২ হাজার ৩৩০ কোটি টাকার পানি চুরি!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

চট্টগ্রাম ওয়াসায় নন রেভিনিউ ওয়াটারের (এনআরডব্লিউ) নামে কোটি কোটি টাকার পানি চুরি করা হচ্ছে প্রতিদিন। প্রতিমাসে গড়ে এনআরডব্লিউ পানি চুরির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার মিলিয়ন লিটার।

সেই হিসাবে মাসে চুরি হয় ২ হাজার ৩৩০ কোটি টাকার পানি। আর এ কাজে জড়িত রয়েছে ওয়াসার বেশকিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। অথচ এসব পানির বিল চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের কাঁধে। ফলে সাধারণ গ্রাহকদের আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত।

ওয়াসা সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসা মাসে গড়ে ৮ হাজার মিলিয়ন লিটারের বেশি পানি উৎপাদন করে থাকে। এর বিপরীতে প্রতিমাসে বিল করা হয় প্রায় ৬ হাজার মিলিয়ন লিটার পানির। বিল হয় না এমন পানির পরিমাণ প্রায় দুই হাজার মিলিয়ন লিটার।

কারিগরি ক্রুটি, বিভিন্ন স্থানে ফুটো ও সংযোগ লাইনের বিচ্যুতির কারণে প্রতিমাসে কিছু পানি নষ্ট হয়। এসব বিচ্যুতির কারণে নষ্ট হওয়া পানিকে ওয়াসা এনআরডব্লিউ হিসেবে চিহ্নিত করে।

অভিযোগ আছে, বিভিন্ন বিচ্যুতির কারণে ওয়াসার অপচয় হওয়া পানির পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন লিটারের বেশি নয়। কিন্তু ওয়াসার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগসাজশ করে এই পরিমাণ দুই হাজার মিলিয়ন লিটার দেখিয়ে থাকে। সেই হিসাবে অবিলকৃত আরও এক হাজার ৫০০ মিলিয়ন লিটারের বেশি পানি চুরি হয়ে থাকে বিভিন্ন পন্থায়।

চট্টগ্রাম ওয়াসার হিসেব মতে, প্রতি লিটার পানির উৎপাদন ব্যয় ১১ দশমিক ৬৫ টাকা। এক মিলিয়ন লিটার পানির উৎপাদন ব্যয় ১ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

সেই হিসেবে ২ হাজার মিলিয়ন লিটার পানির উৎপাদন ব্যয় ২ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। তবে এনআরডব্লিউ পরিমাণ কম-বেশির ওপর উৎপাদন ব্যয়ও নির্ভর করে- এমনটি জানিয়েছেন ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ফলে প্রতিমাসে এ ক্ষেত্রে ওয়াসা হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

ওয়াসার বর্তমানে চালু আবাসিক গ্রাহক আছে প্রায় ৬০ হাজার, অনাবাসিক গ্রাহক প্রায় ৮ হাজার। মিটারবিহীন সংযোগ আছে প্রায় ১০ হাজার। চলতি বছরের জুনে পানির উৎপাদন ছিল ৮ হাজার ৪৬৩ মিলিয়ন লিটার।

বিল হয়েছে ৬ হাজার ৫৮২ মিলিয়ন লিটারের। এতে ফেব্র“য়ারিতে এনআরডব্লিউ ছিল ২২ শতাংশ। জুলাইয়ে উৎপাদন ছিল ৮ হাজার ৮২১ মিলিয়ন লিটার এবং বিল করা হয়েছে ৬ হাজার ৮৫৬ মিলিয়ন লিটারের। এতে এনআরডব্লিউ হয় ২২ শতাংশ। সেই হিসাবে এখনও প্রায় ২ হাজার লিটার পানি অবচয় হচ্ছে প্রতিমাসে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক ড. পীযূষ দত্ত বলেন, যে হিসাব প্রতিমাসের বিলে আসে না সেগুলোকে আমরা এনআরডব্লিউ বলে থাকি।

হয়তো সেটা সঙ্গে সঙ্গে আসে না, পরেও কিছু হিসাব আসে। এনআরডব্লিউ হিসাবটায় সমস্যা আছে। নগরীর বিভিন্ন মসজিদে পানি দেয়া হয়, ওয়াসার প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি দেয়া হয়।

এগুলোর বিল হয় না। যার কারণে আমাদের এনআরডব্লিউ একটু বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অবস্থার কিছু পরিবর্তন শুরু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এনআরডব্লিউর পরিমাণ কমে যাচ্ছে বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে। এ অবস্থার আরও উন্নতি হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, পানি চুরির প্রথম ধাপেই রয়েছে ওয়াসার মিটার রিডাররা। গ্রাহকের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সরাসরি পানি চুরিতে জড়িত এসব রিডার। টাকা দিলেই মিটার রিডিং কমিয়ে দেখা হয়।

বিকল্প হিসেবে নষ্ট করে দেয়া হয় মিটার। মাস-বছর গেলেও সে মিটার আর ঠিক করা হয় না। হাজার হাজার মিটারের গ্রাহককে প্রতিমাসে দিতে হয় গড় বিল।

গড় বিলের হিসাবের অধিকাংশ টাকাই যায় মিটার রিডারের পকেটে। অবশ্য এ টাকার ভাগ দিতে হয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও! আবার সংযোগ দেয়ার কয়েক মাস পরেই গ্রাহকের বিল করা হয়।

এতেও মিটার রিডাররা সঠিক রিডিং না করে অদৃশ্য রাখে কিছু রিডিং। গ্রাহক আর মিটার রিডারদের এমন সমঝোতায় ওয়াসা হারায় বিপুল রাজস্ব।

তাছাড়া ভাউজার গাড়িতে করে পানি বিক্রিতেও রয়েছে বড় ধরনের চুরি। ইতিমধ্যে এমন চুরির অভিযোগে কয়েকজনকে শাস্তিও দেয়া হয়েছে। এরপরও থেমে নেই ওয়াসার পানি চুরি বা অপচয়। এমনটি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।