সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

‘সারা জীবন নাঙল (লাঙ্গল) বইচি, ভাত খাইচি। বাপ মায়ে কোনো জমি জিরাত(জমি) রাইখে যায়নি। নাঙল বয়ে ছাওয়ালদের মানুষ করচি। একন(এখন) তাদের(সন্তান) ট্যাকায় হজে যাচ্চি(যাচ্ছি)।

 

বৃহস্পতিবার (০৪ আগস্ট) দিবাগত রাতে কথাগুলো বাংলানিউজকে বলছিলেন নাটোরের গুরুদাসপুরের মোজাহার আলী ফকির।

 

আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে এ মৌসুমের হজ ফ্লাইট। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হজ ফ্লাইটের উদ্বোধন করবেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

 

মোজাহার আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল- ছোট বেলা থেকে অভাব অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করে ছেলেদের বড় করেছেন তিনি। অভাব অনটনের মধ্যে চার সন্তানকে পড়ালেখা করিয়েছেন। কিন্তু টাকার অভাবে অনেক সাধ তার পূর্ণ হয়নি।

 

মোজাহার আলী বলেন, নাঙল বইচি, খ্যাত খামার কামলা দিচি। হজে যাবো ভাবিনি। ছাওয়ালরা সব ট্যাকা জুগাড়(সংগ্রহ) করে দিচে। হজি গিয়ে বাপ-মা, স্বজন ও দ্যাশের(দেশ) জন্যে দোয়া করবো।’

 

তিনি জানান, হজে যাওয়া উপলক্ষে তার সব ছেলেই টাকা সংগ্রহ করেছেন।

হজে যাওয়ার আগে কোনো আক্ষেপ আছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাজার আলী বলেন, ধনি-বড় লোক হওয়ার কোনো আক্ষেপ নাই। কৃষক মানুষ আমরাতো ব্যবসায়ী না। হজে যাবো আল্লাহর কাছে দোয়া করবো এটাই অনেক বড়।

এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, হজ উপলক্ষে হাজি ক্যাম্প সেজেছে নতুন রূপে। দেওয়ালে সোভা পাচ্ছে নানা ধরনের আলোক সজ্জা। ট্রেনিংসহ নানা কাজের জন্য অনেক আগে থেকে হাজী ক্যাম্পে এসেছেন হজ যাত্রীরা। সঙ্গে এসেছেন স্বজনেরা।

 

ইমিগ্রেশন বিভাগের সামনে অপেক্ষা করছেন বগুড়া নন্দীগ্রামের হজ যাত্রী কামরুজ্জামান বাবু। আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। জমি জায়গা বন্ধক রেখে হজে যাচ্ছেন তিনি।

৩৫ বছর আগে বাবা রয়েজ প্রামানিক মারা যান। ইচ্ছে ছিল মা কমেলা খাতুনকে নিয়ে হজ করবেন বাবু। কিন্তু ৯ বছর আগে স্ট্রোকে মারা যান মা কমেলাও।

বাবু বলেন, মায়ের ইচ্ছা ছিল আমি যেনো হজ করি। আল্লাহর রহমতে মায়ের ইচ্ছা পূরণ হতে যাচ্ছে। কিন্তু মা পাশে নেই। ৯ বছর আগে সংসারের অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। মা এখন বেঁচে থাকলে এক সঙ্গে হজ করতে যেতাম। কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণ হলো না।’

জানা যায়, এবার এক লাখ ‍এক হাজার ৭৫৮ জন বাংলাদেশি হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছেন ১০ হাজার বাংলাদেশি। বাকি ৯১ হাজার ৭৫৮ জন যাচ্ছেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।

 
সরকারি ব্যবস্থাপনার হাজীদের ইমিগ্রেশন হচ্ছে হজ ক্যাম্পে। অনেকে চোখের জল ফেলে হাত নেড়ে ক্ষণিকের জন্য বিদায় দিচ্ছেন প্রিয় স্বজনদের।

 

তাদের মধ্যে নগরীর বাসাবোর আরেফিন আহমেদ। বাবা আরিফ আহমেদ এবং মা জেসমিন আহমেদকে বিদায় দিলেন হজ ক্যাম্প থেকেই।

আরিফ বলেন, বাবা-মা দু’জনেই হজে যাচ্ছেন। হজ ক্যাম্প থেকে বিদায় জানালাম তাদের। কালকে সকালে হজ ক্যাম্প থেকে এয়ারপোর্টে(হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) হজ ফ্লাইটে উঠবেন তারা।’

সূত্র: বাংলা নিউজ