করোনার টিকা নিয়ে ধাঁধায় বিজ্ঞানীরা

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ মহামারি ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম। এ ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে চলছে রাতদিনে গবেষণা। ইতোমধ্যে ১০৭টি ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে। সফলতার পথে ৬টি।

বিন্তু বিজ্ঞানীরা বিপাকে পড়েছেন অন্য জায়গায়। এ ভাইরাস ক্রমান্বয়ে রূপ পরিবর্তন করছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা কভিড-১৯ রোগটির জন্য দায়ী ভাইরাসের শতাধিক পরিবর্তন চিহ্নিত করেছেন।

তবে কেন মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি। ফলে টিকা আবিষ্কার হলেও তার কার্যকারিতা নিয়ে নিজেরাই সন্দিহান।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চরিত্র পরিবর্তন করে ভাইরাস কী করে এবং চরিত্রের রূপান্তরগুলো রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি বা সংক্রমণে কী ভূমিকা রাখে?

বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক গবেষণায় একটি রূপান্তরের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘ডি৬১৪জি’ প্রভাব বিস্তার করে রোগটিকে আরও সংক্রমিত করে তুলতে পারে। যদিও অন্যান্য বিজ্ঞানী এ বিষয়ে মতামত দেননি এবং আনুষ্ঠানিকভাবে গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়নি।

দ্য লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি ইন নিউ মেক্সিকোর গবেষকরা দ্য গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের সমস্ত ইনফ্লুয়েঞ্জার তথ্য ব্যবহার করে পরিবর্তন শনাক্ত করেছেন, ভাইরাসটি সর্বোচ্চ আক্রমণের পর একটি নির্দিষ্ট আকার নিচ্ছে। গবেষকরা উল্লেখ করছেন, এ বিশেষ রূপান্তর ইঙ্গিত করে, দ্রুত রোগটিকে বাড়িয়ে তুলছে। কিন্তু এটিও স্পষ্ট কিছু না। এই গবেষক দল যুক্তরাজ্যের শেফিল্ডের করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। যদিও তারা আক্রান্তদের দেহে আরও অসংখ্য নমুনা পেয়েছেন। তারা অসুস্থ হয়েছেন কিংবা দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন এমন প্রমাণ পাননি গবেষকরা।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) আরেক গবেষণায় ভাইরাসটির ১৯৮ ধরনের রূপান্তর পাওয়া গেছে। এ গবেষণাপত্রের লেখক অধ্যাপক ফ্রানকোইস ব্যালোক্স বলেন, নিজেদের মধ্যে রূপান্তর মন্দ কিছু না। সার্স-কভ-২ নিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত অথবা ধীরগতিতে পরামর্শ দেওয়ার মতো কোনো উপাদান নেই। ফলে এখনো বলা সম্ভব হচ্ছে না, এটি কতটা প্রাণঘাতী এবং সংক্রামক।

দি ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর গবেষকরা দেখেছেন, বিভিন্ন প্রজাতির ভাইরাসের মধ্যে একই পরিবর্তন হচ্ছে না। ফলে তাদের উপসংহার, একটি প্রজাতির ভাইরাস বর্তমানে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে।

টিকা উন্নয়নে ভাইরাসের ক্ষুদ্র পরিবর্তনগুলো পর্যবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ফ্লু ভাইরাস দ্রুত রূপান্তর ঘটায় বলে প্রতি বছর এটি মোকাবিলায় টিকা উন্নয়নেও সমন্বয় করতে হয়। কিন্তু করোনা প্রজাতির ভাইরাসের দ্রুত পরিবর্তন ঘটায় বিজ্ঞানীরা টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন। ভাইরাসের জিনোমের পরিবর্তনের পর্যাপ্ত তথ্যও নেই তাদের কাছে।

ইউসিএলের গবেষণাপত্রের সহ-লেখক ড. লুসি ভ্যান ড্রপ বলেন, ‘ওষুধ আবিষ্কারে জিনোম বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ। আমি জিনোম ভালোবাসি, কিন্তু এটি যা আছে, সেটুকুই বলতে পারে।’

সুত্রঃ সময়