৭ খুন মামলা চলাকালে আলোচিত কিছু ঘটনা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার রায় ঘোষণা হবে ১৬ জানুয়ারি। নৃশংস ঘটনাটি পুরো বাংলাদেশকে নাড়া দিয়েছিল। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম শুরু হয়ে শেষ হয় ৩০ নভেম্বর। এর মধ্যে বিচার চলাকালে ঘটেছে অনেক ঘটনা। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে প্রধান আসামী নূর হোসেনের চোখ রাঙানি, খাবার নিয়ে হাতাহাতি, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া, সাক্ষীর জ্ঞান হারানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে।.

 

সাত খুনের ঘটনায় ১২৭ জনের মধ্যে ১০৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতে ১৯ জন আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এতে উঠে এসেছে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা। মামলা চলার সময়েও বেশ কিছু ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

 

গারদখানায় নূর হোসেনের সঙ্গে আসামির হাতাহাতি:
গত ২৪ সেপ্টেম্বর মামলার জেরার বিরতির সময়ে এজলাসের ভেতরে লোহার খাঁচার গারদখানায় প্রধান আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে অপর আসামির হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর আগে সাক্ষ্য ও জেরার সময়ে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে নূর হোসেন আদালতের অনুমতি নিয়ে বাইরে টুলে বসতো। কিন্তু সেদিন আদালত সে অনুমতি না দেওয়ায় নূর হোসেন, র্যা বের চাকুরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানাসহ ২৩ আসামি গারদখানার ভেতরেই ছিল।

 
দুপুরে বিরতির সময়ে তাদের জন্য ২৩ প্যাকেট বিরিয়ানি আনা হয়। তখন আসামি র্যা বের হাবিলদার এমদাদ হোসেন বাথরুমে যায়। বাথরুম থেকে আসার পর খাবারের প্যাকেট না পেয়ে সে হৈচৈ শুরু করে। একপর্যায়ে নূর হোসেনের সঙ্গে এমদাদের বাকবিতণ্ডা ও এরপর হাতাহাতি শুরু হয়। পরে নূর হোসেনের পক্ষ নিয়ে গারদখানায় থাকা আসামি মর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদসহ অন্যরা এসে এমদাদকে মারধর করে। তখন পুলিশ এসে তাদের থামায়।

 

সাক্ষ্য গ্রহণের সময় মাথা ঘুরে পড়ে যায় নূর হোসেন:
২৪ মে জেলা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের সময় হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায় নূর হোসেন। ওই দিনই তার উন্নত চিকিৎসার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়।

 

তারেক সাঈদকে দেখেই জ্ঞান হারালেন সাক্ষী:
৯ মে আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ করছিলেন আইনজীবীরা। এ সময় তারা সাক্ষী পুলিশের কনস্টেবল আবদুল লতিফকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি তারেক সাঈদকে চেনেন। চিনলে কিভাবে চেনেন। তখন আবদুল লতিফ ২৩ আসামির মধ্যে তারেক সাঈদকে ইঙ্গিত করে বলেন ‘উনি তারেক সাঈদ’। এ কথা বলেই তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। পরে তার মাথায় পানি দেওয়া হলে তিনি সুস্থ হন।

 

লোহার খাঁচার আকার বৃদ্ধি:
৭ খুন মামলার আসামিরা বিরিয়ানি নিয়ে মারামারি করার পর ৩ অক্টোবর বড় করা হয় আদালতের কাঠগড়ার লোহার খাঁচা। আকার বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয় খাঁচাটি। এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর আদালত চলাকালে মধ্যাহ্ন বিরতিতে বিরিয়ানি না পেয়ে আদালতের কাঠগড়ায় নূর হোসেনের সঙ্গে মারামারি করেছিল হাবিলদার এমদাদ হোসেন।

 

সাক্ষীদের প্রতি নূর হোসেনের চোখরাঙানি:
২১ মার্চ ৭ খুনের ঘটনায় দুই মামলায় একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও তিন পুলিশসহ সাতজন আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য প্রদানকালে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে প্রধান আসামি নূর হোসেন তিন সাক্ষীকে চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখায়। সেদিন বাদী পক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন অভিযোগ করেন,সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানের সময় নূর হোসেনের আইনজীবী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বারবার ‘সাক্ষীদের আসামিরা দেখতে পাচ্ছেন না’ বলে আদালত কক্ষের সামনে থেকে আইনজীবীদের সরিয়ে দিচ্ছিলেন। এ সময় কাঠগড়া থেকে নূর হোসেন তিনজন সাক্ষীর দিকে চোখ রাঙায়, যাতে তারা সাক্ষ্য না দেয়। র্যা বের সাবেক কর্মকর্তা আসামী আরিফ হোসেনও চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

 

ঠোঁটে আঙুল রেখে সাক্ষীদের ‘চুপ’ থাকার হুমকি নূর হোসেনের:
১৮ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের সময়ে কখনও অট্টহাসি,কখনও মুচকি হেসে, আবার কখনও চোখ রাঙিয়ে সাক্ষীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে নূর হোসেন। এতে ভয় পেয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় কণ্ঠ জড়িয়ে বা কথা আটকে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। ওই দিন তাকে একাধিকবার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েই বিপরীত কাঠগড়ায় থাকা সাক্ষীদের প্রতি দুই ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ থাকার ইশারা করতে দেখা যায়। যে সাতজন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকের দিকেই নূর হোসেন কোনও কথা না বলার জন্য এ ধরনের অঙ্গভঙ্গি করে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন