কথায় বলে, মরা হাতির দাম নাকি লাখ টাকা! ফ্রান্সের লিঁও শহরে সে দাম কোটি ছাড়াল। সম্প্রতি একটি নিলামে সমস্ত অনুমান, হিসেবনিকেষ ভেঙে দিয়ে একটি লোমশ ম্যামথের কঙ্কালের দাম উঠল প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ ইউরো। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪ কোটি টাকারও বেশি।

কঙ্কালটি কিনেছে জলনিরোধক পরিষেবা দেয়, এমন একটি বেসরকারি সংস্থা। তাদের ‘লোগো’ হচ্ছে ম্যামথ। তাই প্রতীক হিসেবে দফতরের লবিতে কঙ্কালটিকে সাজিয়ে রাখা হবে, জানিয়েছেন সংস্থার সিইও।

দশ বছর আগে উত্তরপশ্চিম সাইবেরিয়ার চিরতুষারাবৃত অঞ্চল থেকে উদ্ধার হয়েছিল বিশালাকৃতি পুরুষ ম্যামথটির কঙ্কাল। পেয়েছিলেন এক শিকারি। নিজের বাড়িতেই কঙ্কালটিকে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন তিনি। পুরু বরফের নীচে চাপা পড়ে থাকায় কঙ্কালের ৮০ শতাংশই অবিকৃত ছিল। বাকিটা রজন দিয়ে জুড়ে ম্যামথের সম্পূর্ণ রূপ দেওয়া হয়েছে। কঙ্কালটি পরীক্ষা করে গবেষকরা দেখেছেন, ম্যামথটির দাঁত অতিমাত্রায় ক্ষয়ে গিয়েছিল। যা দেখে তাঁদের অনুমান, খাবারের অভাবেই হয়তো মৃত্যু হয়েছিল ম্যামথটির। গবেষকদের আরও দাবি, এখনও পর্যন্ত এত বড় ম্যামথের কঙ্কাল পাওয়া যায়নি। ১০ ফুটেরও বেশি ছিল এর উচ্চতা। ওজন ছিল আনুমানিক ১৪০০ কেজি। ম্যাঞ্চেস্টার জাদুঘরের পৃথিবী-বিজ্ঞান বিভাগের কিউরেটর ডেভিড গেলসথ্রোপ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে যে গতিতে বরফ গলছে, বিশেষ করে সাইবেরিয়ায়, তাতে আরও বেশ কিছু ম্যামথের কঙ্কাল উদ্ধার হল বলে। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু কঙ্কাল নয়, ইতিমধ্যেই লোম, চামড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেহাংশ, এমনকী ফেলে রাখা শেষ খাবারটুকুও পেয়েছি আমরা।’’

ম্যামথদের বাস ছিল মূলত উত্তর আমেরিকা ও সাইবেরিয়ায়। দশ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এরা। মেরু সাগরের কিছু দ্বীপে তখনও বেঁচে ছিল এক দল ম্যামথ। চার হাজার বছর আগে হারিয়ে যায় তারাও। কারণ মূলত দু’টি— প্রকৃতির ব্যাপক পরিবর্তন এবং মানুষ।

জলহাওয়া বদলাচ্ছে। বরফ গলছে। মানুষের কারসাজিতেই এখন পর্দা উঠছে ইতিহাস থেকে।