সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
খালেদা জিয়া অনুমোদিত বিএনপির নতুন কমিটিতে দলটির নেতাদের পরিবারের এক ডজনের বেশি সদস্য স্থান পেয়েছেন।
কাউন্সিলের সাড়ে ৪ মাস পর শনিবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ৫০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
চেয়ারপারসন পদে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান পদে তার ছেলে তারেক রহমান কাউন্সিলেই নির্বাচিত হন।
এর কয়েক দিন বাদে ফখরুলকে মহাসচিব ঘোষণা করা হয়। তারপর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম ঘোষণা হয়, তাদের মধ্যে ছিলেন দলের সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ।
শনিবার স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ, ভাইস চেয়ারম্যান, সম্পাদক মণ্ডলী ও কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের নাম ঘোষণার পর দেখা যায়, দলের পদে থাকা নেতাদের পরিবারের ডজনের বেশি নানা পদ পেয়েছেন।
কমিটিতে সবার আসার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে ফখরুল বলেন, “যে সমস্ত কোয়ালিটি একটি সংগঠনের জন্য প্রয়োজন, প্রত্যেকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
এত বড় কমিটি কেন- প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, “বিগত দিনগুলোতে বিএনপি যে বিকাশ লাভ করেছে, বিশেষ করে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীর সংখ্যা বেড়ে গেছে, ছাত্রদল-যুবদল থেকে যারা আসছেন, তাদেরকে তৈরি করার জন্য নতুন কমিটিতে আনতে হয়েছে।”
ফখরুলের ছোট ভাই মির্জা ফয়সল আমিন নতুন কমিটিতে সদস্য হয়েছেন। তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন।
ফখরুলের ভগ্নিপতি অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তাদের পরিবারের আরেকজন এবার কমিটিতে পদ পেলেন।
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদেরের ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ পেয়েছেন।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরকে করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তিনি তারেক রহমানের আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক করেছেন খালেদা জিয়া। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী স্বামীর প্রচারে নেমে সাড়া ফেলেছিলেন তিনি।
মির্জা আব্বাসের ছোট ভাই ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার মির্জা খোকন কার্যনির্বাহী সদস্য পদ পেয়েছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েছেন। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন বাফুফের সহসভাপতি তাবিথ।
স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ ইসলাম অমিতকে সহ সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে অপর্ণা রায়কে প্রান্তিক ও জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহ-সম্পাদক করেছেন খালেদা জিয়া।
গয়েশ্বরের পুত্রবধূ নিপুন রায় চৌধুরীও পদ পেয়েছেন, তিনি কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েছেন। নিপুন ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে।
বন্দি অবস্থায় মারা যাওয়া নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনাকে কার্যনির্বাহী সদস্য করেছেন খালেদা জিয়া।
সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাকে নিজের উপদেষ্টা পরিষদে আরও ৭২ জনের সঙ্গে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী সাহিদা রফিক উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছেন।
সাবেক মন্ত্রী হারুনার রশিদ খান মুন্নুর সঙ্গে তার মেয়ে আফরোজা খান রীতাও উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন। রীতা আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের শ্যালিকা।
আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নানের মেয়ের জামাই।
প্রয়াত হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে ফাহিম চৌধুরীকে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলুকে এবারও নির্বাহী সদস্য পদে রয়েছেন।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রয়াত যুদ্ধাপরাধী আবদুল আলীমের ছেলে ফয়সাল আলীমকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
সাবেক শিল্পমন্ত্রী প্রয়াত এম শামসুল ইসলাম খানের ছেলে মইনুল ইসলাম শান্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হয়েছেন।সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাজাহান সিরাজের স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ সহ-তাঁতি বিষয়ক সম্পাদক পদ পেয়েছেন।
সাবেক গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবিরের ভাই আনোয়ার হোসেন বুলু নির্বাহী সদস্য হয়েছেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমানের ছেলে মো. নাসের রহমানকে সদস্য পদে রাখা হয়েছে। দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির উদ্দিনের ছেলে মীর হেলাল উদ্দিনও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছেন।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রয়াত যুদ্ধাপরাধী ও বিএনপি নেতা আবদুল আলীমের ছেলে ব্যবসায়ী ফয়সাল আলীমও পেয়েছেন দলের সদস্যপদ। তিনি উইনটেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
২০ দলীয় জোটের শরিক ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) এর প্রয়াত সভাপতি অলি আহাদের মেয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারাহানাকে সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক করেছেন খালেদা।
সূত্র: বিডিনিউজ