৬৮ বছর পর ভোট দেবেন তাঁরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিলুপ্ত ছিটমহলসহ পঞ্চগড় জেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ। রাত পোহালেই ভোট। পঞ্চগড় জেলার ৩৬টি ছিটমহলের বাসিন্দারা ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার পর আগামী ৩১ অক্টোবর প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোট প্রদানের মধ্য দিয়ে এবারই প্রথম তাঁরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।

 

৬৮ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্ত সদ্য নাগরিকত্ব পাওয়া বিলুপ্ত ৩৬টি ছিটমহলের লোকজন এ নির্বাচনে ভোটার হওয়ায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। ভারত ও বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার স্বাদ পাননি দেশ ভাগের সময় উভয় দেশেই থেকে যাওয়া ছিটমহল ও ছিটমহলের বাসিন্দারা। অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ছিটমহলবাসীদের ৬৮ বছরের বঞ্চনার অবসান হয়।

বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার ১৪ মাস এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের ২৭ দিন পর বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা সরাসরি ভোট প্রদানের মাধ্যমে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী সদস্য ও সাধারণ সদস্য নির্বাচন করবেন। এ কারণে জেলার সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা ও হাফিজাবাদ ইউনিয়ন, বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি, কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ, মাড়েয়া বামনহাট ও বড়শশী ইউনিয়ন এবং দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ও টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নে উৎসবের মাত্রা অনেক বেশি। প্রথমবার ভোট দেওয়ার জন্য বিলুপ্ত ছিটবাসীও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

পঞ্চগড় জেলার আটটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩৯ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯৮ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩২৬ জন প্রাথী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বিলুপ্ত ছিটমহলযুক্ত আটটি ইউনিয়ন ও একটি ইউপির উপনির্বাচনে মোট এক লাখ ৪০ হাজার ৩৬৭ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরমধ্যে সাত হাজারের কিছু বেশি ভোটার রয়েছেন সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলের নাগরিক।

বিলুপ্ত ছিটমহলের নাগরিক মো. মফিজার রহমান, কছলিম উদ্দিন ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমবার ভোট দিব আমরা অনেক খুশি। জীবনের প্রথম ভোট দিব তাকে যারা আমাদের এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারবে এবং সৎ যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করব।’

এদিকে পঞ্চগড় জেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ও দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়ন ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। দলীয় প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রাহী প্রার্থীরা মাঠে ছিলেন। এ কারণে এসব ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীদের ফলাফল বিপর্যয় হতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।

রোববার বিকেল থেকে নিজ নিজ উপজেলা থেকে ভোট গ্রহণের জন্য সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়েছে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মালামাল বুঝে নেন। এ সময় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের প্রহরায় মালামাল ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হয়।

সদর উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান, দেবীগঞ্জ উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সুমিয়ারা পারভীন ও বোদা উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বিজয় চন্দ্র বর্মণ জানান, কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দেওয়ান মো. সারওয়ার জাহান জানান, নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

সূত্র: এনটিভি