্নি। চোখে মুখে তার সংগ্রামের ছাপ স্পষ্ট। পাশেই তার শিশুপুত্র মুন্না ক্রেতাদের দিকে প্রদর্শন করে যাচ্ছে সবজি।

স্বামী সলেমানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ১১ বছর ধরেই মুন্নির সংসার চলছে এই সবজি বিক্রি করেই।

কথা হয় নারী সবজি বিক্রেতা মুুন্নি খাতুনের (২৬) সাথে। তিনি সিল্কসিটি নিউজকে জানান, সন্তানকে রেখে স্বামী চলে যাওয়ার পর অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। চোখে অন্ধকার দেখছিলেন। তবুও হতাশ হননি। নামেন নি ভিক্ষাবৃত্তির মত পেশায়। স্বল্প পুঁজির ব্যবসা হিসেবে বেছে নিয়েছেন সবজির ব্যবসা। তিনি পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে খুচরা বিক্রি করে হাল ধরেন সংসারের।

প্রতিদিনের সবজি বিক্রি করে যে অর্থ লাভ হয় তা দিয়েই সন্তানকে নিয়ে চলছে তার সংসার।

মুন্নির সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, ১৪ বছর বয়সে তার বাবা বিয়ে দিয়ে দেন তার। বিয়ের কিছুদিন পরই বাবা মারা যান। এরপর একটি ছেলে সন্তানের মা হন তিনি। সন্তানের আড়াইমাস বয়সে তার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে তাকে ছেড়ে চলে যান।

এরপর শিশু সন্তানকে সাথে নিয়ে চলে আসেন মায়ের কাছে। তারা মা-মেয়ে দুজনই কিছুদিন মানুষের বাড়িতে ঝি-য়ের কাজ করেন। কিছু পুঁজি হলে সেই টাকায় নগরীর মাস্টারপাড়া থেকে পাইকারি সবজি কিনে মতিহার থানার বৌবাজার এলাকায় খুচরা বিক্রি করতে শুরু করেন। এতে ভালো লাভ হতে থাকে তাদের।

আর এভাবেই আরেকটু পুঁজি বাড়লে মাস্টারপাড়ায় সবজি কিনে সেখানেই বিক্রি শুরু করেন মুন্নি। এতে করে এই পেশাতেই নিজেকে গুছিয়ে নেন মুন্নি। হয়ে ওঠেন রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্রের একজন নারী সবজি বিক্রেতা। 

মুন্নির এই কাজে তাকে সহযোগিতা করে চলেছে তার ছেলে। যা কে নিয়ে এখন হাজারো স্বপ্ন দেখছেন মুন্নি।

তিনি বলেন, ‘অভাবের কারণেই শিশুর জন্য আলাদা সময় দিতে পারি না, তাই পড়াশোনা ঠিকমতো হচ্ছে না। তবে তার ইচ্ছে ছেলেকে পড়াশুনা শেখানো। সমাজে মানুষের মতো মানুষ করা।’

আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। তবে ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার রাজশাহীর নারীদের খোঁজ নিতে গিয়ে সিল্কসিটি নিউজ জানতে পারে এই নারী সবজি বিক্রেতার এক করুন কাহিনী। হার না মানা এক নারীর গল্প।

সহায় সম্বলহীন যিনি  হাল ধরেছেন সংসারের। জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছেলেকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন নিয়ে বেছে নিয়েছে সবজি বিক্রির পেশা। হয়ে ওঠতে পারেন ঝড়ে পরা অনেক নারীর আত্মকর্মসংস্থানের উদ্দিপকও।

স/অ