‘৫ জানুয়ারি’ ঘিরে নেই উত্তাপ!

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ৫ জানুয়ারি ঐতিহাসিক দিন। ২০১৪ সালের এদিনে দেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। তৎকালীন বিরোধীদল বিএনপি সেই নির্বাচন অংশ না নিয়ে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়। ফলে ১৫৩ আসনের সংসদ সদস্যই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বাকিগুলোতে মৃদু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও নির্বাচনে ছিল না জৌলুস। নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধীদল জাতীয় পার্টিও সরকারে ভাগ বসায়।

সেই থেকে ‘একতরফা’ ওই নির্বাচনের দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস পালন করে আসছে বিএনপি। আওয়ামী লীগও গণতন্ত্র রক্ষা বা গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করে আসছিল। এ দিনটি ঘিরে সড়কে ছিল নানা উত্তেজনা। বিএনপির কর্মসূচি প্রতিহত করতে সড়কে আওয়ামী লীগের আনন্দ মিছিল বা র্যালি ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন আর সে উত্তাপ নেই। অবশ্য, গেলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মূলত দিবসটি তার জৌলুস হারিয়েছে।

এবারের দিবসটিকে ঘিরে বিএনপি মানবন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আগামীকাল ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১০টায় মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।’

অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এবারে দিবসটি ঘিরে কোনো কর্মসূচি নেই। দলটির উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘৫ জানুয়ারি ঘিরে আপাতত কোনো কর্মসূচি নেই।’

২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস হয়। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও তার শরিক জোটগুলো এরপর থেকেই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।

কিন্তু সেই সময় বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দেন ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন বিরোধীদলীয় প্রধান খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দেন। পরে দলীয় সরকারের অধীনেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সেই নির্বাচন নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সেই নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন প্রার্থীরা। বাকি ১৪৭ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

সেই নির্বাচনের দিন সহিংসতায় নিহত হন ১৯ জন। নির্বাচন পূর্বসহিংসতার দিক থেকেও ওই নির্বাচন অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ৪১ দিনে মারা যান ১২৩ জন। ভোটের দিন এত সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি এর আগে কখনো হয়নি।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