হজযাত্রার শেষ ফিরিস্তি

৯৭০ নিবন্ধন বাতিল, সুবিধা হয়নি ‘রিপ্লেস বাণিজ্যে’

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

চলতি বছর হজের খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় নয়বার সময় বাড়িয়েও নির্ধারিত কোটা পূরণ করতে পারেনি সরকার। বারবার সময় বাড়ানোর পরও ফাঁকা থেকে যায় প্রায় পাঁচ হাজার কোটা। সেগুলো সৌদি সরকারকে ফেরত দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এদিকে, চূড়ান্ত নিবন্ধন করেও হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন প্রায় চার হাজার ২০০ হজযাত্রী। এর মধ্যে রিপ্লেস করেছেন (একজনের পরিবর্তে অন্যজন যাওয়া) তিন হাজার ২১০ জন। নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে ৯৭০ জনের। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

অবশ্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কৌশলের কারণে এবার মোটা দাগে ‘রিপ্লেস বাণিজ্য’ করতে পারেনি হজ এজেন্সিগুলো। অন্য বছরের মতো এবার হাজযাত্রী রিপ্লেস করা যাবে না বলে নিবন্ধনের শুরুতেই পরিষ্কার জানিয়ে দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ কারণে হজ এজেন্সিগুলো শুরুর দিকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নিবন্ধন করা থেকে বিরত ছিল। যদিও শেষ সময়ে এসে ৯৭০টি নিবন্ধন বাতিল করেছে তারা। এসব এজেন্সির কাছে নিবন্ধন বাতিল করার কারণ জানতে চেয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তাদের দেওয়া ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের কর্মকর্তারা।

• কোটা ফেরত গেছে পাঁচ হাজার
• যাত্রী রিপ্লেস করেছেন ৩২১০ জন
• নিবন্ধন বাতিল করেছেন ৯৭০ জন

হজ অনুবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, হজ ব্যবস্থাপনা শুরুর আগেই এজেন্সিগুলোর জন্য ৮ শতাংশ হারে রিপ্লেসমেন্ট সুবিধার ব্যবস্থা রাখে সরকার। কোনো হজযাত্রী মারাত্মক অসুস্থ হলে বা মারা গেলে তার পরিবর্তে অন্য একজনকে রিপ্লেস করা যাবে। ২০১৬-১৭ সালে এ হার ৪ শতাংশ ছিল। এজেন্সিগুলোর এ রিপ্লেসমেন্টের হার বাড়ানোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে আরও ৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করে সরকার। এ কোটা ১৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে আসছে এজেন্সিগুলো। যদিও এ দাবিকে অযৌক্তিক বলছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

চূড়ান্ত নিবন্ধন করেও হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন প্রায় চার হাজার ২০০ হজযাত্রী। এর মধ্যে রিপ্লেস করেছেন (একজনের পরিবর্তে অন্যজন যাওয়া) তিন হাজার ২১০ জন। নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে ৯৭০ জনের। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ কাজে লাগিয়ে আগে হজ এজেন্সিগুলো ‘রিপ্লেস’ বাণিজ্য করত। অর্থাৎ একজনের নামে নিবন্ধন করে পরে অন্যজনের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে হজে পাঠাত। শেষ সময়ে এসে এজেন্সিগুলোর এ রিপ্লেসমেন্ট বাণিজ্যের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে ধরা পড়ায় তখন অনেক এজেন্সিকে শোকজও করা হয়।

এ বাণিজ্য বন্ধ করতে চলতি বছরের শুরুতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এবার রিপ্লেস করা যাবে না। সবশেষ বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজ কোটা পূরণ না হওয়ায় শেষের দিকে ‘রিপ্লেস কোটা’ চালু করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। যার শেষ দিন ছিল ৭ মে (রোববার)। শেষ দিনে এসে ৪৬৫টি হজ এজেন্সি তিন হাজার ২১০ হজযাত্রীকে রিপ্লেস করেছে।

অন্যদিকে, চূড়ান্ত নিবন্ধন করেও শেষ মুহূর্তে এসে নিবন্ধন বাতিল করেছেন ৯৭০ জন। এর মধ্যে সরকারিতে ১৫১ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার আছেন ৮১৯ জন। এসব হজযাত্রীর টাকা এখন ফেরত দেওয়া হবে। তাদের নাম বাতিল করে চূড়ান্ত তালিকা ইতোমধ্যে সৌদি সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

