সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
ইরান আক্রমণের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রস্তুত করেছে ইসরাইল। কয়েক দশক ধরে করা এ হামলা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব অস্ত্র তৈরি করা হয়েছে। এসব অস্ত্র আসলে কতটা অত্যাধুনিক তা জানা গেছে পরবর্তীতে দেশটি যখন অন্য দেশের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি করতে শুরু করে।
ইসরাইলের নিজেদের মতো করে বিশেষায়িত করে নেওয়া এক স্কোয়াড্রন অত্যাধুনিক এফ-১৫ আই ও এফ-১৬ আই এর চারটি যুদ্ধবিমান আছে। এই যুদ্ধবিমানগুলো যেতে আসতে টানা চার ঘণ্টা আকাশে উড্ডয়ন করতে পারে।
বিশেষ করে এ বিমানগুলোর জন্য বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন এমন এক ধরনের ফুয়েল ট্যাংক বানিয়েছে। ফলে বিমানগুলো দীর্ঘ উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। তবে বেশি জ্বালানির জন্য ফুয়েল ট্যাংক তৈরি করা হলেও এগুলোর অ্যারোডাইনামিকস বা রাডারের কার্যক্ষমতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি।
বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর খবর ইঙ্গিত করে যে, ইসরাইল নিজের প্রযুক্তিতে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের জন্য বিচ্ছিন্নযোগ্য জ্বালানি ট্যাংক তৈরি করেছে। তবে এরপরও স্টেলথ ক্ষমতা বা নিজেতে গোপন রাখার ক্ষমতা বজায় রেখে ইরানে পৌঁছাতে সক্ষম।
গত সেপ্টেম্বরে ইসরাইলের এফ-১৫ যুদ্ধবিমান নিজ দেশ থেকে ১৮০০ কিলোমিটার দূরে ইয়েমেনে গিয়ে হুতি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এ হামলার বিষয়টি ইসরাইলের ‘প্রয়োজন বিবেচনায় উদ্ভাবন’ বা ইম্প্রোভাইজেশন দক্ষতারই ইঙ্গিত দেয়।
তবে ইয়েমেনে হুতিতে হামলা চালানো যতটা সহজ ছিল, ইরানে হামলা চালানো ততটা সহজ হবে না। কারণ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উভয়ই মাটির অনেক গভীরে। তবে দেশটির তেল স্থাপনা তুলনামূলক অরক্ষিত। এছাড়া ইরানের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আছে, যা রাশিয়ার তৈরি এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সঙ্গে মেলে। এ ব্যবস্থার ইসরাইলের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আটকানোর সক্ষমতা আছে।
ইরানের দাবি, তারা এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেরাই তৈরি করেছে কিন্তু এখনো সেই অর্থে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোনো শক্ত পরীক্ষার মুখে পড়েনি।
গত এপ্রিলে ইসরাইল যখন ইরানের ইস্পাহানে হামলা চালিয়েছিল তখন এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোনো এক কারণে সক্রিয় হয়নি। এর বাইরে ইরানের চার যুগ পুরোনো মিগ-২৯ ও যুক্তরাস্ট্রের এফ-১৪ মডেলের যুদ্ধবিমান আছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পরও এই যুদ্ধবিমানগুলো সক্রিয় আছে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীতে।
এসব চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বিগত ২০ বছর ধরে ইরানে সম্ভাব্য হামলার ছক কষেছে। বিনিয়োগ করেছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ও শেকেল। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, ইসরাইল এমন কিছু অস্ত্র তৈরি করেছে নিজস্ব প্রযুক্তি যা যুক্তরাষ্ট্র বিক্রি করতে চায়নি। ইসরাইলের এসব প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও নেই।
আকাশ থেকে নিক্ষেপণযোগ্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র
একুশ শতকের শুরুর দিকে ইসরাইল দুটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করে। যেগুলো যুদ্ধবিমান বিমান থেকে নিক্ষেপ করা যায়। এ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সুপারসনিক গতিতে অর্থাৎ শব্দের গতির চেয়েও বেশি গতিতে চলতে সক্ষম। যার ফলে এগুলোকে ইন্টারসেপ্ট করার সুযোগ কম থাকে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
র্যাম্পেজ ক্ষেপণাস্ত্র
ইসরাইলের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো। দামের দিক থেকেও এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো খুবই সাশ্রয়ী। মাত্র কয়েকশ’ ডলার খরচ করেই একেকটি র্যাম্পেজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা সম্ভব। ইসরাইল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি এবং দেশটির রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমস মিলে এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে।
প্রাথমিকভাবে এগুলোকে ভূমি থেকে নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত করা হলেও পরে এগুলোকে আকাশ থেকে নিক্ষেপের জন্যও মডিফাই করা হয়। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পাল্লা বেড়ে গেছে। একাধিক নেভিগেশন সিস্টেম থাকায় এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা অনেক বেশি নির্ভুল।
মাত্র ৪ দশমিক ৭ মিটার লম্বা এবং ৩০ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার পরিধির এই ক্ষেপণাস্ত্রের ভর মাত্র ৫৪০ কেজি। এছাড়া এগুলো ১৫০ কেজির সমান ভরের বিভিন্ন ওয়ারহেড বহন করতে পারে। গঠনগত কারণে এর পক্ষে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়া অনেকটাই সহজ। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে ইসরাইলের এফ-১৫, এফ-১৬ এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা সম্ভব।
সূত্র: যুগান্তর