৫ মাসের পেটের বাচ্চা গর্ভপাত, মা-সন্তানের মৃত্যু

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

‘যশোরের চৌগাছায় প্রায় ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। এই নিষ্ঠুর কাজটি করেছে আমার শশুর আব্দুস সবুর ও তার পরিবারের লোকজন।’ আজ সোমবার দুপুরে প্রেসক্লাব চৌগাছায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হত্যার কথা শিকার করে তুলির স্বামী আজিজুর রহমান এই অভিযোগ করেন।

লিখিত বক্তব্যে উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়নের গরীবপুর গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে আজিজুর রহমান বলেন, ‘চৌগাছা সদর ইউনিয়নের বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের সর্দারপাড়ার আব্দুর সবুরের মেয়ে সাদিয়া ইয়াসমিন তুলির সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।

দীর্ঘদিন প্রেম করার পর তারা দুজন সংসার করতে মনস্থির করেন। বিষয়টি তুলির পরিবারকে জানালে তারা এ বিয়েতে অমত পোষণ করেন। একপর্যায়ে তুলির পিতাকে না জানিয়ে তারা চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুখে সংসার করতে থাকেন। ‘

তিনি বলেন, ‘বিয়ের পরপরই স্ত্রী তুলির গর্ভে সন্তান আসে। এতে আমিসহ আমার পরিবারের লোকজন খুশি হই। কিন্তু এমন খবর পেয়ে কূটকৌশল নেয় তুলির পিতা আব্দুর সবুর। তিনি এ বিয়ে মেনে নিয়েছেন মর্মে আমাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কমবেশি চলতে থাকে আত্মীয়তা। এরই মধ্যে চলতি মাসের ২৫ তারিখে আমার শশুর আব্দুর সবুর আমার বাড়ি গরীবপুরে আসেন এবং তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যেতে ইচ্ছা পোষণ করেন। আমি সরল মনে আমার স্ত্রী তুলিকে তার পিতার সাথে পাঠিয়ে দিই। যখন আমার স্ত্রী তার পিতৃলয়ে যায় তখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। গত ২৭ আগস্ট রাত ১১ টা ৩৩ মিনিটে আমার স্ত্রী তুলি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায় সে খুলনা মেডিকেলে খুবই অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। তার খুব রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। সন্তান নষ্ট করার জন্য কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। অথচ আমার শশুর জানান তুলি বাথরুমে পড়ে অসুস্থ হয়ে গেছে তাই খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ‘

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ‘পরবর্তীতে আমার স্ত্রী আবারও ফোন করে বলে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আরও বলে আমার পিতৃলয়ের লোকজন আমার গর্ভের সন্তানের জীবন কেঁড়ে নিতে চেষ্টা করছে। সে কারণে আমি চরম অসুস্থ। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ। তার নিকট থেকে মোবাইল কেড়ে নেয় শশুর বাড়ির লোকজন। এরপর থেকে আমি আর স্ত্রীর সাথে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারেনি। ‘

আজিজুর বলেন, ‘তুলির পিতা কৌশল করেই আমাদের বাড়ি থেকে তার মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে তাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। এরপর অবৈধভাবে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার চেষ্টা চালান। এতে তুলি মারাত্মক অসুস্থ হলে সরাসরি খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাদের উদ্দেশ্য গর্ভের সন্তান নষ্ট করে তুলিকে আর আমার বাড়িতে দিবেন না। স্ত্রী তুলি খুলনা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রবিবার বিকেল ৫ টার দিকে মারা যায়। ‘

এসব বলে কাঁদতে থাকেন ভালবাসার স্ত্রী হারা স্বামী আজিজুর রহমান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, শুধু স্ত্রীকেই না, গর্ভে থাকা প্রায় ৫ মাসের বাচ্চাকেও হত্যা করা হয়েছে। রবিবার রাতে তড়িঘড়ি করে তুলির লাশ এলাকায় এনে দাফন করার চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু থানা পুলিশের সন্দেহ হলে লাশটি উদ্ধার করেন। ‘

তিনি বলেন, ‘আমি থানায় বিষয়টি জানিয়েছি। তুলিকে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। থানার ওসি জানিয়েছেন যে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পর তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। ‘

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আজিজুরের পিতা ফজলুর রহমান, মামা নূর ইসলাম, ভাই আকিনুর রহমান, মুনতাজুর রহমান, নাজমুল ইসলাম, সাগর হোসেন, জিহাদ হোসেন, কবির, পলাশ আহমেদ, তোফাজ্জেল বিশ্বাস প্রমূখ।

এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জিডি মূলে আমরা লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ‘

সূত্র: কালের কণ্ঠ