৬৪ জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে: পলক

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমে পলক এমপি বলেছেন, আগামীতে দেশের ৬৪ জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে তারা সাইবার সিকিউরিটি, ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, ডিজিটাল লিটারেসি, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট ও ফ্রিলান্সিং এ দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ৩৩টির মতো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল অনুমোদন দিয়েছেন তাতে হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে।

শুক্রবার (১০ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নাটোরের সিংড়া মডেল প্রেসক্লাবের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এসময় সভাপতিত্ব করেন সিংড়া মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম রাজু আহমেদ। এর আগে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করা হয়।

আলোচনা সভায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকরা হলেন দেশের ও জাতির জাগ্রত বিবেক আর সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যম হচ্ছে সমাজের দর্পণ। সেই দর্পণের মধ্য দিয়েই আমরা দেখতে পারবো দেশের উন্নয়ন, সরকারের সুশাসন। সেইসঙ্গে যদি কোনো অনিয়ম, দুর্বলতা থাকে তার যৌক্তিক সমালোচনার মাধ্যমে তুলে ধরা। সাংবাদিকরা ক্যামেরায় যা তুলছেন, সংবাদ মাধ্যমে যা প্রকাশ করছেন সেটা যেন সব সময়ই সত্য ও সততার পক্ষে হয় এবং সেটা যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়।

তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। তখন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সুদক্ষ নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ইন্টারনেট চলে গেছে। আমরা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ করতে পেরেছিলাম বলেই দেশের সব ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। যার ফলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে এবং আমাদের দেশের তথ্য, উপাত্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে এবং বিশ্বে আমাদের মর্যাদা এবং সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে নতুন নতুন গণমাধ্যম, সংবাদ মাধ্যম সৃষ্টি হয়েছে এবং সেখানে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

পলক বলেন, এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, ফোরলেন রাস্তা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং হাতে হাতে স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের ফলে যখনকার খবর আমরা তখনই পাচ্ছি, যখনকার ঘটনা আমরা তখনই সরাসরি দেখতে পাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের কাছে সংবাদ পৌঁছানো সহজ হয়েছে। আগামী দিনের সাংবাদিকতা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতের সংবাদ মাধ্যম কেমন হবে এ বিষয়ে কিন্তু সাংবাদিকতা এবং সংবাদ মাধ্যমের কী পরিবর্তন আনতে হবে আমাদের তা এখনই ভাবতে হবে।

তিনি বলেন, আশির দশকের কথা, একটা দৈনিক পত্রিকা পড়তে হলে আমাদের একদিন অপেক্ষা করতে হত অথবা সকালের সংবাদপত্র আমরা সন্ধ্যার সময় পেতাম। কারণ তখন যমুনা সেতু, ফোরলেন রাস্তা,বিদ্যুৎ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুই ছিল না, আর ইন্টারনেটের তো প্রশ্নই আসে না। ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ যারা আছেন কিংবা সংবাদপত্রে যারা কাজ করছেন তাদের কাছে এই বিষয়গুলো হয়ত এখন গল্পের মতো শোনাবে। কিন্তু এটাই ছিল বাস্তবতা।

অথচ এখন আপনারা দেখেছেন কয়েকদিন আগে একটি রোবট খবর পাঠ করছে। এটা আইসিটি বিভাগের কারণে সম্ভব হয়েছে। এজন্য আমরা আইসিটি বিভাগ থেকে সারা বাংলাদেশ ছোট্ট একটা প্রকল্পে ১৮শ জন সাংবাদিককে ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং দিয়েছিলাম যাতে তারা আর্থিকভাবেও সচ্ছল হতে পারেন এবং আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারেন।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, দেখতে দেখতে পাঁচ বছর পূর্ণ করেছে সিংড়া মডেল প্রেসক্লাব। একটি নতুন প্রেসক্লাব হিসেবে প্রেসক্লাবের তরুণ নেতারা মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে এটিকে একটি সুশৃঙ্খল ও চমৎকার সংগঠনে পরিণত করেছে এবং এটিকে আমাদের নাটোর জেলার একটি মডেল প্রেসক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করে স্থানীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের রাজনৈতিক দর্শন, ভিন্ন ভিন্ন থাকতে পারে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই সন্নিকটে আমার শুধু একটাই প্রত্যাশা আপনারা যে যেই রাজনৈতিক দর্শনকে সমর্থন করুন না কেন, আপনাদের ব্যক্তিগত পছন্দ যাই থাকুক না কেন, আপনাদের বিবেকের আদালত নিশ্চয়ই আপনাদেরকে প্রশ্ন করবে যে আপনারা কলম দিয়ে আপনারা যা লিখছেন, ক্যামেরায় যা তুলছেন, আপনাদের সংবাদ মাধ্যমে যা প্রকাশ করছেন সেটা যেন সব সময়ই সত্যে ও সততার পক্ষে হয় এবং সেটা যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়।

সভায় আরও বক্তব্য দেন- সিংড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল ইমরান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ওহিদুর রহমান শেখ, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরাজি আহমেদ বাবন, সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হক, ইউনিক প্রেসক্লাবের সভাপতি বুলবুল আহমেদ, ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, নন্দীগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল হুদা সরকার, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি বকুল হোসেন, এটিএন বাংলার জেলা প্রতিনিধি জুলফিকার হায়দার জোসেফ, একুশে টিভির সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু, নলডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ প্রমুখ।