সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আবারো মাছ ধরা শুরু হতে যাচ্ছে। এরিমধ্যে মাছ ধরার সব ধরণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন জেলেরা।

৬ই অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ৩৮ টি জেলায় আংশিক বা পূর্ণাঙ্গভাবে এবং সমুদ্রে মাছ ধরার এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল।

ভোলার লালমোহন উপজেলার মাঝি মোহাম্মদ মিজান গত কয়েকদিন ধরেই তার ট্রলার মেরামত করেছেন, জাল ঠিক করেছেন।

সব ঠিক থাকলে শুক্রবার রাত ১২ টা ১ মিনিটে নিষেধাজ্ঞা ওঠার পরপরই জাল ফেলার পরিকল্পনা আছে তার।

দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা প্রভাবে এবারে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠবে বলে আশা করছেন মি. মিজান।

তিনি বলেন, “লম্বা দিন তো বন্ধ ছিল, আবার ঝড় গেসে, পানি বেড়ে গেসে। মাছ বেশি উঠবে। সকালে আড়তে তুলবো। দেখা যাক।”

আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অর্থাৎ সেপ্টেম্বর ও পুরো অক্টোবর মাস জুড়েই ইলিশের প্রজনন মৌসুম চলে।

সেইসাথে আমাবস্যা ও পূর্ণিমাও ইলিশ প্রজননের অনুকূল সময়। এ কারণে চাঁদের এই অবস্থার ওপর ভিত্তি করেই নিষেধাজ্ঞার তারিখগুলো নির্ধারিত হয়ে থাকে।

এবারে ১০ই অক্টোবর পূর্ণিমা ও ২৫শে অক্টোবর আমাবস্যা হয়েছে। ফলে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার মোক্ষম সময় পেয়েছে।

মি. রহমান বলেন, ইলিশের প্রজননে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় নিলেও এই নিষেধাজ্ঞা ২২ দিন রাখা হয় যেন ইলিশ প্রজননের জন্য সাগর থেকে মোহনা বেয়ে তার অনুকূল পরিবেশ পর্যন্ত আসতে পারে।

এ সময় ইলিশ ৭২-৭৮ কিলোমিটার বা তার বেশি স্রোতের বিপরীতে চলার সক্ষমতা রাখে। সেই হিসেবে লোনা পানি থেকে মোহনা বেয়ে মিঠাপানিতে আসতে তাদের দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে।

এজন্য আমাবস্যা ও পূর্ণিমার সামনে পেছনে দুই/তিনদিন সময় রেখে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করা হয়।

ইলিশের মাছ ধরার সবচেয়ে উপযোগী পরিবেশ হল গভীর স্রোতস্বিনী পানি, তাপমাত্রা, সেইসাথে পানিতে কিছু গুণাগুণ থাকতে হয়।

প্রথমত পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের হার যেন কোন অবস্থায় চার এর নীচে না নামে। বাংলাদেশের নদী ও মোহনায় অক্সিজেনের এই মাত্রা মোটামুটি ভারসাম্যে থাকায় এখনও ইলিশ আসতে পারছে বলে জানান মি. রহমান।

তবে নদী দূষণ ও নাব্যতা সংকটের ফলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। যা ইলিশ প্রজননে পরবর্তীতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

এছাড়া ডিম পাড়ার জন্য ২৭ থেকে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা ইলিশের জন্য বেশ অনুকূল।

বাংলাদেশের জলসীমায় এই তাপমাত্রা বজায় থাকা ইলিশ উৎপাদনের অন্যতম বড় কারণ।

এছাড়া পানির পিএইচ এর মাত্রা ৮ বা তার উপরে থাকারও প্রয়োজন পড়ে। পিএইচ পানিতে থাকা অম্ল ও এলকালাইনের ভারসাম্যের পরিমাপক। পিএইচ এর ভারসাম্যের ওপর জলজ প্রাণীর স্বাস্থ্য নির্ভর করে।

সাধারণত ৬.৫ থেকে ৮.৫ পিএইচ এর পানিতে নিউট্রাল বা ভারসাম্যপূর্ণ পিএইচ লেভেলের পানি বলা হয়।

তাছাড়া ইলিশের প্রজননে ঘূর্ণিঝড়ের একটি ইতিবাচক প্রভাব আছে বলে জানান মি. রহমান।

কারণ এই সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস হয়েছে, নদীতে প্রচুর স্রোত পানির উচ্চতা ও পানিতে থাকা দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, এছাড়া পানির অন্যান্য উপাদানগুলো ভারসাম্যে থাকে।

ফলে ইলিশ মাছ ডিম পাড়ার অনুকূল পরিবেশ পায়। ফলে মাছ বেশি বেশি ডিম পাড়ে। মাছের উৎপাদনও বেড়ে যায়।

গত ২৫শে অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং যে সময় আঘাত হানে ওই রাতেই ছিল অমাবস্যা ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলায় টানা-বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়ার, স্রোত ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে পানির গুণগত মান উন্নত হয়।

ফলে ইলিশের ডিম পাড়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যার কারণে ইলিশ প্রচুর ডিম ছেড়েছে বলে আশা করছেন মি. রহমান।

তারমধ্যে ওই সময়ে নদী ও মোহনায় কোনও জেলে ও নৌকা না থাকায় নির্ঝঞ্ঝাটে ডিম পেরেছে মা ইলিশগুলো।

অনুকূল পরিবেশ থাকায় এবার ইলিশ ছাড়াও অন্যান্য মাছও প্রজনন ও ডিম পাড়ার অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে।

তবে একটি মা ইলিশের ডিম পাড়া, বাচ্চা ফোটানো এবং পরিণত হতে সাত থেকে আট মাস সময় লাগে।

তাই এই সময়ে বাচ্চা ইলিশ রক্ষা করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

সাধারণত ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বেরোলে ইলিশ ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লার্ভা অবস্থায় থাকে। এরপর এরা বড় হতে খাবে এবং বাইরের বিভিন্ন খাবার ও প্ল্যাঙ্কটন খেতে শুরু করে।

অনেক সময় অনেক মিহি জাল বা কাঁথা জালে তারা ধরা পড়ে যায়। তাই এসব জাল ব্যবহার আটকাতেও নজরদারির পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: বিবিসি বাংলা