বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

৩৭ বছর যাবত সবার প্রিয় মালেকা আপা


আমানুল হক আমান, বাঘা :
৩৭ বছর যাবত নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মালেকা পারভীন। তিনি সন্তান প্রসবকারীদের প্রতিনিয়ত খবর রাখেন। তিনি ১৭ বছর যাবত কর্মরত আছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের। বর্তমানে তিনি সবার প্রিয় মালেকা আপা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিষ্ঠার ২৯ বছর পর সিনিয়ার নার্স মালেকা পারভীনের আন্তরিকতায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান আসাদ, ভারপ্রাপ্ত আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাকেশ পান্ডে, গাইনোকোলজিস্ট ডা. ফারহানা আকতার, অ্যানেসথেসিয়া স্পেশালিষ্ট ডা. এহসান আলী, শিশু কনসালটেন্ট ডা. আসাদুল ইসলাম, ডা. মল্লিকা সরকার, অপারেশন থিয়েটার ইনচার্জ ফাতেমা খাতুন ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর গড়গড়ি ইউনিয়নের খায়েরহাট গ্রামের প্রসূতি মা মনিরা বেগমের প্রথম অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুত্র সন্তান প্রসব করানো হয়। সন্তান ও স্বামী কবির হোসেনকে নিয়ে তিনি ভাল আছেন। সাত মাস যাবত নিজের সন্তানের মতো প্রতিনিয়ত খবর রাখেন মালেকা পারভীন।

তার একটি মাত্র সন্তান মাজিদুল ইসলাম। গাজীপুরের কাশিমপুরের বেসরকারি একটি প্রতিষ্টান ডিবিএল গ্রুপে সিনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত রয়েছেন।
মালেকা পারভীন ১৯৮০ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী নার্সিং ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং পাশ করে ১৯৮৬ সালে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রথম নার্সিং পদে যোগদান করেন। তিনি রাজশাহী, নাটোর নঁওগা, জয়পুরহাট, কুড়িগ্রাম, বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় চাকরি করেছেন।

স্বামী ইনছার আলী পেশায় ব্যাবসায়ী ছিলেন। তিনি বিয়ে করেন ১৯৮২ সালে। ২৮ বছর সংসার করার পর স্বামী ২০০০ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান। তিনি এক সন্তানের জননী। মালেকা পারভীন একজন প্রকৃত জনগণের সেবকের পাশাপাশি একজন মা ও আদর্শ গৃহিণী এবং একজন সবার প্রিয় আপা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ২০২৩ সালে ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন। তিনি বাঘা থানার গেটের সামনে ছোট একটি বাড়িতে বসবাস করেন।

বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকে সিনিয়ার নার্স রাহেনা বেগম জানান, আমরা ২৯ জন নার্স এখানে দায়িত্ব পালন করছি। মালেকা আপা আচরণে আমরা মুগ্ধ। তার নিপুণ হাতে রোগীদের সেবাদান আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ধৈর্যের সঙ্গে রোগীদের কীভাবে শতভাগ সেবা দেওয়া যায় তা মালেকা আপার কাছে থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।

মালেকা পারভীন জানান, ২০০৬ সাল থেকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের চাকরি করছি। বর্তমানে ২৯ জন নার্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি চাকরিতে যোগদানের পর গর্ভবতী মায়েদের প্রসবের সুব্যবস্থা ও নিরলসভাবে পরিশ্রম করে নরমাল ডেলিভারি করিয়েছি প্রায় ২ হাজার ৫০০। সাধারণ রোগীদেরর সমানতালে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সবাই আমাকে মালেকা আপা বলে ডাকেন।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রের টিএইচএ ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ একটি অপারেশন থিয়েটারসহ ১৯৯৩ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়। ২০০৮ সালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহিরয়ার আলম এমপির প্রচেষ্টায় ৫০ শষ্যায় উন্নিত করে দ্বিতীয় তলায় স্বয়ংক্রিয় আধুনিক অপারেশন থিয়েটার স্থাপন করা হয়। আধুনিক মানের দুটি অপারেশন থিয়েটার ও যন্ত্রপাতি দিয়ে ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর ২৯ বছর পর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।

অপারেশন থিয়েটার চালু করায় উপজেলার শত শত প্রসূতি মায়েরা বিনা মূল্যে নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারির সুবিধা পাচ্ছেন। এতে প্রসূতি মায়েদের প্রসব পূর্ববর্তী, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী গাইনি সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করা হচ্ছে। মালেকা বেগম একজন দক্ষ নার্স। তার তুলনা হয় না। তিনি বর্তমানে সবার প্রিয় মালেকা আপা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন।