রাজশাহী বিভাগে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, সঙ্গে ত্রাণের জন্য হাহাকার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিভাগে বাড়ছে করোনা। বিশেষ করে বিভাগের জয়পুরহাট জেলা পরিণত হয়েছে হটজোনে। এর বাইরে অন্য জেলাগুলোতেও করোনা বাড়ছে হুহু করে। গতকাল সোমবার একদিনে বেড়েছে আরও সাতজন। এ নিয়ে রাজশাহী বিভাগের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১১৮ জন। মারা গেছে দুজন। তবে  ব্যতিক্রম কিছুটা সিরাজগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। দুটি জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত মাত্র দু’জন করে।

তবে বিভাগের আট জেলাতেই বাড়ছে গরিব-অসহায়দের মাঝে ত্রাণের জন্য হাহাকারা। প্রতিদিনই কোথাও কোথাও না কোথাও ত্রাণের জন্য রাস্তায় নামছেন বঞ্চিত মানুষ। যদিও সরকারি-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা ত্রাণ ছুটছেন রাতদিন। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও দেওয়া হচ্ছে প্রচুর ত্রাণ। তার পরেও লাখ লাখ মানুষের মাঝে সবকিছুই যেন সামান্য হয়ে উঠছে। আবার ত্রাণ বিতরণের সম্নয়হীনতা ও অনিয়মের অভিযোগ তো আছেই।

গতকাল সোমবার রাজশাহী নগরীর পঞ্চঁবটি এলাকায় ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন প্রায় দুই হাজার বস্তিবাসী। আবার জেলার চারঘাটের ইউসুফপুরেও ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী রাস্তায় নামেন। তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিকেও অবরুদ্ধে করে রাখেন।


গতকাল সোমবার সকাল ১০ টার দিকে রাজশাহী নগরীর পঁঞ্চবটি বস্তি এলাকার মানুষ ত্রাণের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন গিয়ে ত্রাণ দেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে এক ঘন্টা ধরে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলী স্বজনপ্রীতি করে তাঁর নিজের লোকজনকে ত্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু বস্তিবাসীর মাঝে এখন পর্যন্ত ত্রাণ দেওয়া হয়নি। এতে করে খেয়ে-না খেয়ে তাঁরা চরম দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছেন। এর প্রতিবাদে তাঁরা নগরীর তালাইমারী থেকে সাহেবাবার রাস্তার দুই পাশে বাঁশ বেঁধে বিক্ষোভ শুরু করেন।

আরও পড়ুন: এক নজরে দেখুন রাজশাহী জেলার করোনা চিত্র

বিক্ষোভকারীদের একজন নুর হোসেন বলেন, ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নগরীতে ব্যাপক হারে ত্রাণ দিলেও পঁঞ্চবটি এলাকার সাধারণ মানুষ এই ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলী ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম করে বস্তির গরিব মানুষকে বঞ্চিত করেছেন।’

তিনি আরও জানান, পঁঞ্চপট্টি এলাকার ৯০ ভাগ মানুষ হতদরিদ্র। তাঁরা বেড়িবাঁধের নিচে বস্তি এলাকায় বসবাস করেন। তাঁদের অধিকাংশই দিনমজুর শ্রেণীর। কিন্তু দীর্ঘদিন লকডাউন থাকার পরেও এই শ্রেণীর মানুষরা ত্র্রাণ পাননি। ফলে দুর্ভোগে দিন কাটছে এসব মানুষের।

নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র দাস বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এলাকাবাসী ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তবে প্রশাসনের লোকজন তাদেরকে ত্রাণ দেওয়ার আশ্বাসে তারা ফিরে যান।’

আরও পড়ুন: পবায় ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ

একই দিনে রাতের আঁধারে ত্রাণ দিতে গিয়ে রাজশাহী নগরীতে তোপেরমুখে পড়েন এক কাউন্সিলর ও তার লোকজন। সোমবার রাত ১০টার দিকে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের জামালপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় এলাকাবাসী এক ভ্যান সরকারি ত্রাণ (৭০ প্যাকেট চাল) জব্দ করেন। পরে তারা পুলিশে খবর দেন। ঘটনাস্থলে চন্দ্রিমা থানার পুলিশ অবস্থান নিয়ে আইডি কার্ড দেখে জব্দকৃত ত্রাণগুলো বিতরণ করে দেন এলাকাবাসীর মাঝে।

আরও পড়ুন: ত্রাণের দাবিতে শিবগঞ্জে মানববন্ধন

এদিকে রাজশাহীর চারঘাটের ইউসুফপুরে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলেন এলাকাবাসী। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতি করায় গরিব মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। এর প্রতিবাদে গতকাল এলাকাবাসী রাস্তায় নামেন। এসময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিকেও অবরুদ্ধে করে রাখেন। পরে তাঁরা ফিরে যান।

অন্যদিকে বিভাগে গতকাল সোমবারও একদিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে সাতজনের। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। জয়পুরহাট জেলা করোনার হটজোনে পরিণত হয়েছে। জয়পুরহাটেরই এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪জন। এছাড়াও দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বগুড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৩, তারপরে নওগাঁয় আক্রান্ত ১৭, রাজশাহীতে ১৭, পাবনায় ১৩, নাটোরে ১০, সিরাজগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২ জন করে।

তবে আশার আলো দেখাচ্ছে বিবাগের সিরাজগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ দুটি জেলায় এখনো দুজনের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। গত কয়েকদিন ধরেই এ দুটি জেলাতে নতুন কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। ফলে দুজন করেই আক্রান্ত রয়েছেন এখন পর্যন্ত।

স/আর

আরও পড়ুন:

বাগাতিপাড়ায় ত্রাণের দাবিতে ইউএনও অফিসের সামনে ভিড়