সোমবার , ২২ জুন ২০২০ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

রাজশাহীর একটি শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
জুন ২২, ২০২০ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে দুই শিশু পালানোর পরে বেরিয়ে আসছে কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয়ঙ্কর সব অপকর্মের খবর। কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্যাতনের কারণেই রাতে ওই দুই শিশু কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যায় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার (১৯ জুন) দিবাগত রাতে ওই দুই শিশু নিখোঁজ হয়ে যায়।

পরে শনিবার বিকেলে পাওয়া পাওয়া যায় একজনকে। আর গতকাল রবিবার পাওয়া যায় আরেকজনকে। এ নিয়ে হুলস্থুল সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই ধরনের ঘটনা এর আগেও কয়েকবার হয়েছে। কেন্দ্রের শিশুদের নির্যাতন, খাবারে অনিয়মসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক শিশু চলে যাওয়া বা নানা করাণে নিখোঁজের পর শুধুমাত্র থানায় দায়সারা সাধারণ ডায়েরি করেই বসে থেকেছেন কেন্দ্রটির দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। পরবর্তিতে শিশু উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা তাঁরা নেননি।

এদিকে শুক্রবারের ঘটনাটি নিয়ে অন্যান্য শিশুদের অভিভাবকদের মাঝেও দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। একের পর এক এই ধরনের ঘটনা নিয়ে তাদের মাঝে ক্ষোভও তৈরী হয়েছে।

নিখোঁজ দুই শিশু হলো রাসেল (৮) ও মাহফুজ (৮)। তাদের মধ্যে রাসেলকে রাজশাহী আমলি আদালত ২ এর মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেই থেকে রাসেল এখানেই অন্য শিশুদের সঙ্গে বসবাস করত। আর মাহফুজের চাচার বাড়ি রাজশাহী নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায়। তবে রাসেলের পরিচয় এখনো জানে না কেউ। অনাথ হিসেবেই তাকে আদালত থেকে শিশু কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পালিয়ে যাওয়ার পরে রাসেলকে শনিবার বিকেলে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পরে আবারো কেন্দ্রের উপপরিচালক নূরুল আলম প্রদান নিজেই রাসেলকে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আর মাহফুজ পালিয়ে তার বাবার বাড়ি নওগাঁর মান্দায় চলে যায়। গতকাল বিকেলে তাকে তার পরিবারের লোকজন পুনরায় শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে যায়। দুই শিশুর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা বার বার নির্যাতনের কারণে বাধ্য হয় পালাতে। 

কেন্দ্রের আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই কেন্দ্রের দায়িত্বরত এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিশুদের নানাভাবে হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়েও বার বার তাকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এছাড়াও অকারণে শিশুদের ওপর নির্যাতন, নিম্নমাণের খাবার পরিবেশন, শিশুদের পরিচর্যার তেল-সাবান চুরি থেকে নানা অনিয়মে বিশিয়ে উঠেছে এখনকার পরিবেশ। ফলে শিশুরা বাধ্য হচ্ছে পালাতে।

শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সূত্র মতে, শুক্রবার রাতে রাসেল ও মাহফুজ নগরীর উপশহর-২ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করা অবস্থায় নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে গতকাল শনিবার সকালে বিষয়টি টের পান কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অথচ শিশু কেন্দ্রে রাতে দায়িত্বরত থাকার কথা একজন নৈশপ্রহরী ও হাউজ কর্মকর্তা।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রের উপপরিচালক নূরুল আলম প্রধান বলেন, দুটি শিশু নিখোঁজ হয়ে যায়। তাদের দুজনকে পরে পাওয়া গেছে। তবে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনে যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নতুন করে কাউকে নির্যাতনের বিষয়টি সঠিক নয়।

সূত্র মতে, এভাবে এই কেন্দ্র থেকে গত ৮ বছরে অন্তত ১০ জন শিশু নিখোঁজ হয়েছে। নিখোঁজের পরে কয়েকটি জিডিও করা হয়েছে থানায়। কিন্তু তাদের উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়াও আরও অন্তত শতাধিক শিশু কেন্দ্রের কর্মচারীদের হাতে নির্যাতন, খাবারে অনিয়ম, নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছে। যেসব শিশুদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা এই ব্যয় করা হয় এখানে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সাল থেকে প্রায় দেড় হাজার শিশুকে ভর্তি করা হয় এখানে। যাদের বেশিরভাগরই এখনো কোনো কর্মসংস্থান জোটেনি বা সুরক্ষা পাইনি। অথচ এই কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটি চালাতে সবমিলিয়ে ব্যয় হয়েছে অন্তত নয় কোটি টাকা। এ নিয়ে একটি গত ১৬ জানুয়ারি অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ করা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে অনিয়মের প্রমাণও পায় তদন্তকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু তার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স/আর

 

সর্বশেষ - অর্থ ও বাণিজ্য