এমএ পাস মুচি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে ট্রেনের কামরায় জুতো পালিশ করতেন সুভাষ। স্বপ্ন দেখতেন, এক দিন পরিস্থিতি বদলে যাবে। চাকরি করবেন। সংসার পাতবেন। দিন গড়িয়েছে ঠিকই। কিন্তু সুভাষের জীবন বইছে সেই একই খাতে। এখনও রাস্তার পাশে বসে জুতো পালিশ করেন এমএ পাস করা সুভাষচন্দ্র দাস। উচ্চশিক্ষিত যুবকটিকে এলাকায় সকলে চেনেন। সেই সূত্রে কিছু ছাত্রও পড়ান। সোমবার (২৯ জুলাই) আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন-লাগোয়া দক্ষিণ গোবিন্দকাটি গ্রামে থাকেন সুভাষ। বছর চল্লিশের যুবকের কথায়, ‘‘ইতিহাস নিয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ করেছি। বহু চেষ্টা করেও সরকারি চাকরি পাইনি। কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে।’’ বাড়িতে অসুস্থ মা, ভাই, দুই বোন। সকলের ভরণপোষণের দায়িত্ব সুভাষেরই। সংসার চালাতে জুতো পালিশ করতেও আপত্তি নেই তাঁর। করছেনও তাই। যোগেশগঞ্জ বাজারে ফুটপাতের ধারে সরঞ্জাম নিয়ে বসেন দু’বেলা। তারই ফাঁকে ছাত্র পড়ান।

বিমল ও রাধারানির দাসের ছয় সন্তানের এক জন সুভাষ। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে বিভাস ব্যান্ডপার্টির বাজনদার। নদীতে ভেসে আসা গরু-ছাগলের চামড়া ছাড়ানোর কাজ করতেন বিমল। সংসার তাঁর কোনও দিনই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। তারই মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন সুভাষ। যোগেশগঞ্জ হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সুভাষ জানান তাঁর জীবনের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। পরিবারে সচ্ছলতা ছিল না কোনও দিনই। কলেজে পড়ার সময়ে বারাসতে এক পরিচিতের বাড়িতে থাকতেন। সে সময়েও নিজের খরচ চালাতে প্ল্যাটফর্মে বা ট্রেনে জুতো সেলাই, পালিশের কাজ করতেন। কিন্তু যে বাড়িতে থাকতেন, সে বাড়ির কর্তার চোখে পড়ে যায় ঘটনাটা। তাতে হিতে বিপরীত হয়। জুতো পালিশ করলে তাঁর বাড়িতে জায়গা হবে না, সাফ জানিয়ে দেন মালিক।

তারপরের কয়েকটা দিন প্ল্যাটফর্মেই কাটে সুভাষের। স্থানীয় এক মুদি দোকানি তাঁকে নিজের বাড়িতে থাকতে দেন। সেখানে থেকে ছাত্র পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ চালাতেন সুভাষ।

তাঁর স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত সাহা বলেন, ‘‘ছোট থেকেই ছেলেটা মেধাবী। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়েছে। এখনও যে ভাবে সংসার চালাচ্ছে, তাকে কুর্নিশ না করে পারা যায় না।’

হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডলের কথায়, ‘‘উচ্চশিক্ষিত যুবককে জুতো পালিশ করতে দেখলে খারাপ তো লাগেই। ও যাতে একটা সরকারি চাকরি পায়, সেই চেষ্টা করছি।’’

তাঁর জীবন শিখিয়েছে, কোনও কাজই ছোট নয়। সুভাষ বলেন, ‘‘যে কাজ করে দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পারছি, তাকে কোনও ভাবেই ছোট বলতে পারি না। তবে হ্যাঁ, সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখাটা এখনও ছাড়তে পারিনি!’’

চাকরির পরীক্ষা দেন কি এখনও? ‘‘চাকরির পরীক্ষায় বসার টাকা কোথায়! আর সময়ও তো তেমন পাই না’’— সংক্ষেপে উত্তর সেরে জুতোয় কালি লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সুভাষচন্দ্র।