২৬ মার্চ : স্বাধীনতার ঋন

দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা

কারো দানে পাওয়া নয়

দাম দিছি প্রাণ লক্ষ কোটি

জানা আছে জগময় …

শিল্পি আব্দুল লতিফের লেখা ও সুর করা বিখ্যাত একটি গান। গানটি শুনলে আমাদের মানসপটে কষ্টার্যিত স্বাধীনতা লাভের ইতিহাসের একটি চিত্র ভেসে উঠবেই।

লেখক, সাংবাদিক , চলচিত্রকার শাহরিয়ার করিব ‘সভ্যতার মানচিত্রে যুদ্ধ যুদ্ধাপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন, “১৯৭১ সালে বংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ নিরস্ত্র মানুষ নিহত হয়েছে। সরকারি হিসাবে ২লক্ষ, বেসরকারি হিসেবে সোয়া চার লক্ষ নারী পাষবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে । এক কোটিরও বেশি মানুষ সর্বসব হারিয়ে প্রাণ বাচাবার জন্য প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল । এর দিগুনেরও বেশি মানুষ সদেশে উদবাস্তুর অনিশ্চিত বিড়ম্বিত জীবন যাপন করেছে। অন্ততপক্ষে ২০ লক্ষ মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহযোগীদের নিষ্ঠুর নির্যাতন ভোগ করেছে। শত সহস্র জনপদ ধ্বংস হয়েছে, সম্পদ লুন্ঠিত হয়েছে । হত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংসের স্থান কাল বিচারে ’৭১-এর নয় মাসে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে সংঘঠিত গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধপরাধ স্মরণকালের ইতহাসে তুলনাহীন।“

যাদের দ্বারা এবং যাদের সহযোগিতাই  এত বেশি অপরাধ সংঘটিত হল তাদের বিচার হবে না !! শহীদের রক্তে বিধৌত বাংলা মায়ের প্রতি বিন্দু পবিত্র মাটিতে পদ্ঘাত করে  তারা আবার মাথা উচু করে হাটবে !! শহীদের রক্ত মাখা পতাকা গাড়ীতে উড়াবে !! আবার ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক বিষ্পাপ ছড়াবে মানুষে মানুষে !! তারাই কি মানবতার বানী শুনাবে আমার যুদ্ধাহত পিতাকে – ধর্ষিত মাকে !! রক্তে পাওয়া সংবিধানের মূলনীতি ছুড়ে ফেলবে ডাসবিনে !!

মানবতার শত্রু সেই কালো শক্তি জামাতে ইসলামী ও তার বিভিন্ন শাখা ভিন্ন ভিন্ন নামে এখনও  সর্বশক্তি নিয়ে সক্রিয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে। সক্রিয় ধর্মের নামে। ধর্মের নামেই ৭১ সালে বাংলাদেশের  জন্মলগ্নে স্বাধীনতাকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করতে সর্বাত্মক অপপ্রয়াস চালিয়েছিল ।

তাদের বিচার হবে না !!  বিচার তাদের হতেই হবে , বিচার হবে তাদের নারকীয় অপরাধের – তাদের বিকৃত আদর্শের , তদের অনুসারীদের।  আমাদের জন্য সব থেকে জরুরী হল যুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংশতম জঘন্য অপরাধের অভিশাপ থেকে  দেশ কে মুক্ত করা । এদের বিচার ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। মহাজোট সরকার ক্ষমতাই আসার পর শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে । ব্যাক্তির বিচারের থেকে তাদের মতবাদের বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্ত দেওয়া অনেক বেশি গুরুত্তপূর্ণ একথা সবাই জানেন। দেশ বিরোধী সকল কর্মকান্ডের হর্তা কর্তা যে একাত্তরে পরাজিত সাধীনটা বিরোধীরা এটি বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে বহুবার প্রমানিত হয়েছে। তার পরও যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে এবং আইনের নানা মারপেচে আজও দল হিসাবে জামাত কে নিষিদ্ধ করা সহ ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।

মাত্র ৯ মাসে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ভূখন্ডে ৩০ লক্ষ নিরস্ত্র মানুষ নিহত হওয়ার জন্য,  সোয়া চার লক্ষ নারী পাষবিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার জন্য  – শত সহস্র জনপদ ধবংস হওয়ার জন্য,  কোটিরও বেশি মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে উদবাস্তুর অনিশ্চিত বিড়ম্বিত জীবন কাটানোর জন্য দায়ীদের  বিচার হবার যৌক্তিকতা  কি আপনার চিত্তকে বার বার আঘাত করে না !! যাদের ত্যাগের বিনিময়ে মুক্ত আকাশের নিচে প্রাণ ভরে শ্বাস নেন, তাদের হত্যাকারীদের প্রতি আপনার ঘৃনা জাগেনা !!

আপনার কি মনে হয়  এই লেখার কালি এবং আপনার কলম থেকে যে কালি বের হয় লেখার জন্য, সমস্ত  পাঠ্যপুস্তকের লেখা অক্ষ্র গুলো-  সেগুলো কোন সাধারণ কালি! সেই কালি গুলো শহীদের রক্ত । স্বাধীনতায় শহীদ আমার আপনার পিতার – ভাইয়ের শরীরের রক্ত সেগুলো , ফিরে এসেছে সমস্ত বই গুলোতে – লেখা গুলো তে যেন আমরা সব জানতে পারি, মেধাবী হতে পারি। স্বাধীন বাংলার মুক্ত আকাশের নিচে আপনি যে শব্দ গুলো শুনেন ,আপনার কি মনে হয় এগুলো এমনি এমনি এসেছে! প্রতিটি শব্দের সাথে জড়িয়ে আছে আমার – আপনার ধর্ষিত মা বোনের যন্ত্রনার আত্যচিতকার ।

তাই আসুন দেশ মাতৃকাকে পবিত্র রাখার জন্য ও স্বাধীনতার চেতনায় মানবিক মুল্যবোধে সম্পন্ন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধাপরাধী ব্যক্তি ও তাদের দলের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়।

 

 

মতিউর রহমান ( মর্তুজা )

সাবেক সভাপতি

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।