৮০ ভাগ সিলিন্ডারের মেয়াদ নেই

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘটছে হতাহতের ঘটনা। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে সিলিন্ডার ব্যবহারে প্রচারের কমতি নেই সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলোর। অথচ খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘এলপি গ্যাস লিমিটেড’ মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে ভরে এলপিজি বাজারজাত করছে, যা থেকে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৮০ ভাগ সিলিন্ডারেরই মেয়াদ নেই বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

স্বাভাবিক নিয়মে ১৫ বছরের অধিক সময়ের সিলিন্ডারকে মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে ধরা হয়। সূত্র জানায়, এলপি গ্যাস লিমিটেডের মোট ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৭১টি সিলিন্ডার থাকলেও এরই মধ্যে ৩ লাখ ৪১ হাজার ৬১৪টির আয়ুষ্কাল শেষ। এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শঙ্কাকে আমলে না নিয়েই ৭৬ দশমিক ৮৮ ভাগ মেয়াদহীন সিলিন্ডারে ভরে গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। যদিও এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, এ পর্যন্ত আমাদের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। যত এলপি গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটেছে তার সবই বেসরকরি কোম্পানির। অবশ্য আমাদের অনেক সিলিন্ডারের মেয়াদও ১৫ বছরের অধিক। সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ১৫ বছরের বেশি হওয়াতেই যে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে, বিষয়টি এমন নয়।’

তিনি বলেন, ‘এলপি গ্যাস লিমিটেডকে আরও শক্তিশালী করতে জ্বালানি বিভাগ এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) থেকে নির্দেশনা রয়েছে। আমরাও সে চেষ্টা করছি। তবে বর্তমানে বেসরকারি কোম্পানিগুলো নানা প্রক্রিয়ায় তাদের সিলিন্ডার আমাদের প্রতিষ্ঠানে পুশ করার চেষ্টা চলাচ্ছে।’

এত বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার দিয়ে কী করে চলছে- জানতে চাইলে বিপিসির এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি কোম্পানিতে পুরনো গ্যাস সিলিন্ডার বেশি হলেও সেগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয়। এসব সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার আগে বিস্ফোরণ অধিদপ্তরের নিয়মানুযায়ী নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া গ্যাস ভরার পর

সিলিন্ডারের ভাল্ব ও বডি লিকও টেস্ট করা হয়। ফলে সরকারি এলপি গ্যাস লিমিটেডের সিলিন্ডার নিরাপদ। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, সরকারি কোম্পানিটি বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১০০টি পুরনো সিলিন্ডার মেরামত করতে পারে, যেখানে প্রায় সাড়ে তিন লাখ এলপিজির বোতল মেয়াদোত্তীর্ণ। তবে এমন ধীরগতিতে মেরামত হলে এক সময় সব সিলিন্ডারই মেয়াদহীন হয়ে পড়বে।

জানা যায়, জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম গত নভেম্বরে কৈলাশটিলা এলপিজি বোটলিং প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেন। সেখানে প্রচুর পরিমাণে পুরনো সিলিন্ডার দেখে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তাই এগুলো দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘জ্বালানি সচিবের নির্দেশনানুযায়ী পুরনো সিলিন্ডার থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে এক লাখ বোতল মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বোর্ডসভায় তা অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিপিসি সূত্রে জানায়, কোম্পানির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি পুরনো সিলিন্ডার মেরামতে খরচ পড়ে ৫৩০ টাকা। তবে প্রত্যাশানুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে তা মেরামত করতে হলে কিছু মেশিনারিজ স্থাপন জরুরি। আর এ ক্ষেত্রে খরচ হবে অন্তত ৫০ কোটি টাকা। কিন্তু সরকারি কোম্পানিটির পক্ষে নিজস্ব তহবিল থেকে সেই ব্যয় নির্বাহ করা প্রায় অসম্ভব। এ কারণেই উন্মুক্ত টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরনো এক লাখ এলপি বোতল মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিপিসি চেয়ারম্যান সামছুর রহমান বলেন, ‘অর্ধেকের বেশি সিলিন্ডার মেয়াদোত্তীর্ণ রয়েছে, কথাটি সত্য। তবে আমরা নির্দেশ দিয়েছি দ্রুত এক লাখ সিলিন্ডার মেরামতের মাধ্যমে বহরে যোগ করার জন্য। পাশাপাশি বাকিগুলোও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’