পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের নেপথ্যে রাঘোব বোয়ালরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অধিনে সম্প্রতি যেসব নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে তার অধিকাংশতেই আগে-ভাগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ উঠেছে। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে রেলওয়ের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা সরাসরি এই অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়েছেন বলেও নিশ্চিত করেছে রেলওয়ের একাধিক সূত্র।

 

  • তবে সর্বশেষ শনিবারে অনুষ্ঠিত রেলওয়ে নিরপত্তা বাহিনীর এসএসআই পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ও উত্তর ফাঁসের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। আজ সোমবার এ কমিটি গঠন করা হতে পারে বলেও ওই সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

 

গতকাল রবিবার বড়দিনের ছুটিতে অফিস বন্ধ থাকায় বিষয়টি নিয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ পায়নি। এ নিয়ে খবর প্রকাশের পর ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মাঝে।

 

  • এদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সূত্রের দাবি, বুকিং সহকারী, টিসি, গার্ড, লোকমাস্টার  থেকে শুরু করে সর্বশেষ গত শনিবার অনুষ্ঠিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এসআই ও এসআই পদের নিয়োগ পরীক্ষা। আর এসব পরীক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। প্রতিটি নিয়োগের আহ্বায়ক এই সমস্ত অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

 
সূত্রটি আরো জানিয়েছে, নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নিকট থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা করে চুক্তির বিনিময়ে প্রশ্নপত্র আগে-ভাগেই ফাঁস করা হচ্ছে। আবার সেটিতে ব্যর্থ হলেও পরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার কক্ষে বসেই পরীক্ষকদের দিয়ে নিজেদের প্রার্থীদের বেশি নম্বর নিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নিয়োগের নামে বাণিজ্যে নেমেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা।

 

ওই সূত্রটি দাবি করেছে, শুধু নিয়োগ বাণিজ্য করেই একজন কর্মকর্তা মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে দুই দফা পদন্নতি নিয়ে আবার রাজশাহীতে এসেছেন। সম্প্রতি রাজশাহীতে যোগদান করে ওই কর্মকর্তা একাই তিনটি পদের নিয়োগের আহ্বায়ক হয়েছেন। তিনি নগরীর অভিজাত ভদ্রা আবাসিক এলাকার পাশে একটি জায়গাও কিনেছেন কয়েকটি কোটি টাকা ব্যয় করে। এটিও করেছেন তিনি নিয়োগ বাণিজ্যের অর্থ দিয়ে।

 
রেলওয়েতে কর্মরত সূত্রগুলো আরো বলছে, সর্বশেষ গত শনিবারের নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান কমাড্যান্ট আসাবুল হক সরাসরি জড়িত। তিনিই ওই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল নায়ক। আর তাঁর ইন্ধনে কাজটি করে দিয়েছেন চট্টগ্রামে প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে নিরপত্তা বাহিনীর হাবিলদার নুরুল আলমসহ ওই টিমের একাধিক সদস্য।

 

  • তাঁরা যৌথভাবে এ কাজটি করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নিকট থেকে। এরপর ওই প্রশ্নপত্র এবং তার উত্তরের ফটোকপি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য প্রার্থীদের মাঝে।  

 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রার্থী সিল্কসিটি নিউজকে জানান, তিনি যে প্রার্থীর নিকট থেকে ফটোকপিটি সংগ্রহ করেন, তাঁকে দিতে হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। ওই প্রার্থী আরো কয়েকজনের নিকট ওই ফটোকপি বিক্রি করে দিয়ে তার টাকা তুলে নেওয়ার পরেও আরো অতিরিক্ত কয়েক লাখ টাকা বাণিজ্য করেছেন।

 

  • এভাবেই বেশ কয়েকজন প্রার্থী এসএসআই পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিক্রি করেছেন রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের যোগসাজসেই। বিনিময়ে ওই কর্মকর্তারাও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

 
একই প্রক্রিয়ায় সম্প্রতি অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্রশ্নপত্র ও উত্তর আগে-ভাগেই নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের কাছে সরবরাহ করেছেন রেলওয়ের নিয়োগ কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্তারা। আর প্রতিটি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র এতো কঠিন করা হয়েছে যেন কেবল প্রশ্নপত্র পাচারকারীরাই পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন। অন্য কেউ পাশ করতে না পারেন।

 

  • ওই সূত্রটি আরো জানান, এমপি, মন্ত্রীসহ প্রভাবশালীদের তদবির থেকে রক্ষা পেয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতেই সম্প্রতি এই প্রক্রিয়াটি শুরু করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন নিয়োগ কমিটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আর এ নিয়ে রেলওয়েতেও চলছে চাপা ক্ষোভ। কিন্তু এতোদিন হাতে-নাতে প্রমাণ দিতে না পারায় তারা বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি।

 
প্রসঙ্গত, গত ২১ ডিসেম্বর পশ্চিমাঞ্চলে রেলের প্রধান কার্যালয় রাজশাহী থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ড্যান্ট (পাকশী) আব্দুস সালাম ও এসআই হাসান শিহাবুল ইসলামের নেতৃত্বে কড়া পাহারায় নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পূর্বাঞ্চল কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

 

ওই টিমে আরো ছিলেন হাবিলদার নুরুল আলম, সিপাহী শামীম পারভেজ ও সুমন হোসেন এবং নাসিম। কিন্তু প্রশ্নপত্র রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাবার পথেই ফাঁস হয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠে। এরপর গত শনিবার দুপুরে ওই পদের পরীক্ষা অনুষ্টিত হয়।

স/আর