পুঠিয়ায় এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ, বিপাকে নির্যাতিত নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর পুঠিয়া থানার এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অর্থের বিনিময়ে এক নির্যাতিত নারীর মামলায় আসামিকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে নাম প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন বলে ওই নারী শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তবে সুরাইয়া পারভীন নামের ওই ভিকটিম মামলার প্রতিবেদনটি প্রত্যাক্ষণ করে নারাজি দিবেন বলে জানিয়েছেন। গতকাল তিনি সিল্কসিটিনিউজের অফিসে এসে এ অভিযোগ করেন। রাশেল ওই আসামি রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল জোনের খালাসি পদে চাকরি করেন। তিনি বর্তমানে পাবনার ঈশ্বরর্দী স্টেশনে ফুয়েল সেকশনে কর্মরত রয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ২৮ বছর বয়সেই একে একে তিনটি বিয়ে করেছেন পুঠিয়ার দিঘলকান্দি গ্রামের বাসিন্দা রাশেল ইসলাম। প্রতিটি বউকেই যৌতুকের দাবিতে তিনি নির্যাতন করেছেন। তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রথম স্ত্রী আত্মহত্যা করেছিলেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নিলেও তাঁকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের পর তালাক দিয়েছেন রাশেল।

সর্বশেষ তৃতীয় স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের পর বাড়ি থেকে বের করে দেন। এমনকি বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পরে সেই স্ত্রীকেও তালাক দিয়েছেন। তৃতীয় স্ত্রী সুরাইয়া পারভীন থানায় মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে গলাকেটে হত্যারও হুমকি দিয়েছেন। সেই রাশেলকেই বাাঁচাতে পুলিশ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছেন। এমনকি মামলাটিই সাজানো বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন। গত ১১ নভেম্বর ওই প্রতিবেদনটি দিয়েছেন পুঠিয়া থানার এসআই আব্দুল মজিদ।

মামলার বাদী সুরাইয়া পারভীন অভিযোগ করে বলেন, এসআই মোট অংকের অর্থের বিনিময়ে আসামিকে বাঁচাতে মামলাটি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। এ কারণে এসআই মামলা থেকে আসামির নাম প্রত্যাহারের অসুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। আসামি রেলওয়েতে চাকরি করে বলে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমার প্রতি যে অন্যায় ও নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি আমলে নেয়নি পুলিশ। আমি এর বিচার চাই।’

 

ওই নারী বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আমার যে টাকা জমানো ছিলো, সবই ছলেবলে কৌশলে নিয়ে নিয়েছে রাশেল। এখন মামলা চালাতে গিয়েও আমাকে বিপাকে পড়তে হবে। তাহলে এখন কোথায় যাবো বিচারের আশায়?

এদিকে পুঠিয়া থানায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে সুরাইয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় পুঠিয়ার দিঘলকান্দি গ্রামের বাসিন্দা রাশেল ইসলামের। বিয়ের সময় রাশেল ইসলামকে ছয় লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছিলেন সুরাইয়ার পরিবার। সেই টাকা দিয়ে রাশেল রেলওয়েতে চাকরি নেন। কিন্তু চাকরি পাওয়ার বদলে যান রাশেল। এরপর আবারো যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করতে থাকেন সুরাইয়াকে। কিন্তু পুনরায় যৌতুক না দেওয়ায় রাশেল গত ১৫ জুন স্ত্রীকে সুরাইয়াকে নির্যাতনের পর বাড়ি থেকে বের করে দেন।

এরপর সুরাইয়া গত ২৯ জুন পুঠিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় এখন পুলিশের খাতায় পলাতক আসামি রাশেল। কিন্তু মামলা দায়েরের পর ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি স্ত্রীকে জবাই করার হুমকি দিয়েছেন।

সম্প্রতি মোবাইলে দেওয়া সেই হুমকির সময় রাশেল তাঁর স্ত্রীকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আর কোথাও যদি অভিযোগ করিশ, তাহলে তোকে জবাই করে ফেলবো। আমার চাকরি যদি চলে যায়, তাহলে তোকে আমি ছাড়বো না।’

সুরাই বলেন, ‘বিয়ের সময় নানা প্রলভোনে রাশেল আমাকে বিয়ে করে। আমি তাকে সবকিছু বিক্রি করে ছয় লাখ টাকা দিয়েছি। টাকা গ্রহণের তার লিখিত ডকুমন্টেও আছে আমার কাছে। কিন্তু সে আরও যৌতুকের আমার সঙ্গে এখন আর সংসার করতে চাই না। আমি এই প্রতারণার বিচার চাই।’

অন্যদিকে এসআই আব্দুল মজিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তদন্তে যা উঠে এসেছে আমি সেটিই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। তবে আসামির দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কোনো সুযোগ নাই।