৫ দশকে ‘নিখোঁজ’ হয়েছে ১৪ কোটির বেশি মেয়ে

গত পাঁচ দশকে বিশ্বজুড়ে নিখোঁজ হয়েছে অন্তত ১৪ কোটি ২৬ লাখ মেয়ে। এই সময়ের মধ্যে মেয়েদের নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মঙ্গলবার জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ ভয়াবহ তথ্য।

ইউএনএফপিএ’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭০ পর্যন্ত মেয়েদের নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ১০ লাখ, ২০২০ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ২৬ লাখেরও বেশি।

তাদের হিসাবে, সবচেয়ে বেশি মেয়ে নিখোঁজ হয় চীনে। গত ৫০ বছরে দেশটিতে হারিয়ে গেছে অন্তত ৭ কোটি ৩০ লাখ মেয়ে। এর পরেই রয়েছে ভারত। সেখানে নিখোঁজ মেয়েদের সংখ্যা ৪ কোটি ৫৮ লাখ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ভারতে গড়ে ৪ লাখ ৬০ হাজার মেয়ে জন্মের পরপরই নিখোঁজ হয়েছে। এর মধ্যে তিন ভাগের দুইভাগ ঘটনাতেই দায়ী করা হয়েছে পারিবারিক লিঙ্গবৈষম্যকে। কন্যাসন্তান না চাওয়ার কারণের অনেকে নিখোঁজ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

চীনের পরিসংখ্যানও প্রায় একই। পৃথিবীর মোট কন্যাসন্তান মৃত্যুর মধ্যে ৯৫ শতাংশই ঘটছে এই দুই দেশে।

jagonews24

জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রতি এক হাজার কন্যাশিশুর মধ্যে জন্মের পরপরই ১৩ দশমিক ৫ জন শিশু মারা যায় বা নিখোঁজ হয়। পাঁচ বছরের কম বয়সী কন্যাশিশু মারা যায় প্রতি নয়জনের মধ্যে একজন। কারণ একটাই, তারা মেয়ে। বলা বাহুল্য, মেয়েশিশুদের এই মৃত্যু বা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাগুলো হত্যা ছাড়া আর কিছু নয়।

শুধু হত্যা বা নিখোঁজই নয়, সংস্থাটির এ প্রতিবেদনে সারা বিশ্বে মেয়েদের ওপর চলা ভয়ানক লিঙ্গভিত্তিক অত্যাচারের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, মেয়েদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তো রয়েছেই, পাশাপাশি বিশ্বের নানা প্রান্তে চলছে ব্রেস্ট আয়রনিং থেকে জেনিটাল মিউটিলেশনের মতো ঘৃণ্য সব প্রথা। এই বছরেও ৪১ লাখ কিশোরীর যোনির ক্লিটোরিস কেটে দেয়ার প্রথা চলছে বিশ্বে। এতে অকালে প্রাণ হারাতে হচ্ছে অসংখ্য মেয়েকে।

jagonews24

বিশ্বে থেমে নেই বাল্যবিয়ের প্রথাও। চলতি বছরেই দৈনিক ৩৩ হাজার মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। আর যাদের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে, অর্থাৎ বরের সঙ্গে মেয়ের বয়সের পার্থক্যও অনেক বেশি।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সংস্থাটির পরামর্শ, ‘কন্যাশিশুদের বিষয়ে আরও বেশি বেশি সচেতনামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। সবাইকে দেখাতে হবে, মেয়ে বা নারীরা কীভাবে সমাজ বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মেয়েদের সাফল্যকে আরও বেশি উদযাপন করতে হবে। কন্যাসন্তান থাকার পরেও একেকটি পরিবার কতটা উন্নতি করতে পারে তা দেখাতে হবে। এছাড়া, জোর দেয়া হয়েছে মেয়েদের শিক্ষাতেও। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিতে হবে এ ক্ষেত্রে।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