রাজশাহীতে চাইনিজ খাবারে ঝুঁকছেন ভজনপ্রিয় মানুষরা

তারেক মাহমুদ:
স্বাদ,রং আর গন্ধ। মানুষের রুচির সাথে নিত্য পরিবর্তনশীল। সবাই চায় একটু ভিন্ন স্বাদ, একটু ভিন্ন ঘ্রাণ। ভোক্তারা চান স্বাস্থ্যকর মুখরোচক খাবার আর প্রতিষ্ঠান চায় সুনাম। আর তাই রাজশাহীতে একে একে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ফাষ্টফুড আর রেষ্টুরেন্টের দোকান।

 

নতুন খাবারের সাথে পরিচিত হতে তাই তো এসব রেষ্টুরেন্টগুলোতে ঝুঁকছে ভজনপ্রিয় মানুষরা। আর ভোক্তার রুচি ও চাহিদার সাথে তাল মেলাতে নগরীর প্রতিটি রেষ্টুরেন্ট যেন মেতে উঠেছে।

 

গত দুই বছর আগেও রাজশাহীতে তেমন হারে চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের দেখা মেলেনি। কিন্তু ২০১৫-১৬ সালে নগরীর আনাচে কানাচে এবং প্রধান সড়কের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট। নিজেদের রন্ধনশালায় ভিন্ন স্বাদের খাবারের আয়োজন নিয়ে এ যেন এক প্রতিযোগীতা। কথায় আছে, আগে দর্শনধারী পরে গুনবিচারী’। আর তাদের জাঁকজমক ডেকোরেশনই বলে দেয় ব্যাবসা নিয়ে তারা কতটা সচেতন।

3_312252

বর্তমানে তরুণ উদ্যোক্তাদের রেষ্টুরেন্টে আগ্রহ বেশি থাকায় তারা এগিয়ে আসছেন এই ব্যবসায়। স্বল্প কিবা মাঝাড়ি মূলধনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক। নগরীর অন্যতম সাহেব বাজারে জিরো পয়েন্টের আশেপাশেই পাল্লা দিয়েই গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি রেষ্টুরেন্ট।

 

এদের নামকরণও হয় খাবারের সাথে তারতম্য রেখে যেন নামেই আকৃষ্ট হয়ে আসে ক্রেতা ভোক্তারা। চিলিস, মাষ্টার শেফ, টিএফসি(টেষ্টি ফ্রাইড চিকেন), ফ্লেবারস, অডার্সআপ, টপ দ্যাট, কুকিজার, টুইন টমেটো, রহমান্স আরো নাম না জানা অনেক রেষ্টুরেন্ট। রসনার বিলাশ উপভোগ করতে গিয়ে ভোক্তারা ছুটছেন এসব রেষ্টুরেন্টে।

নগরীর আলুপট্টি মোড়ের টিএফসি রেষ্টুরেন্ট। এখানে কাষ্টমারের জন্য আকর্ষণ বাড়াতে রয়েছে নজরকাড়া ডেকোরেশন। বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ম্যানেজার সাইদুর ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে জানান, এখানে চিকেন খাবারটিকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। এছাড়াও চাইনিজসহ ইন্ডিয়ান খাবার পাওয়া যায়। ফ্রাইড চিকেন, চিকেন চপসি, চিকেন ফ্রাইড রাইসসহ নাম না জানা অনেক খাবার।

২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে রহমান্স রেষ্টুরেন্ট। কাষ্টমারদের ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় এখন তাদের প্রতিষ্টান দুইটি। একটি লক্ষীপুর এলাকায় অপরটি আলুপট্টিতে। জন্মদিনের উৎসব অথবা বন্ধুদের আড্ডা, সব কিছুর জন্য রয়েছে সুব্যাবস্থা।

নগরীর জিরো পয়েন্টে সদ্য উদ্বোধন হয়েছে ফ্লেভারস নামক রেষ্টুরেন্টের। নতুন হিসাবে ভালোমত জায়গা করে নিযেছেন ক্রেতাদের কাছে। ফ্লেভারসের ম্যানেজার সিল্কসিটি নিউজকে জানান, আমাদের খাবারের আমরা নতুন নতুন অনেক আইটেম রের করেছি। আমরা চেয়েছি অন্যদের চেয়ে একটু ব্যাতিক্রম কিছু আয়োজন করতে। আর তাই চেষ্টা করে চলেছি ক্রেতাদের পচ্ছন্দ মত সব কিছু সরবারাহ করতে।
রুহুল আমিন নামক ক্রেতা সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, খাবারের লিস্ট আর পরিবেশ অনেক ভালো লাগে। কর্তব্যরতরা সবাই এক পোশাকে এসে একসাথে কাজ করে। নতুন হিসেবে অনেক ভালো পরিবেশে ভালো খাবার পরিবেশন করে। সত্যিই আকর্ষনীয়।

