ধানের জেলা হিসেবে খ্যাত নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ধানচাষিরা রোপা-আমন মৌসুমে ধানের দাম ভালোই পেয়েছেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধানের খড়ের বাড়তি দাম। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের খড়ের দামও বেশি। বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই ভ্যান, ট্রাক আর ভটভটিতে করে খড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবছর আমন মৌসুমে উপজেলায় ৩০ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। ১ হেক্টর সমান ৭ দশমিক ৪৭ বিঘা। অর্থাৎ বিঘার হিসাবে ২ লাখ ২৭ হাজার ২৩৭ বিঘা। ১ বিঘা জমিতে গড়ে ১ কাউন (১২৮০ আঁটি) খড় উৎপাদন হয়। ১ কাউন খড় বর্তমানে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ।
গত কয়েকদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খড় বেচাকেনার চিত্র দেখা। গাবতলী বাজার ব্রিজে একসঙ্গে পাঁচটি খড়ের গাড়ি পাওয়া যায়।
ব্যবসায়ীরা গাড়ি থামিয়ে চা খাচ্ছিলেন। সেখানে কথা হয় নাটোরের মো. আব্দুল জব্বারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার ভটভটিতে (১০ কাউন) ১২ হাজার ৮০০টি খড়ের আঁটি রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তিনি এই খড় কিনে নিয়েছেন। প্রতি কাউনের দাম পড়েছে ৪ হাজার ৬০০ টাকা। সেই হিসাবে এক আঁটি খড়ের দাম পড়েছে সাড়ে চার টাকা। একই কথা বললেন মাগুরার ব্যবসায়ী মো. সাখাওয়াত।
ভাবিচা গ্রামের কৃষক শ্যামল কৃষ্ণ রায় জানালেন, আমি গত কয়েকদিন আগে ৩ কাউন খড় বিক্রয় করেছি। গত বছরের চাইতে এবার দাম বেশি পেয়েছি।
একই গ্রামের কৃষক সুবোধ সরকার জানালেন, আমি এবার বর্গা দেওযা জমি থেকে ব্রি- ৫১ ধানের খড় পেয়েছি। আমার বাড়িতে কোনো গবাদিপশু নাই। তাই সব খড়ই বিক্রি করে দিয়েছি।
নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, নিয়ামতপুর উপজেলায় এবার আমন মৌসুমে স্বর্ণা ৫; ব্রি ধান- ৫১,৯০,৯৫,৯৩; বিনা- ৭, ১৭, ৩৪, ৪৯ এবং বিন্নাফুলি জাতের ধান রোপণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে ব্রি-৫১,৯৫ ও স্বর্ণা ৫ জাতের ধানের খড় খুব ভালো হয়। খড়ের জন্য কৃষকেরা এই দুই জাতের ধান বেশি রোপণ করেন। এই খড় প্রধানত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই উপজেলা ধান প্রধান হওয়ায় খড়গুলো স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে কৃষকেরা ৬০-৭৫ ভাগ খড় বিক্রি করে দেন। তিনি আরও জানান, দেশের অনেক জায়গায় বন্যা হওয়ার কারণে খড় নষ্ট হয়ে যায়। তখন খড়ের জন্য চাহিদা বেড়ে যায়। তখন কৃষকেরা বেশি দামে এই খড় বিক্রি করেন। তাই ধান ও খড়—দুটোই কৃষকের জন্য সমান লাভজনক