চূড়ান্ত নিবন্ধন করার পর অন্য কাউকে রিপ্লেস করা এবং নিবন্ধন বাতিল করার কারণ জানতে চাইলে হজ অনুবিভাগের উপ-সচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন বলেন, প্রতি বছর এ ধরনের রিপ্লেসমেন্ট ও বাতিল হয়ে থাকে। এবার সংখ্যায় একটু বেশি হওয়ায় নজরে এসেছে।

তিনি বলেন, যারা নিবন্ধন বাতিল করেছেন তারা নিবন্ধনের অল্প কিছু টাকা কাটার পর বাকি টাকা ফেরত পাবেন। আর যারা রিপ্লেস করবেন তারা তো একজনের পরিবর্তে অন্যজনকে হজে পাঠাবেন। তাই তাদের জন্য টাকা ফেরতের কোনো সুযোগ নেই।

চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কথা। সে লক্ষ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু হয়। এর মধ্যে কোটা পূরণ না হওয়ায় নয় দফা বাড়ানো হয় নিবন্ধনের সময়

হজ অনুবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ৯৭০ জন হজযাত্রী নিবন্ধন বাতিল করার বিষয়টি সন্দেহজনক। এবারও হজ এজেন্সিগুলো রিপ্লেস বাণিজ্য করতে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নিবন্ধন করে রেখেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন নির্ধারিত কোটা পূরণ হচ্ছিল না তখন তারা নিবন্ধন বাতিল করেছে। এসব হজ এজেন্সি কেন নিবন্ধন বাতিল করেছে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

প্রায় শত ভাগ বায়োমেট্রিক সম্পন্ন

চূড়ান্ত নিবন্ধন করা হজযাত্রীদের বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) ভিসা আবেদন কার্যক্রম চলবে আগামী ১০ মে পর্যন্ত। ৩০ এপ্রিল থেকে এ সময় বাড়ানো হয়েছে। গত রোববার পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে ৯৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং বেসরকারি পর্যায়ে ৯০ শতাংশের বেশি হজযাত্রী বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করেছেন বলে জানিয়েছে হজ অনুবিভাগ।

পাঁচ হাজার কোটা সারেন্ডার করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়

নয় দফা সময় বাড়িয়েও নির্ধারিত হজ কোটা পূরণ না হওয়ায় পাঁচ হাজার কোটা সৌদি সরকারের কাছে সারেন্ডার (সমর্পণ) করা হয়েছে। সৌদি সরকারের সঙ্গে চুক্তি সংশোধন করে এ ফাঁকা থাকা কোটা ফেরত দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। আগামী ৯ মের মধ্যে নতুন করে চুক্তি সংশোধন করে পূরণ না হওয়া কোটা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ফেরত দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

হজযাত্রীদের সঙ্গে গাইড হিসেবে যাবেন দুই হাজার ৭১৫ জন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইড থাকবেন ২২৮ জন এবং বেসরকারিভাবে থাকবেন দুই হাজার ৪৮৭ জন। হজযাত্রী ও গাইডসহ মোট যাত্রী এক লাখ ২২ হাজার ২০১ জন

এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন বলেন, কোটা পূরণ না হওয়ায় চার হাজার ৯৯৭টি কোটা ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কথা। সে লক্ষ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু হয়। এর মধ্যে কোটা পূরণ না হওয়ায় নয় দফা বাড়ানো হয় নিবন্ধনের সময়। মঙ্গলবার (২ মে) শেষ দিন পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত ১৫ হাজার কোটার মধ্যে নিবন্ধন করেছেন ১০ হাজার ৩৯ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজারের মধ্যে নিবন্ধন করেছেন এক লাখ নয় হাজার ৪৪৭ জন। অর্থাৎ সরকারি ও বেসরকারি দুই ক্যাটাগরিতে মোট নিবন্ধন করেছেন এক লাখ ১৯ হাজার ৪৮৬ জন।

এর মধ্যে হজযাত্রীদের সঙ্গে গাইড হিসেবে যাবেন দুই হাজার ৭১৫ জন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইড থাকবেন ২২৮ জন এবং বেসরকারিভাবে থাকবেন দুই হাজার ৪৮৭ জন। হজযাত্রী ও গাইডসহ মোট যাত্রী এক লাখ ২২ হাজার ২০১ জন। সে হিসাবে চার হাজার ৯৯৭টি কোটা ফাঁকা রয়েছে। এ ফাঁকা কোটা সৌদি সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত দেওয়া হয়েছে।