সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
জীর্ণশীর্ণ মানুষগুলোর সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনি। তাই রাত বাড়তেই রাজ্যের ঘুম নামে চোখে। পড়ে পড়ে ঘুম শেষে ভোর বিহানে জাগেন। এর পর চোখেমুখে খাবার গুঁজে ছুট। চলে যান হরেকরকম কর্মস্থলে।
পোশাকশ্রমিক, দোকান কর্মচারী, রিকশাচালক, বাস হেলপার বা ফেরিওয়ালার পেশা- এসব মানুষের। ঠিকানা রাজধানীর মিরপুরের ইলিয়াস আলী মোল্লা বস্তি।
নিত্যদিনের মতো রোববারও ঘুমিয়েছিলেন এ বস্তির হাজারো মানুষ। কিন্তু সোমবার ভোর ৪টায় তাদের ঘুম ভাঙে আর্তচিৎকারে। ঘুম জড়ানো চোখে দেখেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে আশপাশের মানুষ ছুটে আসেন। যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট। সকাল ৮টার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হন তারা। কিন্তু চার ঘণ্টায় পুড়ে গেছে প্রায় আট হাজার ঘর।
এ সময় জীবন বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন বস্তিবাসী নারী-পুরুষ ও শিশুরা। আতঙ্কে আর শেষ সম্বল হারানোর কষ্টে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। বস্তিবাসীর আহাজারিতে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
বস্তির বাসিন্দা আবদুর রহিম। এখানে স্ত্রী-সন্তান নিয়েই থাকতেন। তিনি জানান, আগুন লাগার পর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোনো রকমে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়েছি। ঘরের কিছুই বের করতে পারিনি। সব পুড়ে গেছে।
সম্প্রতি স্বামীর সঙ্গে ঢাকা আসেন মর্জিনা বেগম। কম টাকায় ইলিয়াস আলী মোল্লা বস্তিতে একটি কক্ষ ভাড়া নেন। নতুন সংসার শুরু করতে না করতেই সবকিছু পুড়ে গেল তার। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই মর্জিনার।
নিজের পোড়াঘরের সামনে আহাজারি করছিলেন রোজিনা নামে এক পোশাককর্মী। দীর্ঘদিন ধরেই এ বস্তিতে আছেন তিনি। তিল তিল করে সংসার সাজিয়েছেন। অনেক আসবাবপত্র কিনেছেন। কিন্তু আগুনে তার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে বলে বিলাপ করতে থাকেন তিনি।
রোজিনার মতো আগুনে নিঃস্ব হয়েছেন খোরশেদ। মুদি ব্যবসায়ী খোরশেদের ঘরে জমানো কিছু টাকা ছিল। সেই টাকা তার পুড়ে শেষ হয়েছে।
মিরপুরের এ বস্তিটিতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মানুষ থাকতেন। আগুন লাগার কারণ এখনও জানা যায়নি। বস্তিবাসীর দাবি, নাশকতা করে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। যুগান্তর