রাণীবাজার এলাকায় সদ্য উদ্বোধন হয়েছে ঘোষ্ট রাইডার ক্যাফে। যুকবদের নিয়ে যুকবদের দিয়ে কর্মপরিকল্পনার এ এক উদাহরণ বলা চলে। মোটর বাইক ষ্টান্ট রাইডারদের ছবি আর কারুকাজে সজ্জিত এ ক্যাফেটিতে মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করা হয়।
ঘোষ্ট রাইডার ক্যাফেতে আসা শাহিনুল ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, এদের পরিবেশটা আমার অনেক ভালো লাগে। সেই সাথে খাবার পরিবেশনের ধরনটা। এদের খাবারের মান যেমন ভালো, অন্যান্যদের তুলনায় মূল্য অনেক কম।

পুরোনোগুলোও রয়েছে তাদের সুনাম নিয়ে। প্রতিযোগীতামূলক বাজারে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পুরোনো রেস্তারাগুলোও নেই পিছিয়ে। তাইতো খাবারের গুনগত মান আর নিজেদের সুনাম ধরে রাখতে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজেদের কারিগরি দক্ষতা বাড়িয়ে চলেছেন। তবে প্রতিষ্টান অধিক হওয়ায় ক্রেতা সংকটের কথাও জানান তারা।

কথা হয় বিশাল ফাষ্টফুড এ্যান্ড কাবাব এর ম্যনেজার রবিউল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, অতীতে রেষ্টুরেন্টের দোকান ছিলো ৫ থেকে ৬ টা আর এখন বর্তমানে এখন তা দাড়িযে ৫০ টির উপর দোকান রয়েছে। আর এভাবেই প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশালের যাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালে। শুরু থেকেই এই রেষ্টুরেন্টটি ভোক্তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে আসছে। এখানে সব ফাস্ট ফুডের আইটেমর মাঝে পিৎজা,বার্গার, স্যান্ডুইজ ইত্যাদি আইটেমগুলো বেশি বিক্্ির হয়। সাথে দুপুরের লাঞ্চ আর রাতের ডিনার আইটেম তো আছেই।

তিনি বলেন, আগের চেয়ে ক্রেতাদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এখন অনেক যুবকেরা নিজস্ব উদ্যোগে ফাষ্টফুড কর্ণার করছে। এটা তাদের জন্যও ভালো। কিন্তু কাষ্টমার গুলো ভাগ হয়ে যাচ্ছে। যে ধরে রাখতে পারছে তাদের প্রতিষ্টান ভালো ভাবে চলছে।
পাশেই রয়েছে খাবারের অন্যতম আরেকটি নাম চিলিস কাবাব বিরিয়ানি হাউজ। প্রতিযোগিতার বাজারে এদের নাম ডাক বেশ সরব। ক্ষুদ্র একটি ফাষ্টফুড হতে এখন খাবারের ধরন অনুযায়ী তিনটি প্রতিষ্টান রয়েছে তাদের। চাইনিজ, ফাস্টফুড এবং কাবাব। ফলে ভোক্তাগণ ইচ্ছেমতো পছন্দের প্রতিষ্ঠানটি বেছে নিতে পারেন। চিলিসের যাত্রা ২০০০ হাজার সালে শুরু হলেও মালিকের ব্যাবসা দাড় করাতে প্রায় ২ থেকে ৩ বছর লেগে যায়। পরে ক্রমান্বয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যেতে থাকে।

চিলিসের ম্যানেজার মাইনুল বাশার সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমাদের ফাষ্টফুড আর কাবাব আইটেম একটু বেশি চলে। রাতে কাষ্টমার বেশি থাকে। পরিবার বন্ধুবান্ধবসহ প্রশাসনের লোকজন একটু বেশি আসে। আমাদের প্রতিদিন ওয়ার্ডার এর প্যাকেট হয় ৫০ এর বেশি। প্রতিষ্টানের সুনাম রয়েছে বলেই ক্রেতাদের দেখা মেলে। আর এ সুনাম আমরা ধরে রাখতে চাই।
ক্রেতারা বলছেন, প্রয়োজন অনুযায়ী খাবারের সমারোহ যেখানে ভালো পাওয়া যায় সেখানে নিশ্চিতভাবেই ভরসা করা যায়। বেশি অর্ডারের জন্য বড় রেস্তারাগুলো বেশ ভালো। সকলের রুচি আর খাবারের মানানুযায়ী বিভিন্ন রেষ্টুরেন্ট এখন শহরকে রসনা শহরে পরিনত করে দিচ্ছে। সেদিন দূরে নয় যেদিন যুবকদের কর্মসংস্থানের একমাত্র ক্ষেত্রে হয়ে যাবে এই রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা।

স/আর