মঙ্গলবার , ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ | ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

মূল্যে লাগাম টানা

Paris
জানুয়ারি ১৬, ২০২৪ ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

সরকার নতুন নয়, চ্যালেঞ্জগুলোও নয়। বলা যায় মন্ত্রিসভায় কিছু নতুন মুখ যুক্ত হয়েছেন কেবল। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এসেছেন নতুন প্রতিমন্ত্রী আর অর্থতে এসেছেন কূটনীতিক আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আরও অনেক নতুন মুখই আছেন, পুরনো কয়েকজনের মন্ত্রণালয় বদলও হয়েছে। তবে সবার দৃষ্টি অর্থনীতির দিকে এবং অর্থনীতির একেবার গোড়ায়— দ্রব্যমূল্যের দিকে।

টানা দশ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে আছে। সাধারণ নাগরিকদের সব আলোচনায় এখন সবার উপরে স্থান পাচ্ছে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক দাম। এ অবস্থা চলছে সেই করোনাকাল থেকে। মূল্যস্ফীতির হার গত ডিসেম্বরে ৮ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনার একটা লক্ষ্য ছিল। তবে তা অর্জিত হয়নি। সামষ্টিক অর্থনীতির সব সূচকই ভাবনার কারণ হলেও মূল্যস্ফীতিকেই ধরা হচ্ছে সরকারের এক নম্বর চ্যালেঞ্জ হিসেবে। সরকার নিজেও সেটা অস্বীকার করছে না। নতুন মন্ত্রীরাও সে কথাই জোর দিয়ে বলছেন। নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, স্মার্ট ব্যবস্থাপনায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে, যদিও অর্থমন্ত্রী বলছেন রাতারাতি সবকিছু হয়ে যাবে না। তবে সবাই মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার একটা প্রচেষ্টা হয়তো সরকার দৃশ্যমান করবে।

এই লেখা যখন লিখছি তখনই খবর ছাপা হলো যে, হঠাৎ বাড়ছে চালের দাম। মোকামগুলোতে চালের দাম বাড়ার পর রাজধানী ডাকাসহ সারাদেশেই এখন চালের দাম বাড়তির দিকে। চাল বিক্রেতারা বলছেন, মিল মালিকরা নতুন বছরে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে ধানের সরবরাহ কমায় বেড়েছে চালের দাম। এই যুক্তি পাল্টা যুক্তি সব সময় আমরা দেখি, শুনি, তবে সাধারণ মানুষ কোনো কূলকিনারা পায় না।

আবার দেখছি, নির্বাচনের পর রাজধানীর বাজারে গরুর মাংসের দাম বেড়ে গেছে। নির্বাচনের মাসখানেক আগে মাংসের ব্যবসায়ী ও খামারিরা মিলে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন। ফলে বাজারে অন্যান্য মাংস ও মাছ মিলিয়ে প্রাণিজ আমিষের দামও কিছুটা কমে। কিন্তু নির্বাচন শেষে গরু সরবরাহে সংকটের কথা বলে ব্যবসায়ীরা মাংসের দাম আবার বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই যখন অবস্থা তখন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর স্মার্ট ব্যবস্থাপনা কী হয় সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই।

বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের অনেক সমস্যা। তবে যে সমস্যা এই মুহূর্তে রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, তার নাম হলো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। সামগ্রিকভাবে মানুষের আয় সেভাবে বাড়ছে না, কিন্তু তার প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। শুধু খাদ্যপণ্য নয়, কাগজের খরচ বাড়ায় লেখাপড়ার খরচ বেড়েছে, জ্বালানি পণ্যের দাম না নামায় সব ধরনের পরিবহন খরচ বেড়েই রয়েছে যা পণ্যের দামও বাড়াচ্ছে, ওষুধ ও চিকিৎসা খরচও ঊর্ধ্বগতিতে ছুটছে।

মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারটা অনেকদিন ধরেই খারাপ অবস্থায় আছে। পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাওয়ায় টাকার অঙ্কে মানুষের আয় অপরিবর্তিত থাকলেও তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। আবার করোনাসহ সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ব্যক্তি খাতে অনেক ছাঁটাই হয়েছে, বেতন কর্তনের ঘটনা ঘটেছে, ডলার সংকটে ব্যবসা কমেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসা চরম সংকটে পড়েছে। বেশির ভাগ মানুষের আয়ের হার মূল্যবৃদ্ধির হারের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। এটা ঠিক যে, দাম সব সময় কমিয়ে রাখা যায় না, দেশের অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে নিয়ন্ত্রিত মাপে মূল্যবৃদ্ধি হওয়া প্রয়োজন।

এই নিয়ন্ত্রণটাই নেই কোথাও। গুটিকয়েক কোম্পানির হাতে জিম্মি পুরো পণ্যবাজার। এদের মুনাফাখোরি মনোবৃত্তি, বাজারে এদের একচেটিয়াত্ব এবং এদের প্রতি নীতিনির্ধারণী জায়গা থেকে নানা প্রশ্রয় বাজারকে অস্থির করে রেখেছে। সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা খোদ সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীও অস্বীকার করেননি।

সরকারের নীতির জায়গা থেকে দেখলে প্রথম কাজ হবে জ্বালানি তেলের দাম কমানো। ফলে পণ্য পরিবহনের খরচ কমবে, যার প্রভাব বাজারে পড়বে। সরকার কি তা করবে? মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জ্বালানি তেলের দাম কমাতেই হবে। কিন্তু সরকার তা করছে না। সরকার বলছে, সে চলছে বাজার অর্থনীতির পদ্ধতিতে, কিন্তু জ্বালানি তেল ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে। আমদানি করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে সরকার যে দাম ঠিক করে দেয়, সেই দামেই ভোক্তাদের তা কিনতে হয়। অর্থাৎ তেলের দাম নির্ধারিত হয় সরকারি সিদ্ধান্তে, বাজারের প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নয়। বিপিসির অদক্ষতা আর লোকসানের খেসারত দিচ্ছে জনগণ।

২০২১ সালের নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম ছিল ৮৪ মার্কিন ডলার। সরকার গত বছরের আগস্টে পণ্যটির দাম সাড়ে ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ বাড়ায়। তখন বৈশ্বিক বাজারে প্রতি ব্যারেলের দাম ছিল ৯৪ ডলার। দাম বাড়ানোর পর সরকার বারবারই বলেছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করা হবে। কিন্তু বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এটি দ্রব্যমূল্যে বড় প্রভাব রেখে চলেছে। নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আর অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি এদিকে কীভাবে যায় সেটা দেখতে হবে।

পণ্য যদি ব্যাপক হারে আমদানি করা যায় তা হলে বাজারের পণ্যমূল্য কমে। এটি নানা সময় আমরা দেখেছি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আমদানি করার মতো প্রয়োজনীয় ডলার নেই এবং ডলারের দামও বেশি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়াবে কিনা বা বাজেট ব্যয় কমানোর মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নেবে কিনা আমরা জানি না। এটুকু বুঝতে পারছি যে, দ্রব্যমূল্য এক নম্বর মাথাব্যথা হলেও দাওয়াই সময়সাপেক্ষ।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা : প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন

 

 

সর্বশেষ - মতামত